বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

বসন্ত-ভালোবাসায় রাঙানো প্রাণের মেলা

  • সৈয়দ ইকবাল   
  • ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ২২:৩১

বসন্ত ও ভালোবাসার রঙিন দিনে বইমেলায় তরুণ-তরুণীরা ছিল মাতোয়ারা। এদিন মেলার পরতে পরতে লেগেছিল ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া। মেলা প্রাঙ্গণে ছিল উপচে পড়া ভিড়। বইও বিক্রি হয়েছে ভালো। গল্প-উপন্যাসসহ প্রেমের কবিতার বই বেশি বিক্রি হয়েছে।

প্রকৃতিতে ঋতুরাজ বসন্তের ছোঁয়া লেগেছে। তেমনই প্রাণের মেলাকেও যেন ফাগুনের আগুন ছুঁয়েছে। অমর একুশে বইমেলার একাডেমি প্রাঙ্গণে কোকিলের কুহুতান শোনা যাচ্ছিল কয়েক দিন আগে থেকেই। ওরা যেন বইপ্রেমীদের বার্তা দিচ্ছিল- ‘বসন্ত এসে গেছে…।’ আর তাই তো বইমেলায়ও সেই বসন্ত চলে এসেছে। বুধবার শুধু ঋতুরাজ বসন্তের প্রথম দিন ছিলো না। ছিলো বিশ্ব ভালোবাসা দিবসও। তাই তো ফাগুনের রঙের সঙ্গে ছিলো লাল আভার উষ্ণতা।

বসন্ত ও ভালোবাসার রঙিন দিনে মেলায় তরুণ-তরুণীরা ছিল মাতোয়ারা। এদিন মেলার পরতে পরতে লেগেছিল ঋতুরাজ বসন্ত আর ভালোবাসা দিবসের ছোঁয়া। রেওয়াজ অনুযায়ী এতদিন ১৩ ফেব্রুয়ারি পালিত হয়ে আসছিল পয়লা ফাল্গুন। হলুদ পোশাকে, গাঁদা ফুল দিয়ে মানুষ দিনটি বরণে ব্যস্ত থাকতেন। পরদিন বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে রঙ বদলে যেত।

কিন্তু নতুন বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী গত কয়েক বছর ধরে বসন্ত আসে ভালোবাসার চাদর নিয়ে। তাই প্রাণের মেলায় তরুণ-তরুণীরাও বসন্ত আর ভালোবাসার রঙে নিজেদের রাঙানোর সুযোগ পেয়ে যায়। তাদের উচ্ছ্বাসে বসন্ত-ভালোবাসায় একাকার ছিল বইমেলা।

প্রকাশক ও আয়োজকরা জানান, ফাল্গুনের প্রথম দিন থেকে মেলায় যে বসন্তের ছোঁয়া লাগে তা মেলার শেষ অবধি অব্যাহত থাকে। এবারও ব্যতিক্রম হবে না। বরং অন্যান্যবারের চেয়ে মেলা আরও প্রাণবন্ত হবে এবং মেলায় বিক্রিবাট্টাও বেশি হবে বলে তারা আশা করছেন। কেননা করোনা এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে ঢিমেতালে চলা বইমেলা এবার পুরোপুরি প্রাণ ফিরে পেয়েছে। তাই বসন্তের এই রঙ মেলার সামনের দিনগুলোতেও থাকবে। অন্যান্যবারের চেয়ে সবচেয়ে বেশি বই বিক্রি হবেও বলেও কেউ কেউ ধারণা প্রকাশ করেন।

বরাবরের নিয়ম ধরে বুধবার বিকেল ৩টায় বইমেলার দুয়ার খুলে দেয়া হয়। আর সঙ্গে সঙ্গে তারুণ্যের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। হলুদ কিংবা লাল রঙের শাড়িতে মেয়েরা আর ম্যাচিং করা পানজাবি পরে ছেলেদের মেলায় প্রবেশ করতে দেখা যায়। তরুণীদের মাথায় ছিল ফুলের মালা। কারও কারও হাতে ছিল প্রিয়জনের উপহার দেয়া লাল গোলাপ কিংবা অর্কিড ফুল। বিকেলের পর গোটা মেলায় ছিল উপচেপড়া ভিড়।

মেলা মাঠ ঘুরে দেখা গেছে, এদিন বিকেলের পর দর্শনার্থীদের তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হয়েছে এই ভিড়। রাজু ভাস্কর্য এলাকায় রীতিমতো জনজট লেগে গেছে। মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রবেশ গেটে ছিল দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করে তবেই প্রবেশ করতে হয়েছে বইমেলায়।

মেলায় যাত্রাবাড়ী থেকে আসা নাফিসা বলেন, ‘আজ ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা ফাল্গুন। বসন্তকে বরণ করে নিতে একটু স্পেশালভাবে বের হয়েছি। দুপুর থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঘুরেছি। বিকেলের পর এসেছি বইমেলায়। প্রিয় লেখকের কিছু বইও কিনলাম।’

অন্বেষা প্রকাশনীর এক বিক্রয় প্রতিনিধি বলেন, ‘অন্যান্য দিনের চেয়ে আজ (বুধবার) মেলায় ভিড় বেশি। বইও বিক্রি হয়েছে ভালো। গল্প-উপন্যাসসহ প্রেমের কবিতার বই বেশি বিক্রি হয়েছে।’

দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে মেলায় তরুণ-তরুণীদের শ্রেষ্ঠ উপহার বই-ই তুলে দিতে দেখা গেছে। এসব বইয়ের মধ্যে আবার সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে প্রেমের কাব্য ও উপন্যাস। নিজের না বলতে পারা কথাগুলো কবি ও সাহিত্যিকদের মাধ্যমে নিজের প্রিয় মানুষটির কাছে পৌঁছে দেন তারা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাস, সৈয়দ শামসুল হক, হুমায়ূন আহমেদ, ইমদাদুল হক মিলন, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, হেলাল হাফিজসহ রোমান্টিক কবি-সাহিত্যিকের গল্প-উপন্যাস বেশি বিক্রি হয়েছে বলে জানা যায়।

তরুণ লেখকদের প্রেমের কবিতা-উপন্যাসও এদিন কপোত-কপোতিদের নজর কেড়েছে বলে প্রকাশকরা উল্লেখ করেন।

ফাল্গুন আর ভালোবাসার দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ৯১টি।

এদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ভাষাসংগ্রামী গাজীউল হক’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাফাত আলম মিশু। আলোচনায় অংশ নেন সুজাতা হক এবং মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী।

‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন লেখক ও কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব, কবি শাহেদ কায়েস, লেখক ও সংগীতজ্ঞ তানভীর তারেক এবং কথাসাহিত্যিক মাজহার সরকার।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মারুফুল ইসলাম, মাসুদুজ্জামান, ইসমত শিল্পী এবং সাহেদ মন্তাজ।

আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী মাসকুর-এ-সাত্তার কল্লোল, মাসুদুজ্জামান এবং চৈতালী হালদার। পুঁথিপাঠ করেন মো. শহীদ এবং মো. কুদ্দুস মিয়া।

সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী রফিকুল আলম, খুরশীদ আলম, মামুনুল হক সিদ্দিক, মুর্শিদুদ্দীন আহম্মদ, মো. রেজওয়ানুল হক, কাজী মুয়ীদ শাহরিয়ার সিরাজ জয়, আঞ্জুমান আরা শিমুল, চম্পা বণিক, শরণ বড়ুয়া এবং অনন্যা আচার্য।

বৃহস্পতিবার সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায়, চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত।

বিকেল ৪টায় মেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘স্মরণ: আবদুল হালিম বয়াতি’ শীর্ষক আলোচনা। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জোবায়ের আবদুল্লাহ। আলোচনায় অংশ নেবেন শফিকুর রহমান চৌধুরী এবং মো. নিশানে হালিম। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সাইদুর রহমান বয়াতি।

এ বিভাগের আরো খবর