বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

ক্রিকেট-ফুটবল নিয়ে অনলাইনে জুয়া: গ্রেপ্তার ৩

  •    
  • ৩০ জুন, ২০২১ ২৩:০৪

অনলাইন মাধ্যমের সংস্পর্শে এসে দেশীয় জুয়ারীরা এখন বাজি ধরছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। দেশ বিদেশের জুয়ারিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠেছে আন্তর্জাতিক জুয়াড়ি চক্র। যারা দেশের তরুণ ও যুব সমাজকে জুয়ায় আসক্ত করে দেশ থেকে পাচার করছে কোটি কোটি টাকা। এমন একটি চক্রের সন্ধান ও তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে সাইবার পুলিশ।

মনোরঞ্জনের জন্য কোনো খেলাকে কেন্দ্র করে বাজি ধরার ইতিহাস অনেক পুরানো। আগে সামনাসামনি বসে পাড়া মহল্লার দোকানে আড্ডাচ্ছলে এসব বাজির নামে জুয়া খেলার প্রচলন থাকলেও, আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কড়াকড়ির কারণে তা চলে এসেছে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে।

আর এই অনলাইন মাধ্যমের সংস্পর্শে এসে জুয়ারিরা এখন বাজি ধরছে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে। দেশ বিদেশের জুয়ারিদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠেছে আন্তর্জাতিক চক্র। তারা দেশ থেকে পাচার করছে কোটি কোটি টাকা। এমন একটি চক্রের সন্ধান ও তিন সদস্যকে গ্রেপ্তারের কথা জানিয়েছে সাইবার পুলিশ। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের তরুণরা অনলাইন বেটিংয়ের সঙ্গে জড়িয়ে সর্বশান্ত হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

যেভাবে কাজ করে আন্তর্জাতিক বেটিং চক্রটি

পুলিশ বলছে, 9wickets.com এটি মালয়েশিয়ার একটি ক্রিকেটখেলার আন্তর্জাতিক বেটিং সাইট। এখানে আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টসহ আইপিএল, পিসিএল, এসপিএল খেলা নিয়ে জুয়া চলে। এখানে নগদ অর্থের বিনিময়ে পয়েন্ট কিনে বাজি ধরে জুয়ারিরা। এই সাইটটি পরিচালনা যারা করেন তাদের বলা হয় সুপার এডমিন।

পুলিশের ভাষ্য, সেই সুপার এডমিন ঢাকার মিরপুরের বাসিন্দা আবু নছর মো. আজিজুল্লাহকে বাংলাদেশের সুপার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন জুয়াড়ি সংগ্রহের জন্য। সুপার এজেন্ট আজিজুল্লাহ আবার তার পরিচিত ফরহাদ হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে মাস্টার এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দেন জুয়াড়ি সংগ্রহের কাজ করার জন্য।

এই কথিত মাস্টার এজেন্ট ফরহাদ আবার লোকাল এজেন্ট আজিম হীরাসহ অনেককে দায়িত্ব দেন ঢাকার বিভিন্ন এলাকা ও গ্রামাঞ্চল থেকে জুয়ারি সংগ্রহের কাজ করার জন্য।

পুলিশ বলছে, দায়িত্ব পাওয়ার পর নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে বিভিন্ন ফেইক ফেইসবুক আইডির মাধ্যমে গ্রুপ খুলে ও winpbu, deshikotha ডোমেইনের মাধ্যমে জুয়াড়ি সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যান আজিম হীরাসহ লোকাল এজেন্টরা।

জুয়ারি সংগ্রহের কাজ হয়ে গেলে তখন তাকে 9wickets.com এ রেজিস্ট্রেশন করানো হয়। এরপর শুরু হয় মূল কাজ পয়েন্ট বিক্রি। যাকে বলা হয় পিবিইউ ( পার বিটিং ইউনিট)। কারণ পয়েন্ট ছাড়া ওই সাইটে বাজি ধরা যাবে না।

সাইটে বাজির বিপরীতে পয়েন্ট বিনিয়োগ করতে হয়। আর জুয়াড়িরা প্রতি পয়েন্ট ১০০ টাকা করে লোকাল এজেন্ট, মাস্টার এজেন্ট হয়ে সুপার এজেন্টের কাছ থেকে সংগ্রহ করেন।

বাংলাদেশের সুপার এজেন্ট এই পয়েন্ট মালোয়েশিয়ার সুপার এডমিনের কাছ থেকে ১ ডলার করে কিনে নেয়। এই ১ ডলার আর ১০০ টাকার পার্থক্যের অংশটুকু চেইন অনুযায়ী এই চক্রের সদস্যদের পকেটে চলে যায়।

বাংলাদেশের চক্রটি বিকাশ, নগদ ও দেশীয় ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা লেনদেন করে। আর বাংলাদেশি সুপার এজেন্ট নানাভাবে ডলার বিনিময়ের মাধ্যমে মালোয়েশিয়ার সুপার এডমিনের কাছ থেকে পিবিইউ বা পয়েন্ট সংগ্রহ করে।

বাংলাদেশের সুপার এজেন্ট নিজের পরিচয় গোপন রাখতে মালোয়েশিয়ার একটি নম্বর থেকে হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুক একাউন্ট খুলে সেগুলো ব্যবহার করে এই জুয়া কর্যক্রম পরিচালনা করত।

চক্রের তিন সদস্য গ্রেপ্তার

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করে ডিএমপির সিটি- সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। তারা হলেন, ‘সুপার এজেন্ট’ আবুনছর মোহাম্মদ আজিজউল্লাহ, ‘মাস্টার এজেন্ট’ মো. ফরহাদ রহমান ও ‘লোকাল এজেন্ট’ আজিম হিরা।

এ সময় তাদের কাছ থেকে এই অপরাধে ব্যবহৃত ৮টি মোবাইলফোন, ২টি ল্যাপটপ ও আড়াই লক্ষাধিক নগদ অর্থসহ বেশকিছু আলামত জব্দ করা হয়। এই ঘটনায় ডিএমপির রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ এর ২৩/২৪/৩০/৩৫ ধারায় মামলা হয়েছে।

চক্রটি বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি করে সাধারণ মানুষকে জুয়া খেলায় প্রলুব্ধ করত বলে নিউজবাংলাকে জানান ডিএমপি’র সিটি—সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাজমুল ইসলাম সুমন।

তিনি বলেন, ‘গত ৬ মাস ধরে এই চক্রটি আন্তর্জাতিক বেটিং সাইটের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করছে। এই সময়ের মধ্যে চক্রটি ৩ কোটিরও বেশি টাকা মালয়েশিয়ায় অবস্থানরত সুপার এডমিনের কাছে পাঠিয়েছে। সেই সাঙ্গে কমিশনের নামে নিজেরাও বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়েছে সাধারণদের কাছ থেকে। এই চক্রের মালোয়েশিয়ার হোতাকেও চিহ্নিত করতে কাজ করছে পুলিশ।’

নাজমুল সুমন আরও জানান, ক্রিকেট ফুটবলকে কেন্দ্র করে এমন অনেকগুলো আন্তর্জাতিক জুয়ারি চক্র রয়েছে। ঢাকা থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের তরুণ, যুবকরা এই ধরনের বেটিংয়ে জড়িয়ে প্রচুর টাকা খোয়াচ্ছেন।

এই ধরনের চক্রগুলোকে ধরতে তাদের তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান তিনি।

এ বিভাগের আরো খবর