২০২০ সালের এপ্রিল। করোনা আতঙ্কে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। ঠিক এমন সময়ে ভারতে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ওঠে এক গুরুতর অভিযোগ। ভারতে করোনা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার পেছনে দায়ী করা হয় মুসলমানদের। কারণ সরকারের বিধিনিষেধ অমান্য করে তারা একটি জনসভার আয়োজন করেছিল। দ্রুত পরিস্থিতি মোড় নেয় ইসলামোফোবিয়ায়।
শত বছরের ঐহিত্য মেনে তাবলিগ-জামাতের লোকজন দিল্লিতে ওই সমাবেশ করেছিল। এতে অংশ নিয়েছিল দেশ-বিদেশের হাজার হাজার মুসলিম। নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতাসীন হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) সরকার এটিকে ‘সুপার-স্পেডার ইভেন্ট’ বলে অভিহিত করেন।
ইসলাম-বিদ্বেষে ভরে ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো। ইসলামোফোবিক মেমস এবং হ্যাশট্যাগগুলোয় ছড়ানো হতে থাকে ভারতে করোনা ছড়ানোর জন্য ওই সমাবেশ দায়ী। পিছিয়ে ছিল না সংবাদমাধ্যমগুলোও। ‘করোনা জিহাদ থেকে দেশকে বাঁচান’-এর মতো উসকানিমূলক শিরোনাম প্রচার করতে থাকে তারা।
লকডাউন নীতিমালা লঙ্ঘনের জন্য সমাবেশে অংশ নেয়া অন্তত এক হাজার মানুষকে অভিযুক্ত করে ভারত সরকার। আট মাস পর আটক শেষ ব্যক্তি বেকসুর খালাস পেয়েছিল আদালতে। বিচারক জানিয়েছিলেন, সরকারের নির্দেশে ‘বিদ্বেষপূর্ণভাবে বিচার করা হয়েছে’।
ওই সমাবেশে অংশ নেয়াদের বেশির ভাগই এসেছিল ভারতের অন্যতম ব্যবসায়িক অংশীদার ইন্দোনেশিয়া থেকে। আঞ্চলিক শীর্ষ বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে অস্বস্তি প্রকাশ করে ইন্দোনেশিয়া সরকার। দেশটির আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেন, বিতর্কটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে মুসলমানদের কলঙ্কিত করার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে।
সাবেক এক ভারতীয় কূটনীতিক সে সময় বলেছিলেন, এটি অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলোর ‘বহিরাগতকরণ’-এর একটি উদাহরণ।
মহানবী মুহম্মদ (সা.) সম্পর্কে বিজেপির দুই জ্যেষ্ঠ সদস্যের আপত্তিকর মন্তব্য নিয়ে ভারতের চলমান কূটনৈতিক আগুন প্রথমবার নয়। প্রধানমন্ত্রী মোদির দল বা সরকার কথিত ইসলামোফোবিয়ার জন্য বিশ্বব্যাপী নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে আগেও।
দুই বছর আগে বিজেপি সাংসদ তেজস্বী সূর্য এক বিতর্কের জন্ম দেন। আরব নারীদের নিয়ে ২০১৫ সালের তার একটি টুইট ফের আলোচনায় আসে। দুবাই ও কুয়েতের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী, আইনজীবীরা তার মন্তব্যের কড়া নিন্দা জানিয়েছিলেন। পরে অবশ্য সূর্য টুইটটি মুছে ফেলেছিলেন।
কেবল এটা না, ২০১৮ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর আরেকটি মন্তব্য ঝড় তুলেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে যারা অবৈধভাবে ভারতে ঢুকেছে তারা দেশকে ‘পোকার মতো’ খেয়ে ফেলছে।’
এই মন্তব্য মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশে ঝড় তুলেছিল। একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী অমিত শাহের মন্তব্যকে ‘অবাঞ্ছিত এবং অজ্ঞাত’ বলে বর্ণনা করেন। একজন বাংলাদেশি কলামিস্ট লেখেন, “অমিত শাহের ‘বাংলাদেশ সম্পর্কে ঘৃণামূলক, অপমানজনক মন্তব্য করার ইতিহাস দীর্ঘ।”
গত এক বছরে ভারতের ২০০ মিলিয়ন মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে হিন্দু কট্টরপন্থি নেতাদের ঘৃণামূলক বক্তব্যের সুনামিতে ভারত ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রকাশ্যে হিন্দুদের অস্ত্র ধরতে বলেছে; মুসলমানদের গণহত্যার কথা বলেছে।
অতীতে ডানপন্থিরা তথাকথিত ‘লাভ জিহাদ’ তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিল। ভিত্তিহীন এই ষড়যন্ত্র তত্ত্বে বলা হয়, মুসলিম পুরুষরা হিন্দু নারীদের বিয়ে করে ধর্মান্তরিত করছে। এর প্রভাবে হিন্দু জনতা সন্দেহভাজন মুসলিম গরু পাচারকারীদের মারধর শুরু করে, সম্প্রদায়ের মালিকানাধীন ব্যবসা বর্জনের দাবি ওঠে জোরেশোরে।
নারী মুসলিম সাংবাদিক এবং সমাজকর্মীরা ট্রোলড হয়েছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। প্রচার হতে থাকে মুসলিম নারীদের ভুয়া অনলাইন নিলামে বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে। পার্টিজান নিউজ নেটওয়ার্কগুলো তীক্ষ্ণ টকশো চলাকালীন অংশগ্রহণকারীদের চরম অবস্থান নিতে উত্তেজিত করে আগুনে ইন্ধনও যোগ করেছে।
মোদি সরকার এসব ঘটনায় নীরব ছিল। এতে প্রশ্রয় পেতে থাকে উদ্রবাদীরা। সরকারের এই অবস্থান অনলাইনে মুসলিম-বিদ্বেষ ছড়াতে সাধারণ হিন্দুদের উৎসাহিত করেছে বলে মনে করা হয়।
দুবাইয়ের একটি হোটেলের জনপ্রিয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শেফকে ইসলামবিরোধী টুইটের জন্য বরখাস্ত করা হয়েছিল ২০১৮ সালে। দুবাইয়ে বাসকারী ভারতীয়রা যখন ২০২০ সালে তাবলিগ- জামাতবিরোধী টুইট করা শুরু করে, তখন ক্ষমতাসীন রাজপরিবারের সঙ্গে উষ্ণ সম্পর্কে থাকা একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী টুইটে জানিয়েছিলেন, ‘কেউ যদি সংযুক্ত আরব আমিরাতে প্রকাশ্যে বর্ণবাদী এবং বৈষম্যমূলক মন্তব্য করে, তবে তাকে জরিমানা করা হবে এবং দেশ ছাড়তে হবে।’
মহানবীকে নিয়ে সাম্প্রতিক আপত্তিকর মন্তব্যের পর সৌদি আরব, ইরান, কাতারসহ ১৫টি দেশ প্রতিবাদ জানিয়েছে। ভারতের সাবেক কূটনীতিক তালমিজ আহমেদ বলেন, ‘নবীর বিরুদ্ধে অবমাননাকর মন্তব্য করা স্পষ্টতই “লাল রেখা অতিক্রম করা”।
নরেন্দ্র মোদি ওই মন্তব্যের জেরে দলের মুখপাত্রকে বরখাস্ত করতে বাধ্য হয়েছেন। ধর্মগুরু প্রতাপ ভানু মেহতা বলেন, ‘দায়মুক্তির সঙ্গে সংখ্যালঘুদের টার্গেট করা এবং সরকারি অনুমোদন দিয়ে ঘৃণাত্মক বক্তৃতায় ভারতের বৈশ্বিক খ্যাতিতে প্রভাব ফেলবে।’
তবে ব্যক্তিগতভাবে অনেক বিজেপি নেতা বিশ্বাস করেন, ক্ষোভ শিগগিরই কমে যাবে এবং যথারীতি বাণিজ্য হবে।
উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের পুরোনো ও গভীর সম্পর্ক। প্রায় ৮ দশমিক ৫ মিলিয়ন ভারতীয় উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) অন্তর্গত ছয়টি উপসাগরীয় দেশে কাজ করে, যা পাকিস্তানিদের দ্বিগুণেরও বেশি।
ভারতীয়রা এই প্রতিটি দেশে বড় পরিসরে প্রবাসী সম্প্রদায় গঠন করে। তারা প্রতি বছর ৩৫ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স পাঠায়। যার ওপর নির্ভর করে ৪০ মিলিয়ন পরিবার।
ভারতের দরিদ্রতম রাজ্যগুলোর মধ্যে একটি বিজেপি শাসিত উত্তর প্রদেশ। ভারত এবং জিসিসি দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য প্রায় ৮৭ বিলিয়ন ডলারের। সৌদি আরবের পরই ভারতে তেল রপ্তানিকারক দেশ ইরাক। ভারতের প্রাকৃতিক গ্যাসের ৪০ শতাংশের বেশি আসে কাতার থেকে।
প্রধানমন্ত্রী মোদি নিজেও উপসাগরীয় দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ককে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকেন। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের অধ্যাপক শ্রীনাথ রাঘবন বলেন, ‘শক্তি নিরাপত্তা, অভিবাসী হিসেবে মানুষের কর্মসংস্থান এবং তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ভিত্তিতে পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ভারতের দারুণ সম্পর্ক বিদ্যমান।’
তবে আত্মতুষ্ট হতে পারে না ভারত। বিষয়গুলোকে স্বাভাবিকভাবেও নিতে পারে না। সাবেক ভারতীয় কূটনীতিক ও ‘ওয়েস্ট এশিয়া অ্যাট ওয়ার’ বইয়ের লেখক তালমিজ আহমেদ বলেন, ‘ ভারতীয়রা এই দেশগুলোয় একটি অরাজনৈতিক, আইন মান্যকারী এবং প্রযুক্তিগতভাবে দক্ষ ব্যক্তির মাধ্যমে খ্যাতি তৈরি করেছে। যদি এই ধরনের আক্রমণাত্মক কথা চলতে থাকে, তবে উপসাগরীয় নিয়োগকর্তারা নিঃশব্দে ভারতীয়দের নিয়োগ করা থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করতে পারে।’
‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হারনাই জেলায় শুক্রবার শ্রমিক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির কোয়েটা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা শাহজাদ জাহরি এএফপিকে জানান, হারনাই জেলায় এ বোমা বিস্ফোরণে ১০ খনিশ্রমিক নিহত হন।
একই জেলার আরেক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সেলিম তারিন এএফপিকে বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজের জায়গা থেকে বাজারে কেনাকাটার জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তাদের গাড়িটি আক্রমণের শিকার হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ছিল একটি আইইডি বিস্ফোরণ।আমরা হামলার তদন্ত করছি।’
হারনাই দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জেলা।
কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে বেলুচ লিবারেশন আর্মি প্রায়ই অন্যান্য প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বা পাকিস্তানিদের, বিশেষ করে বেলুচিস্তানের পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক হামলার দাবি করে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সেনাবাহিনীর আলাদা তিন অভিযানে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রদেশের লাক্কি মারওয়াত, কারাক ও খাইবার জেলায় অভিযান চালায়।
এতে আরও বিবৃতিতে বলা হয়, লাক্কি মারওয়াতে অভিযানে ১৮ সন্ত্রাসী নিহত ও ছয়জন আহত হন। কারাক জেলায় আরও ৮ সন্ত্রাসী নিহত হন।
সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তাদের তৃতীয় অভিযানটিতে গোষ্ঠীটির নেতাসহ ৪ সন্ত্রাসী নিহত ও দুজন আহত হন।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
এলাকায় অন্য সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নির্মূল করতে একটি ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালানো হচ্ছে।
সেনাবাহিনী বলেছে, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিপদ নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
আরও পড়ুন:ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে।
তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
পুলিশ জানায়, একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ওই নারী। বৃহস্পতিবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
বাহিনীটি আরও জানায়, শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা একটি নির্জন এলাকায় নারীর মৃতদেহ দেখতে পান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন।
কর্ণাটক থেকে পিটিআই শনিবার এ খবর জানায়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রাণ হারানো নারী বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি ছয় বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন।
তার কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তবে তার স্বামীর বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে এবং তিনি মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
ওই নারী বৃহস্পতিবার তার সহকর্মীকে বলেছিলেন, তার কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে এবং দেরি হতে পারে। তাই সহকর্মীকে বলেন তাকে ছাড়াই চলে যেতে। তবে বাড়ি ফিরতে নারীর দেরি হলে তার স্বামী রামমূর্তি নগর থানায় অভিযোগ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী স্বেচ্ছায় কোনো নির্জন জায়গায় গিয়েছিলেন পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার মাথায় গুরুতর জখমের চিহ্ন ছিল।
তথ্য পাওয়ার পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পূর্ব বিভাগ পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) দেবরাজ।
আরও পড়ুন:ভারতের মধ্যাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১২ মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
নয়াদিল্লি মাওবাদীদের দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা দমনে পদক্ষেপ জোরদার করেছে। শুক্রবার পুলিশ এই খবর জানায়।
কয়েক দশকের মাওবাদী সহিংসতায় ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন।
বিদ্রোহীদের দাবি, তারা প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সহিংসতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছত্রিশগড়ের বিজাপুর জেলার বন-জঙ্গলে বৃহস্পতিবার এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পি. এএফপিকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১২ মাওবাদী নিহত হয়েছে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই শতাধিক মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সরকার আশা করছে ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্রোহীদের দমন করা সম্ভব হবে।
বিদ্রোহীরা গত কয়েক বছরে সরকারি সেনাদের টার্গেট করে বেশ কিছু প্রাণঘাতী হামলা চালায়।
চলতি মাসের গোডার দিকে রাস্তায় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৯ ভারতীয় সেনা নিহত হন।
আরও পড়ুন:ভারতের মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় অনুপ্রবেশকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সাইফ আলী খান।
স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রাত আড়াইটায় একজন অনুপ্রবেশকারী বাসায় ঢুকে সাইফ আলীকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করে। বর্তমানে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার চলছে।
হাসপাতালকর্মীরা বলছেন, সাইফ আলী খান এখন বিপদমুক্ত। রাতে তার নিউরো সার্জারি করা হয়েছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি চলছে।
এ ঘটনায় বান্দ্রা থানায় একটি এজাহার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, সাইফ আলী যখন বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন একজন অনুপ্রবেশকারী চুপিসারে তার বাসায় ঢোকেন। এ সময়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সাইফের হাতাহাতি হয়।
এরপর সাইফ আলী খানকে ছয়বারের বেশি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান অনুপ্রবেশকারী।
এক বিবৃতিতে লীলাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয়টি আঘাতের মধ্যে দুটি তার মেরুদণ্ডের কাছে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
এরই মধ্যে তার বাসার তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত করছে মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
এক বিবৃতিতে সাংবাদিক ও ভক্তদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে সাইফ আলী খান টিম।
এতে বলা হয়, ‘এটি এখন পুলিশের কাজ। আমরা আপনাদের হালানাগাদ তথ্য জানিয়ে দেব।’
কারিনা কাপুর খান টিমও একই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো আছেন।’
আরও পড়ুন:নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই শনিবার বলেছেন, তিনি তার জন্মভূমি পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে ‘অভিভূত’ ও ‘আনন্দিত’।
ইসলামি বিশ্বে নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।
ইসলামাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ২০১২ সালে স্কুলছাত্রী মালালাকে পাকিস্তানি তালেবানরা গুলি করে এবং এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। বিদেশে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকবার তিনি দেশে আসেন।
রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলনে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত, অভিভূত ও আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুই দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন শনিবার সকালে। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একত্রিত হবেন।
স্থানীয় সময় রোববার ইউসুফজাইয়ের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এক্সে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি সকল মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকার রক্ষার বিষয়ে কথা বলব। আফগান নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কেন তালেবান নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে, সে ব্যাপারেও বলব।'
দেশটির শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তালেবান ইসলামাবাদের এ আমন্ত্রণে কোনো সাড়া দেয়নি।
আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে কঠোরভাবে ইসলামী আইন আরোপ করেছে। জাতিসংঘ একে ‘লিঙ্গ বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান তীব্র শিক্ষা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। দেশটিতে দুই কোটি ৬০ লাখের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। তাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকার একটি স্কুল বাসে ২০১২ সালে পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের হামলার পর ইউসুফজাই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
পরবর্তী সময়ে তিনি নারী শিক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য