চট্টগ্রামে ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর পরিবহন মালিক গ্রুপ।
সংগঠনের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল শনিবার দুপুর ১টার দিকে নিউজবাংলাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রোববার সকাল ৬টা হতে চট্টগ্রাম মহানগরীতে গণপরিবহন চলবে। রাস্তা বন্ধ করে সিএনজি অটোরিকশা ও ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচলে বাধা দিয়ে, রাজনৈতিকভাবে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে একটি পক্ষ। সে জন্য ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
বেলায়েত আরও বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোয় সরকার যেন গাড়ি ভাড়া বাড়ায় বা তেলের দাম আবার কমিয়ে দেয়। শনিবার আমরা সড়কে গিয়ে দেখি, এক শ্রেণির লোক নিজেদের শ্রমিক দাবি করে সব গাড়ি বন্ধ করে দিচ্ছে।
‘অটোরিকশা গ্যাসে চলে, ব্যক্তিগত গাড়ি বেশিরভাগ অকটেনে চলে। তবে শ্রমিক নামধারীরা পিকেটিং করে এসব গাড়িও বন্ধ করে দিচ্ছে। ব্যক্তিগত গাড়িতে মবিল মেরে দিচ্ছে। সরকার আমাদের সঙ্গে রোববার বেলা ১১টায় মিটিং করবে বলেছে। তবে রাস্তায় কিছু লোক অরাজকতা করায় আমরা মনে করছি, এখানে কারও ইন্ধন আছে। তাই ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত।’
বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘আমরা রোববার সকাল থেকে গাড়ি চালাব। এ ক্ষেত্রে আমরা প্রশাসনের সহযোগিতা চাই। কোনো দুষ্কৃতিকারী যেন আমাদের চালকদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে না পারে সেজন্য সকাল থেকে প্রশাসনকে মাঠে থাকার অনুরোধ করছি আমরা।
নগরীর টাইগারপাস মোড়ে সড়ক অবরোধ করে শনিবার সকালে গাড়ি ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচলে বাধা দিয়েছে পরিবহন শ্রমিকরা।
সকাল সাড়ে ৯টার দিকে টাইগারপাস এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা রাস্তায় অবস্থান নেন। এ সময় তাদের বিভিন্ন গণপরিবহন চলাচলে বাধা দিতে দেখা গেছে। শ্রমিকরা ব্যক্তিগত গাড়ি ও সিএনজি আটকে দেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। পরে বেলা ১১টার দিকে পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।
চট্টগ্রাম মহানগর পরিবহন মালিক গ্রুপ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার গণপরিবহন বন্ধের ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি পণ্য পরিবহনও বন্ধ রাখার ঘোষণা এসেছে সংগঠনগুলো থেকে।
সেদিন চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব গোলাম রসুল বাবুল বলেন, ‘বিভিন্ন সময় আমাদের ১০ দফা দাবি ছিল, যেগুলো পূরণ করা হয়নি। এর মধ্যে হুট করে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এই অবস্থায় মালিক-শ্রমিকদের পক্ষে গাড়ি চালানো খুব কষ্টকর। এর প্রভাব পড়বে ভাড়ায়। কিন্তু ভাড়া বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি। অতীতে বিআরটিএর ট্যাক্স-টোকেন ফি কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছিল। তা আর কমানো হয়নি। কোনো দাবি মানা হয়নি। তার মধ্যে এভাবে তেলের দাম বাড়ালে গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। এসব কারণে শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পণ্য ও যাত্রীবাহী সব ধরনের যানবাহন চলাচল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ রাখায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
বুধবার রাতে জ্বালানি তেলের দাম ৬৫ থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সরকার।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ প্রধান তথ্য অফিসার মীর মোহাম্মদ আসলাম উদ্দিন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়তে থাকায় ‘লোকসান কমাতে’ দেশের বাজারেও এই জ্বালানির তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য ক্রমবর্ধমান। বিশ্ববাজারে ঊর্ধ্বগতির কারণে পাশের দেশসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্বালানি তেলের মূল্য নিয়মিত সমন্বয় করছে। গত ১ নভেম্বর ভারতে ডিজেলের বাজার মূল্য প্রতি লিটার ১২৪.৪১ টাকা বা ১০১.৫৬ রূপি ছিল। অথচ বাংলাদেশে ডিজেলের মূল্য প্রতি লিটার ৬৫ টাকা অর্থাৎ লিটার প্রতি ৫৯.৪১ টাকা কম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সরকার শুধু ডিজেল ও কেরোসিনের মূল্য প্রতি লিটার ভোক্তা পর্যায়ে ৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৮০ টাকা পুনর্নির্ধারণ করেছে। নতুন এই মূল্যবৃদ্ধি বুধবার দিবাগত রাত ১২টা থেকেই কার্যকর হয়েছে।