লিভারে অতিরিক্ত ফ্যাট বা চর্বি জমে যে রোগ হয়, সেটি পরিচিত ফ্যাটি লিভার হিসেবে। অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে অনেকে এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
এক ভিডিওতে এ রোগের কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার জানিয়েছেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের হেপাটোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. ফরহাদ হোসেন মো. শাহেদ। পরামর্শগুলো তার ভাষায় তুলে ধরা হলো পাঠকদের সামনে।
কারণ
বর্তমানে ফ্যাটি লিভারটা খুব বেড়ে গেছে আমাদের সমাজে। এটার কারণ হচ্ছে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন। যেমন: আমাদের খাওয়া-দাওয়ার অনিয়ম, আমাদের চলাফেরায় অনিয়ম, আমাদের জীবনযাপনে অনিয়ম, ঘুমের অনিয়ম। এই ধরনের অনিয়মের কারণে আমরা ফ্যাটি লিভারে বেশি আক্রান্ত হচ্ছি।
লক্ষণ বা উপসর্গ
ফ্যাটি লিভার হলে প্রাথমিকভাবে উপসর্গ দেখা দেবে। শরীরে একটা অশান্তি বা অস্থিরতা কাজ করবে। শরীরের ওজন বেড়ে যাবে। পেটটা বড় হয়ে যাবে। পেটে একটা অশান্তি লাগবে। খাওয়ার অরুচি ধরবে।
এ ধরনের রোগীদের দেখা যায় যে, আস্তে আস্তে ডায়াবেটিস ডেভলাপ করে, হাইপারটেনশন ডেভলাপ করে। হাই কোলেস্টেরল ডেভলাপ করে।
পরীক্ষা
এ জন্য যখন দেখা যাবে যে, খাওয়ার অরুচি হচ্ছে বা শরীরের ওজন বেড়ে যাচ্ছে বা একটা অস্থির অস্থির ভাব লাগতেছে, তখন নিকটস্থ ডাক্তারের সাথে বা লিভার রোগের ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে হবে। তখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। করলে দেখা যাবে যে, রক্তের মধ্যে কোলেস্টেরল বেশি বা ব্লাড সুগারটা হয়তো বেশি থাকতে পারে, প্রেশারটা বেশি থাকতে পারে। তো এই ধরনের রোগীগুলো যখন কোনো বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যান বা আমাদের লিভার রোগের ডাক্তারের কাছে আসেন, আমরা তখন কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করি।
১. আমরা ব্লাড সুগার প্রথমেই করি। ডায়াবেটিস আছে কি না, কোলেস্টেরল বা রক্তে চর্বির পরিমাণটা মাপি। হয়তো দেখা যাবে যে, কোলেস্টেরলটা অনেক বেশি থাকে।
২. তারপরে লিভার ফাংশনটা আমরা পরীক্ষা করি। তখন দেখা যায় যে, এলজিবিটি বলে একটা লিভার ফাংশন টেস্ট, এলজিবিটি অনেক বেশি থাকে।
৩. তারপর আমরা আল্ট্রাসনোগ্রাম করি পেটের। তখন দেখা যাবে, ফ্যাটি লিভার ধরা পড়ে। আল্ট্রাসনোগ্রামের মাধ্যমে ফ্যাটি লিভারটা প্রথমে ডায়াগনসিস হয়।
৪. এরপরে আমরা আরও সূক্ষ্মভাবে ফ্যাটি লিভারটা ধরার জন্য ফাইব্রোস্ক্যান অব দ্য লিভার নামের একটা নতুন টেস্ট আছে, এই পরীক্ষাটা করা হয়। এটা করলে আপনার লিভারে চর্বির পরিমাণ কতটুকু আছে, এর মাত্রাটা ধরা পড়ে। এই চর্বিটা লিভারের কোনো ক্ষতি করতেছে কি না বা ফাইব্রোসিস করতেছে কি না, এটারও একটা মাত্রা ধরা পড়ে। তখন আমরা ফাইব্রোস্ক্যানের যে রিপোর্ট, ফ্যাট কনটেন্ট এবং ফাইব্রোসিসের মাত্রা দেখে ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসাটা শুরু করি।
প্রতিকার
১.চিকিৎসার মধ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে লাইফস্টাইল মডিফিকেশনটা (জীবনযাপনে পরিবর্তন) ফার্স্ট করি। মানে রোগী কী খাবে, কীভাবে ঘুমাবে, কীভাবে চলাফেরা করবে। এর মধ্যে আমরা প্রাথমিকভাবে যেটা করি, চর্বিযুক্ত খাবারটা পরিহার করতে বলি। ভাত এক বেলা খেতে বলি; রুটি দুই বেলা খেতে বলি। আর দৈনিক আধা ঘণ্টা থেকে ৪০ মিনিট; কারও কারও ক্ষেত্রে এক ঘণ্টা ব্যায়াম করতে বলি।
২. আমরা বডি হাইট (উচ্চতা) ও ওয়েট (ওজন) মেপে কতটুকু আইডিয়াল ওয়েট (আদর্শ ওজন) থাকা উচিত, প্রত্যেকটা প্যাশেন্টকে আমরা বলে দিই। যখন প্রতিটা প্যাশেন্ট উনাদের আইডিয়াল ওয়েট জানতে পারে, ওই অনুসারে উনাদের ওয়েটটা কমাতে হয়।
৩. ফ্যাটি লিভারের সাথে অ্যাসোসিয়েটেড যে কয়েকটা রোগ থাকে, কারও যদি হাইপারটেনশন থাকে, প্রেশার কন্ট্রোল করতে বলি। কারও ডায়াবেটিস থাকলে ডায়াবেটিস কন্ট্রোল করতে বলি। অনেকের দেখা যায় হার্টের রোগ থাকে, অন্যান্য রোগ থাকে। ওই রোগগুলো কন্ট্রোল করতে বলি।
৪. ফ্যাটি লিভারের এখন কিছু স্পেসিফিক চিকিৎসা বের হয়েছে। ওবেটিকোলিক অ্যাসিড বা সোডিঅক্সিকোলিক অ্যাসিড। এ ধরনের ওষুধগুলো আমরা প্রেসক্রাইব করে থাকি।
৫. ফ্যাটি লিভার হলে যে চিকিৎসা করতে হবে এমন কোনো কথা নাই। ডাক্তারের কাছে পরামর্শ করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পরে কী ধরনের চিকিৎসা লাগবে, ডাক্তারই পরামর্শ দিয়ে থাকে, তবে মন খারাপ করার কিছু নাই। অনেক সময় ফ্যাটি লিভার ভালো হতে অনেক দিন সময় লাগে; ধৈর্য ধরে চিকিৎসা করতে হয়।
৬. আপনারা যারা ফ্যাটি লিভার বা এ ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বা এখনও জানেন না ফ্যাটি লিভার আছে, কিন্তু প্রেশার আছে, ডায়াবেটিস আছে, আপনারা অবশ্যই ফ্যাটি লিভার আছে কি না, চেক করে নেবেন। সেই ক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভার ধরা পড়লে এটার চিকিৎসা শুরু করা যাবে।