চলতি বন্যায় কুড়িগ্রামে এক হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রয়েছে পাট, আউশ ধান, চিনা, কাউন, আমনের বীজতলা, বাদামসহ বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি। পানি দ্রুত নেমে না গেলেও এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন কৃষকরা।
তবে শুক্রবার থেকে বৃষ্টিপাত না হওয়ায় দ্রুত কমছে নদ-নদীর পানি। এতে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, শনিবার বিকেল ৩টায় তিস্তা নদীর পানি কমে কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্রসহ অন্য নদ-নদীর পানি উল্লেখযোগ্যহারে কমে বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি কমলেও নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের পানি এখনও নামেনি। এসব এলাকার বাড়ির পাশ দিয়ে পানি অবস্থান করছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ পানি বন্দি রয়েছে। তারা নৌকা এবং ভেলা দিয়ে যোগাযোগ করছে। এসব চরাঞ্চলের ফসল এক সপ্তাহ থেকে পানিতে ডুবে রয়েছে। ফলে এসব ফসলের নষ্ট হয়ে যাবে বলে মনে করছেন কৃষকরা।
কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বল্লভের খাষ ইউনিয়নের ফান্দের চরের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বানের পানিতে পাট এবং সবজিসহ আমনের বীজতলা তলিয়ে গেছে। এসব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। বিশেষ করে আমনের বীজতলা নষ্ট হলে আমন চাষ নিয়ে বিপাকে পড়তে হবে।’
একই এলাকার দুলু মিয়া জানান, বাড়ি নিচু এলাকায় হওয়ায় পাঁচ দিন হলো পানি উঠেছে। এ কয়দিন থেকে পরিবার পরিজন নিয়ে কোনো মতে রাত-দিন কাটাচ্ছেন। এ ছাড়া বাড়ির আশপাশে লাগানো সব সবজির গাছ মরে গেছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, রৌমারী উপজেলার রৌমারী সদর, যাদুরচর, দাঁতভাঙ্গা, শৌলমারী ও চরশৌলমারী ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে ধান ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। টানা ভারি বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ি ঢলের কারণে ৫টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে প্রায় ১০ হেক্টর পাকা ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
বকবান্দা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পাকা ধানক্ষেত বৃষ্টির পানতি থলাইয়া (ডুব) গেছে। ধান কাটার কামলা পাওয়া যায় না। এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকাতে কাজ করছে না তারা। আমরা গরীব কৃষক এত টাকা পামু কই। সারা বছর এই আবাদ দিয়ে চলে আমাগো।’
কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, চলতি বন্যায় জেলায় এক হাজার ৩২০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। বন্যা শেষে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা হবে।
কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, সব নদ-নদীর পানি কমছে। দুই-এক দিনের মধ্যে পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। এ ছাড়াও জেলার ৫ থেকে ৬টি পয়েন্টে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে।
কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল আরীফ জানান, বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ১৪৪ টন জিআর চাল ও নগদ ১০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ত্রাণ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এগুলো বন্যা কবলিতদের মাঝে বিতরণ শুরু হয়েছে।