বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজের নাবিক-ক্রুরা দেশে ফিরে উদ্ধার ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন। জানিয়েছেন, অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বেশি তৎপর ছিলেন।
বুধবার দুপুরে ‘এমভি বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজের ২৮ নাবিক-ক্রু দেশে ফেরার পর জাহাজের গ্রুপ ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি ছাড়া আর কাউকে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলতে দেয়া হয়নি।
নূরে আলম বলেন, ‘আমরা সেখানে দেখেছি প্রায় ৬০ কিলোমিটার হেঁটে হেঁটে রিফিউজিরা সীমান্ত অতিক্রম করছেন। কিন্তু আমাদের হেঁটে পার হতে হয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমরা সকলেই আনন্দিত সুস্থভাবে দেশে ফিরতে পেরেছি। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রীর সুনির্দিষ্ট দিকনির্দেশনায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও পোল্যান্ড, রোমানিয়া, অস্ট্রিয়ার দূতাবাস কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমরা এত দ্রুত দেশে ফিরতে পারব, এটা ছিল আমাদের জন্য অকল্পনীয়।’
এ সময় তিনি জাহাজটির থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমানের মৃত্যুতে সমবেদনা জানান।
বলেন, ‘তার মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করা হচ্ছে। আমরা তার মরদেহ হিমঘরে রেখে এসেছি।’
‘বাংলার সমৃদ্ধি’ জাহাজটি ২১ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের বন্দর এরেগলি ছেড়ে যায়। সেটি ২৩ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বন্দর অলিভিয়ায় পৌঁছে।
ইউক্রেনে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে রাশিয়া সামরিক অভিযান শুরু করে। রাশিয়ার সামরিক অভিযানে ইউক্রেনে পরিস্থিতির অবনতি হলে শিপিং করপোরেশনের নির্দেশে পণ্য লোড করার পরিকল্পনা বাতিল করে সেখানেই জাহাজটি অবস্থান করছিল।
পরে ২ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ৯টা ২৫ মিনিটে যুদ্ধবিমান থেকে রকেট হামলায় জাহাজের ডেকে আগুন ধরে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন জাহাজের ক্রু ও নাবিকরা। ওই হামলায় নিহত হন জাহাজের থার্ড ইঞ্জিনিয়ার হাদিসুর রহমান।
ইউক্রেনে বাংলাদেশি জাহাজে হামলার ঘটনায় গ্রুপ ক্যাপ্টেন জি এম নূরে আলম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত ডিউটিতে ছিলাম, বিকেলে যখন অ্যাটাক হয় তখন জাহাজের ব্রিজে আগুন লেগে গিয়েছিল। এরপর আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি।’
তিনি বলেন, ‘দেশবাসী আমাদের জন্য অনেক দোয়া করেছেন। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী মহোদয় আমার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করে বিভিন্ন পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন। এ ছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীও ফোন করে আমাদের নিরাপদে সরিয়ে নেয়ার পদক্ষেপ নেন৷’
উদ্ধার ক্রু-নাবিকরা দেশে ফিরে আসার খবরে বুধবার ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসেন হাদিসুর রহমানের বাবা-মা, ভাই-বোন। এসে শোনেন তার লাশ আসেনি। ছেলের লাশ কোথায় আছে সেটিও তাদের জানানো হয়নি বলে অভিযোগ করেন হাদিসুরের বাবা আব্দুর রাজ্জাক হাওলাদার।
এ সময় তিনি দ্রুত তার ছেলের লাশ দেশে আনার অনুরোধ জানান।