সারা শরীরজুড়ে সিগারেট-কয়েলের ছ্যাঁকা ও আঘাতের দাগ। উপড়ে ফেলা হয়েছে হাতের নখ। অমানুষিক এই নির্যাতন করা হয়েছে মাত্র ছয় বছর বয়সি একটি শিশুর ওপর।
পাবনা শহরের ছাতিয়ানি এলাকার শিশু সোয়াইব হোসেনকে অপহরণের পর আটকে রেখে রাতের বেলায় চলত এমন নির্যাতন। প্রতিবন্ধী বানিয়ে দিনে নামানো হতো ভিক্ষাবৃত্তিতে। উদ্ধারের পর ক্ষুধা ও নির্যাতনে সোয়াইবের কঙ্কালসার দেহ চিনতে কষ্ট হচ্ছে মায়ের।
গত শুক্রবার শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর বেরিয়ে আসে এসব তথ্য। এ ঘটনায় রফিকুল ইসলাম বিপ্লব (৩০) নামে এক অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করে শনিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। ছয় মাস আগে গত ৭ অক্টোবর বিস্কুট কিনে দেওয়ার কথা বলে শিশুটিকে অপহরণ করা হয়।
ভুক্তভোগী শিশু সোয়াইব (৬) পাবনা শহরের ছাতিয়ানি এলাকার আমিনুল ইসলাম ও সোহানা জাহানের ছেলে। বাবা অন্যত্র বিয়ে করায় মায়ের কাছে থাকত শিশুটি।
অপহরণকারী রফিকুল ইসলাম বিপ্লব উপজেলার শানির দিয়ার এলাকার আমজাদ হোসেনের ছেলে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অপহরণের পর সন্তানের খোঁজ না পেয়ে গত ৭ অক্টোবর পাবনা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন মা সোহানা জাহান। আত্মগোপনে থাকা অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লব শিশু সোয়াইবের মাকে ফোন করে অপহরণে কথা জানান। বেশির ভাগ সময় তার ফোন বন্ধ থাকত। জিডির পর ফোন নাম্বার ট্র্যাক করে তার অবস্থান শনাক্তের চেষ্টা করে পুলিশ। গত শুক্রবার খুলনার রূপসা ফেরিঘাট এলাকা থেকে ভিক্ষারত অবস্থায় শিশুটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম বিপ্লবকেও আটক করা হয়।
নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী শিশু সোয়াইব জানায়, রাতে তাকে একটি কক্ষে বন্দি করে রাখা হতো। সহজে কিছু খেতে দিত না। তার শরীরে দাঁতের কামড় বসিয়ে চামড়া তুলে ফেলা হতো। সারা শরীরে দেওয়া হতো সিগারেট ও কয়েলের আগুনের ছ্যাঁকা। বাম হাতের একটি আঙুলের নখ প্লাস দিয়ে উপড়ে ফেলা হয়েছে। রাতের এমন নির্যাতন শেষে দিনের বেলায় বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে তাকে দিয়ে ভিক্ষা করাতো বিপ্লব।
সোয়াইবের মা সোহানা জাহান বলেন, ‘পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সেদিন বিপ্লব আমার কাছ থেকে ছেলেটাকে নিয়ে যায় বিস্কুট কিনে দেবে বলে। তারপর থেকে ছেলেকে আর খুঁজে পাইনি। পরে সে ফোন করে জানিয়েছিল যে আমার ছেলেকে সে অপহরণ করেছে। তারপর থেকে তার ফোনও বন্ধ। এরপর সদর থানায় গিয়ে ঘটনা জানিয়ে জিডি করি।’
সোহানা জাহান আরও বলেন, ‘উদ্ধারের পর প্রথম দেখায় ছেলেকে চিনতেই পারিনি। দিনের পর দিন কীভাবে আমার শিশুসন্তানকে নির্যাতন করেছে ভাবতেই বুকটা ফেটে যায়। প্রায় প্রতিবন্ধী বানিয়ে ফেলেছে। কঙ্কালসার শরীর নিয়ে ছেলেটা হাসপাতালের বেডে। নড়াচড়াও করতে পারছে না। অমানুষ বিপ্লবের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
শিশুটির স্বাস্থ্য সম্পর্কে পাবনা জেনারেল হাসপাতালের অর্থোপেডিক্স বিভাগের প্রধান ডা. মাসুদুর রহমান প্রিন্স বলেন, শিশুটির শারীরিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। তার হাতের একটা আঙুল কেটে ফেলতে হবে। সাধ্যমতো প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিচ্ছি। ঠিকমতো চিকিৎসা নিশ্চিত করা গেলে আশা করছি দুই মাসের মধ্যে শিশুটি সুস্থ হয়ে উঠবে।
পাবনা সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) এ এস এম মনিরুজ্জামান বলেন, অপহরণ করে নিয়ে শিশুটিকে এক প্রকার প্রতিবন্ধী বানিয়ে তাকে ভিক্ষা করাতো অভিযুক্ত বিপ্লব। তথ্যপ্রযুক্তি ও খুলনার রূপসা ফেরিঘাট ফাঁড়ি পুলিশের সহায়তায় তাকে গ্রেপ্তার ও শিশুটিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি আরও বলেন, এরইমধ্যে এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করে অভিযুক্ত বিপ্লবকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর শিশু সোয়াইব হোসাইন পাবনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।