বাংলাদেশ

মতামত

খেলা

বিনোদন

জীবনযাপন

তারুণ্য

কিড জোন

অন্যান্য

রেস-জেন্ডার

ফ্যাক্ট চেক

স্বাস্থ্য

আন্তর্জাতিক

শিক্ষা

অর্থ-বাণিজ্য

বিজ্ঞান-প্রযুক্তি

টাঙ্গাইলে নির্দেশনা অমান্য করে অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার অভিযোগ

চালকদের অভিযোগ, এর আগে পৌরসভা নির্ধারিত ১০ হাজার ৫০০ টাকা ফির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমান পৌর প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর এক বছর মেয়াদি পায়ে চালিত রিকশার এক হাজার টাকার লাইসেন্স বিক্রি করেছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। মেট্রো রিকশার লাইসেন্সের কথা বলে অতিরিক্ত ওই টাকাগুলো নেয়া হয়েছে।

টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স নিয়ে চলছে সাত সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশা (ইজিবাইক)।

তৃতীয় দফায় পৌরসভার মেয়র স্বাক্ষরিত রিকশার লাইসেন্সের মেয়াদ বেড়েছে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধে ২০২১ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাসহ সড়ক পরিবহনবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীরের বিরুদ্ধে।

বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করায় শহরে যেমন বেড়েছে যানজট, তেমনি দেখা দিয়েছে বৈদ্যুতিক সমস্যা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী।

১৮৮৭ সালের পয়লা জুলাই স্থাপন করা হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা, বর্তমানে যার আয়তন ২৯.৪৩ বর্গকিলোমিটার। ১৮টি ওয়ার্ডের প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় সড়কের সংখ্যা ৫৯০টি।

টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স বিভাগ জানায়, পৌরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটোরিকশার সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। আর পায়ে চালিত রিকশা রয়েছে পাঁচ হাজার।

অটোরিকশার লাইসেন্স ফি ১০ হাজার ৫০০। আর পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স ফি এক হাজার টাকা।

টাঙ্গাইলে পৌরসভা নির্ধারিত ১০ হাজার ৫০০ টাকা ফির পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশাগুলোর পেছনে চালকের বসার সিটের নিচে সাঁটানো হয়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স। পৌরসভার বর্তমান মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বছর মেয়াদি ওই লাইসেন্সগুলো ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।

কিছু রিকশার লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন। ওই রিকশাগুলোর লাইসেন্সের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।

তৃতীয় দফায় স্বাক্ষরিত রিকশা লাইসেন্সের মেয়াদ হয়েছে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।

এর আগেও তৎকালীন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র দেন চার হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স, যাতে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। শহরজুড়ে এ সময় লাগামহীন যানজট লেগে থাকায় ওই চার হাজার অটোরিকশা চলাচলে দুই শিফট চালু করা হয়।

তখন থেকে প্রতি শিফটে ২ হাজার করে অটোরিকশা চলাচল শুরু করে। বর্তমানে শহরজুড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি চলাচল করছে প্রায় আট হাজার ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশা। এ ছাড়াও রয়েছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সাড়ে পাঁচ হাজার পায়ে চালিত রিকশা।

টাঙ্গাইল পৌরসভায় অটোরিকশাগুলো দুই শিফট পদ্ধতিতে চলাচল করলেও সাত সহস্রাধিক মেট্রো রিকশা চলছে দিনভর।

এর বাইরে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ১২৮টি পরিবহন, সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, বিমা, আদালতের যানবাহন, চিকিৎসক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ির পাশাপাশি গড়ে প্রতিদিন তিন সহস্রাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করছে টাঙ্গাইল শহরে। এর ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের বেবীস্ট্যান্ড, শান্তিকুঞ্জ মোড়, মেইন রোড, নিরালা মোড়, পার্কবাজার মোড়, ক্যাপসুল মার্কেট, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সুপারি বাগান মোড়, কলেজ গেট আর নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট।

যানজট নিরসনে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী, শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ নানা বয়সী যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।

চালকদের অভিযোগ, এর আগে পৌরসভা নির্ধারিত ১০ হাজার ৫০০ টাকা ফির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমান পৌর প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর এক বছর মেয়াদি পায়ে চালিত রিকশার এক হাজার টাকার লাইসেন্স বিক্রি করেছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। মেট্রো রিকশার লাইসেন্সের কথা বলে অতিরিক্ত ওই টাকাগুলো নেয়া হয়েছে।

মেট্রো রিকশার চালক মো. পলাশ জানান, তিন বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশা ও গদি আটকে রেখে তাদের লাইসেন্স নিতে বাধ্য করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া চালানো যাচ্ছিল না বলেই তিনি বাধ্য হয়ে লাইসেন্সটি নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পৌরসভা থেকে লাইসেন্স বিক্রি করা হলেও দেড় মাস আগে মুসলিমপাড়ার একজন গ্যারেজ মিস্ত্রির মাধ্যমে ১২ হাজার টাকায় লাইসেন্সটি নিয়েছেন তিনি। সুদের টাকায় রিকশা আর লাইসেন্সটি কিনেছেন তিনি।

মেট্রো রিকশার চালক মো. হযরত জানান, পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্স বইয়ের মধ্যে ‘ইজিবাইক’ লেখা আছে বলেই তিনি লাইসেন্সটি নিয়েছেন ২০ হাজার টাকায়। তার লাইসেন্স নম্বর ৮২৫। টাকাগুলো নিয়েছে পৌরসভার লোকজন।

চালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভা থেকে মেট্রো রিকশা লাইসেন্স আর নম্বর প্লেট বিক্রি করার সুযোগে তারা এই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। পৌরসভার লোকজন লাইসেন্স ও প্লেট বিক্রি করেছেন। এ কারণে এই রিকশা বন্ধ হচ্ছে না।

‘এরপরও যদি সরকারিভাবে এই রিকশা চলাচল বন্ধ করে, তাহলে অন্য কাজ করে খাব।’

৯৯৫ নম্বর লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেট্রো রিকশাচালক রফিক বলেন, ‘৪৩ হাজার টাকায় পুরাতন রিকশাটি কিনেছি। মাসে ১২০০ টাকা ভাড়ায় লাইসেন্সটি নিয়েছি।

‘আদি টাঙ্গাইল এলাকার রিকশা গ্যারেজ ব্যবসায়ী আকবরের কাছ থেকে পৌরসভার লাইসেন্সটি কিনেছিলাম।’

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন ও যুবাদের জন্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়ে অবৈধ মেট্রো রিকশা বৈধতা দেয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। দ্রুত অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’

করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব তথা সিডিসির নাট্য সম্পাদক ও শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান সাম্য বলেন, ‘সড়ক অনুপাতে যানবাহন দ্বিগুণ হওয়ায় শহরজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট। যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। পৌরসভা পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্সের নামে আর মোটা টাকার বিনিময়ে দিয়েছে ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশার লাইসেন্স।

‘পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সেখানে নেয়া হয়েছে ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। গরিবের টাকা অমানবিকভাবে হরিলুট হচ্ছে। এর প্রভাব তীব্র যানজট ভোগ করছেন সাধারণ মানুষ।’

তিনি আরও বলেন, সরকারের মনোনীত মেয়র এই হরিলুটের অন্যতম বলে দাবি করেছেন তিনি। এর ফলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। ১,২০০ টাকার লাইসেন্স ২২,০০০ থেকে ২৩,০০০ হাজার টাকায় বিক্রির মত বড় একটি অনিয়ম প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিবিদ সকলে জানা সত্ত্বেও এর কোন প্রতিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।

রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সবুর বলেন, ‘টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে চলাচলের জন্য ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশাগুলোকে পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্স দিয়েছে। লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব তাদের না। পৌরসভার মেয়র পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্স দিয়েছেন মেট্রো রিকশায়।

‘ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশা আমাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত, তবে এই লাইসেন্স দেয়া নিয়ে পৌরসভার মেয়র আমাদের সাথে কোনো মিটিং করেননি।’

ওই সময় ইজিবাইক বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্যের বিষয়টি মেয়রের বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম. সিরাজুল হক আলমগীরের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) সাজ্জাদ রিসিভ করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে সাক্ষাতে কথা বলা হবে। মেয়র সাহেব ব্যস্ত আছে।’

পরে পৌরসভার কার্যালয়ে যাওয়ার পর মেয়রের পিএস বলেন, ‘কোনো প্রকার বক্তব্য দেয়া হবে না।’

সড়ক পরিবহনবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের ২০২১ সালের ২০ জুনের সভায় দুর্ঘটনা রোধে সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর সারা দেশে চলা অবৈধ ব্যাটারিচালিত ৪০ লাখ ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশসহ আমদানি ও ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা এবং অবৈধ ইজিবাইক আমদানি থেকে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।

এ বিভাগের আরো খবর