বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

নরমাল ডেলিভারির উপায়

  • নিউজবাংলা ডেস্ক   
  • ৩ মার্চ, ২০২৩ ১০:২৭

‘সকালে ব্রেকফাস্টটা অ্যাটলিস্ট সকাল ৮টায় করে নিতে হবে এবং দুপুরে দুই ঘণ্টা তাকে রেস্ট করতে হবে। আর রাতে অবশ্যই তাকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমি সবাইকে বলি রাত ১০টার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া কমপ্লিট করে মোবাইলের ইন্টারনেটটা অফ করে ঘুমিয়ে যেতে হবে। তাহলে অন্তত ১১টা/১২টার মধ্যে ঘুম আসবে এবং সে সহজেই আট ঘণ্টা ঘুমের ব্যাপারটা এনশিউর করতে পারবে। লাইফস্টাইল চেঞ্জ অনেক বড় ব্যাপার।’

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সানজিদা হক (ছদ্মনাম)। প্রথম সন্তানকে গর্ভধারণের পুরোটা সময় শারীরিকভাবে ফিট অনুভব করেছেন তিনি। প্রসব বেদনা নিয়ে যেদিন হাসপাতালে গিয়েছেন, সেদিনও তার অবস্থা বেগতিক ছিল না, কিন্তু চিকিৎসক তাকে অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন।

এ কথা শুনে সানজিদার স্বামী অবাক হয়ে যান, কিন্তু প্রথম সন্তানকে নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে না চাওয়ায় ইচ্ছার বিরুদ্ধে অস্ত্রোপচারে সম্মতি দেন। পরে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তানের মা হন সানজিদা। সেই থেকে এ নিয়ে আফসোসের শেষ নেই তার।

স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব বা নরমাল ডেলিভারির প্রবল ইচ্ছা থাকার পরও সানজিদার মতো অনেককে বাধ্য হয়ে অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে। তারা যাতে স্বাভাবিকভাবে সন্তান প্রসব করতে পারেন, সে জন্য বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন পেইনলেস নরমাল ডেলিভারি ও ইনফার্টিলিটি বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী ফয়েজা আক্তার।

এক ভিডিওতে পরামর্শগুলো দিয়েছেন এ চিকিৎসক, যেগুলো তার ভাষায় নিউজবাংলার পাঠকদের সামনে তুলে ধরা হলো।

গর্ভাবস্থা অসুস্থতা নয়

অনেকে আমার কাছে জানতে চায় যে, ‘নরমাল ডেলিভারি হতে হলে আমাকে কীভাবে চলতে হবে?’ তো আমি সবার উদ্দেশে যে কথাগুলো বলি, সেটা হচ্ছে যে, একটি মেয়ে যখন কনসিভ (গর্ভধারণ) করে, তখন থেকেই আসলে তাকে সেভাবে তৈরি হতে হয় যে আমি একটা ন্যাচারাল ডেলিভারি প্রসেসে যাব।

এখনকার মেয়েদের মধ্যে আমি যে প্রবণতাটা দেখি, তা হলো তারা কনসিভটাকে মনে করে একটা অসুস্থতা। তারা মনে করে যে, আমি কনসিভ করেছি মানে আমি সিক। আমাকে সবসময় শুয়ে-বসে থাকতে হবে; আমাকে সবাই তুলে তুলে খাওয়াবে, আমি কোনো নড়াচড়া করব না, কোনো কাজকর্ম করব না।

ইভেন অনেকে পড়াশোনাও বন্ধ করে দেয়; কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দেয়। কেউ চাকরি-বাকরি করে থাকলে চাকরি ছেড়ে দেয়। মনে করে যে, আমি সবকিছু ছেড়ে বাসায় থাকব। কারণ আমি কনসিভ করেছি। এখানেই ভুল।

নরমাল ডেলিভারি হোক বা সি-সেকশন হোক, সেটা তো পরের কথা। প্রেগন্যান্সি কিন্তু একটা ন্যাচারাল প্রসেস। একটা মেয়ে যেমন ছোট থেকে বড় হবে, তার শারীরিক পরিবর্তন হবে, তেমনি কিন্তু একটা মেয়ের প্রেগন্যান্সিও হবে এবং এটা একটা ফিজিওলজিক্যাল (শরীরবৃত্তীয়) ব্যাপার।

জীবনযাপনে পরিবর্তনে

প্রেগন্যান্সি হলে তাকে একদম শুয়ে-বসে থাকা যাবে না। সংসারে স্বাভাবিক কাজগুলো সে করবে। তার পড়াশোনা সে চালিয়ে যাবে। তার অফিস, তার কলেজ সবকিছু সে চালিয়ে যাবে এবং সবচেয়ে বড় যেটা, তার লাইফস্টাইল তাকে চেঞ্জ করতে হবে। আগে যদি তার অভ্যাস থাকত মাঝরাতে ঘুমানো, দুপুরে ১২টায় ঘুম থেকে ওঠা, এই জিনিসগুলা চেঞ্জ করতে হবে। সারা রাত বসে বসে মোবাইল টেপা বা ফেসবুকিং করা, এই অভ্যাসগুলো তাকে চেঞ্জ করতে হবে। তাকে আর্লি মর্নিং ঘুম থেকে উঠতে হবে; সকালে অন্তত তাকে আধা ঘণ্টা হাঁটতে হবে।

সকালে ব্রেকফাস্টটা অ্যাটলিস্ট সকাল ৮টায় করে নিতে হবে এবং দুপুরে দুই ঘণ্টা তাকে রেস্ট করতে হবে। আর রাতে অবশ্যই তাকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। সেই ক্ষেত্রে আমি সবাইকে বলি রাত ১০টার মধ্যেই খাওয়া-দাওয়া কমপ্লিট করে মোবাইলের ইন্টারনেটটা অফ করে ঘুমিয়ে যেতে হবে। তাহলে অন্তত ১১টা/১২টার মধ্যে ঘুম আসবে এবং সে সহজেই আট ঘণ্টা ঘুমের ব্যাপারটা এনশিউর করতে পারবে। লাইফস্টাইল চেঞ্জ অনেক বড় ব্যাপার।

খাদ্যাভ্যাস

দ্বিতীয় হচ্ছে খাদ্যাভ্যাস। আমাদের মেয়েদের মাঝে খাবারের অভ্যাসটা কিন্তু খুবই বাজে একটা অভ্যাস। তাদের মধ্যে খুব প্রবণতা আছে ফাস্ট ফুড খাওয়ার; মন চাইলে বুফে খেতে যাওয়ার। এই জিনিসগুলো প্রেগন্যান্সিতে অ্যাভয়েড করতে হবে।

প্রেগন্যান্সিতে খাবারটা হবে ঘরে তৈরি এবং অবশ্যই ফ্রেশ খাবারটা এবং সে খাবারটা সময়মতো খাবে। খুব ভালো হয় যদি প্রেগন্যান্সির শুরুতেই একজন ডায়েটিশিয়ানের সাথে অ্যাটাচ হয়ে যায়। ডায়েটিশিয়ান তার বডি ওয়েট, হাইট ক্যালকুলেশন করে তাকে একটা আইডিয়াল ক্যালরি হিসাব করে তাকে একটা ডায়েট চার্ট দিল। সেই ডায়েট চার্টটা সে স্ট্রিক্টলি ফলো করে।

এমন অনেক প্যাশেন্ট আমি দেখেছি যে, ডায়েট চার্ট আমি ঠিকই দিই, কিন্তু ডায়েট চার্টটাও রেখে দেয়, সেই সঙ্গে তার সঙ্গে এক্সট্রা যে খাবারগুলো, তার মন চাইলে ফুচকা খেতে যাচ্ছে, মন চাইলে ফাস্ট ফুড খেতে যাচ্ছে। এই জিনিসগুলো সে করে ফেলে।

বাইরের খাবারের দুটি সমস্যা। একটা হচ্ছে অতিরিক্ত কিলোক্যালরি গেইন করে; খুব সহজেই মোটা হয়ে যায়। একটা স্টেজে এসে তার ডায়াবেটিস হয়; হাইপ্রেশার হয় এবং তখন আমাদের জন্য নরমাল ডেলিভারি অ্যালাউ করাটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়। অ্যাকচুয়ালি প্রেগন্যান্সিটাই মানে ডেট পর্যন্ত যাওয়াটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়।

হাঁটাচলা

এখনকার মেয়েদের মধ্যে আরেকটা ব্যাপার খুব বেশি দেখি আমি। মেয়েরা হাঁটে না; হাঁটতে চায় না। ঘরের মধ্যেও তারা হাঁটে না। জিজ্ঞেস করলে বলে যে, হাঁটলে গরম লাগে; হাঁটলে কষ্ট হয়, কোথায় হাঁটব, এ ধরনের নানা অ্যাক্সকিউজ।

আমি যেটা বলি যে, তোমাকে বাইরে গিয়ে, পার্কে গিয়ে দৌড়াইয়া হাঁটতে হবে না। তুমি ঘরের মধ্যে হাঁটো; তোমার রুমটার ভেতরে হাঁটো। যত ছোট রুমই হোক না কেন, ওর ভেতরে তুমি ১০ মিনিট হাঁটো। হেঁটে তুমি কিছুক্ষণ রেস্ট করে তোমার যদি একটানা হাঁটতে কষ্ট হয়। আবার ১০ মিনিট হাঁটো। তাইলে এই যে হাঁটাহাঁটির মধ্যেই থাকতে হবে।

লো কমোড ব্যবহার

আরেকটা টিপস আমি সবাইকে দিই। সেটা হচ্ছে যে আমাদের টয়লেট ব্যবহারটা। আমাদের সবার বাসায় কিন্তু এখন হাইকমোড ব্যবহার করে অভ্যস্ত। অনেকে ছোটবেলা থেকেই অভ্যস্ত। কারও পক্ষেই বাসার যে নিচু কমোড, সেই কমোডটাতে কিন্তু যাওয়া হয় না, কিন্তু প্রত্যেকের বাসায় একটা নিচু টয়লেট আছে।

আমি এ জন্য সবাইকেই বলি, তোমার প্রেগন্যান্সির শুরু থেকে অন্তত দিনে একবার টয়লেট করতে হলেও যদি ইউরিন করার জন্যও দরকার হয়, একবার হলেও সেই লো কমোড টয়লেটটাতে যাবে। এতে একটা ‍খুব ভালো কিন্তু পেলভিসের এক্সারসাইজ হয়।

মানসিক প্রস্তুতি

আর যেটা সবাইকে বলি যে, মানসিকভাবে প্রস্তুতি যে, আমি পারব। আমি কেন পারব না? সবাই পারলে আমিও পারব। আমার মা পেরেছে, আমার নানি পেরেছে। আমি কেন পারব না? এই জিনিসটা তাদের মনের মধ্যে আনতে হবে। আর মন থেকে এটা ফেলে দিতে হবে যে, চেষ্টা করে দেখব। না পারলে সি-সেকশন করে ফেলব।

অল্টারনেটিভটা মাথায় আনা যাবে না যে, না পারলে সি-সেকশন তো আছেই। অল্টারনেটিভটা আসাতে, অল্টারনেটিভটা ইজিলি এভেইলেবল হওয়াতে আমাদের নরমাল ডেলিভারির রেটটা অ্যাকচুলয়ালি এতখানি কমে গেছে।

আরেকটা হচ্ছে যে, আমি দেখেছি, আমার প্যাশেন্টদের মধ্যে যারা একদম ডেট পর্যন্ত, হয়তো ডেটের আগের দিন পর্যন্ত অফিস করেছে কিংবা কলেজ করেছে, ভার্সিটি করেছে। এমনও প্যাশেন্ট দেখেছি যে, আড়ংয়ে গিয়ে শপিং-টপিং করে দুই ঘণ্টা হেঁটে আসার পরে বাসায় লেবার পেইন উঠেছে। আমার এখানে আসার পর খুব ইজি, হয়তো বা দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যেই তার ডেলিভারি হয়ে গেছে।

এই জন্য অ্যাকটিভিটিটা খুব ইম্পরট্যান্ট যে, তাকে সবসময় চলাফেরার মধ্যেই থাকতে হবে। শুধু মুখে বলব আমি নরমাল ডেলিভারি করব, কিন্তু আমার ইচ্ছামতো খাব, আমি সারা দিন ঘরে এসি ছেড়ে নিজের রুমের ভেতরে শুয়ে থাকব, হয় মোবাইল বা ল্যাপটপ নিয়ে পড়ে থাকব। এ ধরনের লাইফস্টাইল মেন্টেইন করলে কিন্তু কোনোকিছুই পসিবল না। অ্যাকচুয়ালি একটা সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়া পসিবল না, নিজেও শেষ পর্যন্ত সুস্থ থাকা সম্ভব না।

এ কারণেই এখন আমাদের মায়েদের মধ্যে হাই ব্লাড প্রেশার, ডায়াবেটিস এগুলো খুব বেশি। দেখা যায় যে, আগে কখনোই ছিল না; প্রেগন্যান্সির মাঝখানের দিকে তারা এগুলোতে অ্যাটাক হচ্ছে।

আমি সবাইকেই বলব, লাইফস্টাইল চেঞ্জ করতে হবে, খাবারদাবারের হ্যাবিট চেঞ্জ করতে হবে। স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালাইয়া যেতে হবে। মাথা থেকে ফেলে দিতে হবে যে, আমি অসুস্থ। মনে করতে হবে যে, হ্যাঁ এটা আমার লাইফের একটা পার্ট এবং এটাও একদমই ন্যাচারাল একটা প্রসেস। এটা আমাকে নিতে হবে এবং আমি অবশ্যই ন্যাচারাল ডেলিভারি ট্রাই করব। এটাতে প্রথম থেকে মেন্টালি ফিক্সড হতে হবে। তাহলেই সম্ভব।

এ বিভাগের আরো খবর