কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) তফসিল ঘোষণার পর কে হবেন পরবর্তী মেয়র- এ নিয়ে চায়ের টেবিল থেকে অফিস পাড়া পর্যন্ত চলছে নানা আলোচনা। বিভিন্ন রকম সমীকরণ মেলাতে এখন ব্যস্ত নগরবাসী। এই নির্বাচন ঘিরে এখন তিন প্রার্থী রয়েছেন আলোচনার কেন্দ্রে।
জয়ের লক্ষ্যে কি ছুটতে পারবে কায়সারের বাজির ঘোড়া? দুবারের সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু কি আবার মসনদে ফিরবেন? নাকি নতুন ইতিহাস রচনা করবেন সূচনা?- এসব প্রশ্নের উত্তর মেলাতে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে।
অন্যদিকে, ভোটের মাঠে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিতে নেতা-কর্মীদের নিয়ে সমানে পরিশ্রম করে চলেছেন প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে তাদের নির্বাচনি পোস্টার, ব্যানার ও ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে অলিগলি; প্রার্থীরা অংশগ্রহণ করছেন বিভিন্ন সামাজিক কাজে।
জেলা নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গেছে, এখন পর্যন্ত ৬ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন- সাবেক মেয়র বিএনপির সাবেক নেতা মনিরুল হক সাক্কু, এমপি বাহারের বড় মেয়ে ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তাহসীন বাহার সূচনা, মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম সেলিম, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার, মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের সাবেক ভিপি নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, ও মো. মাইন উদ্দিন।
এই ছয়জনের মধ্যে আলোচনার শীর্ষে রয়েছেন সাবেক মেয়র মনিরুল হক সাক্কু, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার।
অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে চান সাক্কু
বিএনপির নেতা-কর্মী ও বিভিন্ন ওয়ার্ডের সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পূর্ণ উদ্যমে নিজের মসনদ ফিরে পেতে এবার কাজ করছেন সাবেক মেয়র সাক্কু। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে তিনি গণসংযোগ শুরু করেছেন। প্রতিটি ওয়ার্ড তার চেনা। গতবার যে কারণে ভোটে হেরেছেন, এবার আর সে ভুল করতে চান না তিনি। মেয়র পদে বিজয়ী হয়ে নিজের মসনদ ফিরে পেতে তিনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন।
মনিরুল হক সাক্কু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকার কাজ দিয়েছিলেন। সে নিরিখে আমি সিটির উন্নয়নে পরিকল্পনা করেছি, কিন্তু শেষ করতে পারিনি। অসমাপ্ত কাজ শেষ করতেই এবারের নির্বাচনে অংশ নেব।’
তিনি বলেন, ‘এই নগরী আমার চেনা। এই নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডের অলিগলিতে আমি কাজ করেছি। গত দেড় বছর নগরীতে তেমন কাজই যে হয়নি, এটা নগরবাসী বুঝে গেছে। ফলে তারা আবার আমাকেই চায়। আমি নগরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যেতে চাই।’
কুমিল্লাকে নবরূপে সাজানোর অঙ্গীকার কায়সারের
গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে হেরেও মানুষের মন জয় করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করায় দল তাকে বহিস্কার করে। তবে এবারও নির্বাচন করবেন বলে তিনি মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।
গতবার নিজাম উদ্দিন কায়সার ঘোড়া প্রতীকে পান ২৯ হাজার ৯৯ ভোট। তার এই ভোট সাক্কুর হারের জন্য দায়ী বলেও নগরের অনেকেরই ধারণা।
ভোট জয়ের ব্যপারে এবার আরও প্রত্যয়ী নিজাম উদ্দীন কায়সার। তিনি বলেন, ‘আমি নির্বাচন করেছি। মানুষ আমাকে মন থেকে ভালোবেসে ভোট দিয়েছে। গতবারের ভুলগুলো সংশোধন করে এবার ইনশাল্লাহ বিজয়ী হব।’
তিনি বলেন, ‘পরিবর্তনের প্রত্যয়ে নতুন প্রজন্মের সমর্থন নিয়ে আমি নির্বাচন করব। শুধু প্রতিশ্রুতি নয়, কুমিল্লাকে নতুন করে সাজাতে কাজ করব।’
নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করতে চান সূচনা
তবে নির্বাচনের মাঠে একেবারেই নতুন মুখ সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের বড় মেয়ে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. তাহসিন বাহার সূচনা।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে এক বর্ধিত সভায় মহানগরের নেতা-কর্মীরা তাকে সমর্থন দেন। ফলে তিনিই এখন আওয়ামী লীগের প্রার্থী।
বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছেন গত কয়েক বছর ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় ডা. সূচনা। ভোটের মাঠে প্রার্থী হিসেবে নতুন হলেও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট চেয়ে গণসংযোগ, কিংবা তার আগে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার পক্ষে প্রচারে নেমে ভালোই অভিজ্ঞতা রয়েছে তার।
পাশাপাশি তার প্রতিষ্ঠিত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জাগ্রত মানবিকতার মাধ্যমে তিনি নিজের পরিচয় গড়ে নিয়েছেন। করোনাকালে নগরবাসী তার সেবা গ্রহণ করেছে।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ব্যপারে নিউজবাংলাকে সূচনা বলেন, ‘আমি কুমিল্লা নগরীকে সাজাতে চাই; নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করতে চাই।
‘আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। সেবা করার মানসিকতা আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি আমি। আশা করছি, নগরবাসী আমাকে সেটি করার সুযোগ দেবে।’
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। পরে এ বছরের ২৪ জানুয়ারি উপ-নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি, প্রার্থিতা বাছাই ১৫ ফেব্রুয়ারি ও প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্ধ হবে আগামী ২৩ ফেব্রুয়ারি। এবারের নির্বাচনে কোনো দলীয় প্রতীকে ভোট হবে না।
এর আগে, ২০২২ সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের মেয়র প্রার্থী রিফাতের কাছে মাত্র ৩৪৭ ভোটের ব্যবধানে হেরে যান সাক্কু। সে সময় নৌকা প্রতীকে রিফাত পান ৫০ হাজার ৩১০ ভোট আর টেবিল ঘড়ি প্রতীকে সাক্কু পেয়েছিলেন ৪৯ হাজার ৯৬৭ ভোট। একই নির্বাচনে বিএনপি ঘরানার আরেক প্রার্থী নিজাম উদ্দিন কায়সারের ঘোড়া প্রতীক পেয়েছিল ২৯ হাজার ৯৯ ভোট।