আইভি লীগ প্রতিষ্ঠান প্রিন্সটন এবং ব্রাউনসহ ১শ’ টিরও বেশি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ মঙ্গলবার শিক্ষা ব্যবস্থায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের’ তীব্র নিন্দা জানিয়ে একটি যৌথ চিঠি দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনকে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করার একদিন পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হল, যা তহবিল হ্রাস এবং বহিরাগত রাজনৈতিক তত্ত্বাবধান আরোপের হুমকি দিয়েছে।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, ‘আমেরিকান উচ্চশিক্ষাকে বিপন্ন করে তোলা সরকারের নজিরবিহীন বাড়াবাড়ি এবং রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে আমরা এক সুরে কথা বলছি।’
যৌথ চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমরা গঠনমূলক সংস্কারের জন্য উন্মুক্ত এবং বৈধ সরকারি তত্ত্বাবধানের বিরোধিতা করি না। তবে, আমাদের অবশ্যই অযৌক্তিক সরকারি হস্তক্ষেপের বিরোধিতা করতে হবে।’ এতে আরো বলা হয়েছে, ‘আমাদের অবশ্যই জনসাধারণের গবেষণা তহবিলের জোরপূর্বক ব্যবহার প্রত্যাখ্যান করতে হবে।’
ট্রাম্প বেশ কয়েকটি নামিদামি বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্যাম্পাসে ইহুদি-বিদ্বেষ সহ্য করার দাবির বিরুদ্ধে লড়াই করার চেষ্টা করেছেন, যা তাদের বাজেট, কর-মুক্ত মর্যাদা এবং বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য হুমকিস্বরূপ।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি শীর্ষ প্রতিষ্ঠান ট্রাম্প প্রশাসনের দাবির কাছে নতি স্বীকার করেছে, যারা দাবি করে শিক্ষিত অভিজাতরা খুব বেশি বামপন্থী।
হার্ভার্ডের ক্ষেত্রে হোয়াইট হাউস দেশের প্রাচীনতম এবং ধনী বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ কর্মকাণ্ডের ওপর নজিরবিহীন সরকারি নিয়ন্ত্রণ চাইছে।
পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুতে ভ্যাটিকানসহ সারাবিশ্বেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। এক বিবৃতিতে ভ্যাটিকান জানায়, ২১ এপ্রিল ইস্টার সোমবার ৮৮ বছর বয়সে ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্টায় নিজ বাসভবনে মারা যান তিনি। ক্যাথলিক খ্রিষ্টানদের প্রধান এই ধর্মগুরুর মৃত্যুর খবর সোমবার বিশ্ববাসীকে সর্বপ্রথম যিনি দিয়েছিলেন তিনি হলেন কেভিন ফ্যারেল। তিনি একজন কার্ডিনাল, যার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তিনি এখন থেকে ভ্যাটিকানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান।
সাধারণত পোপের খুবই ঘনিষ্ঠ মহলের সদস্য হন কার্ডিনালরা। পৃথিবীজুড়ে খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের চার্চগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে কার্ডিনালরা পোপকে সহায়তা করেন। আইরিশ-আমেরিকান কার্ডিনাল কেভিন ফ্যারেল ঘোষণা করেন, পোপ তার প্রভুর ঘরে ফিরে গেছেন। এই ঘোষণার পর তিনি ‘ক্যামেরলেনগো’ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নতুন পোপ নির্বাচিত হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনিই এখন থেকে ভ্যাটিকানের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান। এই দায়িত্বের জন্য ২০১৯ সালেই তাকে মনোনীত করেছিলেন পোপ ফ্রান্সিস।
পোপের মৃত্যু হলে অথবা কোনো পোপ পদত্যাগ করলে পরবর্তী উত্তরসূরি নির্বাচনের আগ পর্যন্ত যে সময় সেটা ‘অ্যাপোস্টোলিকা সেডেস ভ্যাকান্স’ নামে পরিচিত। এখন থেকে কার্ডিনাল কেভিন ফ্যারেল ওই শূন্য সময়টুকুর দায়িত্বে থাকবেন।
ধর্মযাজক থেকে ভ্যাটিকানের প্রধান
শুধু প্রশাসনিক দায়িত্বের ক্ষেত্রে নয়, পোপ ফ্রান্সিসকে শ্রদ্ধা জানানোর শত শত বছরের প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতার নেতৃত্বেও থাকবেন কেভিন ফ্যারেল। ১৯৪৭ সালে ডাবলিনে জন্ম নেওয়া কেভিন ফ্যারেল পড়াশোনা করেছেন স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব সালামাঙ্কা ও রোমের পন্টিফিক্যাল গ্রেগরিয়ান ইউনিভার্সিটিতে। তিনি কর্মজীবনে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে কাজ করেছেন। মেক্সিকোর ইউনিভার্সিটি অব মন্টেরেতে চ্যাপলেইন বা ধর্মগুরু হিসেবে কাজ করেছেন তিনি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের ম্যারিল্যান্ডের বেথেসডার একটি প্যারিশেও (গির্জা ও যাজক সংক্রান্ত দেশের বিভাগ বিশেষ) তিনি কাজ করেছেন।
৭৭ বছর বয়সি কার্ডিনাল ফ্যারেল তার জীবনের ৩০ বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গির্জায় কাজ করে। ২০০৭ সালে তিনি ডালাসের বিশপ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এরপর ২০১৬ সালে পোপ ফ্রান্সিস তাকে ভ্যাটিকানের প্যাস্টোরালেয়ার বিষয়ক নতুন একটি বিভাগ পরিচালনার দায়িত্ব দেন এবং পাশাপাশি তিনি তাকে কার্ডিনালের মর্যাদায়ও উন্নীত করেন।
‘ক্যামেরলেনগো’ হিসেবে নির্বাচিত করার কয়েক বছর পর ২০২৩ সালে কেভিন ফ্যারেলকে ভ্যাটিকান সিটি স্টেটের সুপ্রিম কোর্টের প্রেসিডেন্ট এবং কমিশন ফর কনফিডেনশিয়াল ম্যাটারসের প্রধান হিসেবেও নিয়োগ দেওয়া হয়।
এখন তার দায়িত্ব কী?
এখন ক্যামেরলেনগো হিসেবে তার মূল দায়িত্ব পরবর্তী পোপ নির্বাচনের জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করা। তবে এই পদ থেকেও পোপ নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ আছে, যদিও তা বিরল। এর আগে ইতিহাসে মাত্র দুজন ক্যামেরলেনগো পোপ হয়েছেন। তাদের একজন হলেন গিওআচিনো পেচি (পোপ লিও ১৩) যিনি ১৮৭৮ সালে ক্যামেরলেনগো পোপ হয়েছিলেন। দ্বিতীয়জন হন ১৯৩৯ সালে। তার নাম ইউগেনিও পাচেলি (পোপ পায়াস ১২)।
কার্ডিনাল ফ্যারেলই আনুষ্ঠানিকভাবে পোপ ফ্রান্সিসের মৃত্যুর সনদে স্বাক্ষর করবেন। তারপর তিনিই পোপ ফ্রান্সিসের মরদেহ কফিনে শায়িত করবেন। ধারণা করা হচ্ছে, স্থানীয় সময় বুধবার সকালে শোকযাত্রার মাধ্যমে পোপের মরদেহ ডোমাস সান্তা মার্তা চ্যাপেল থেকে সেন্ট পিটার্স ব্যাসিলিকায় নিয়ে যাওয়া হবে। এই শোকযাত্রার নেতৃত্বেও থাকবেন কার্ডিনাল কেভিন ফ্যারেল।
ফিলিস্তিনের গাজায় দীর্ঘদিন ধরে যুদ্ধ চলছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে চলমান এই যুদ্ধ থামাতে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় একটি নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এদিকে ইসরায়েলি হামলায় আরও ২৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। খবর বিবিসি, আল জাজিরা।
বিবিসি বলছে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ অবসানে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতাকারীরা নতুন একটি যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছে। ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে এ কথা বলেছেন।
ওই কর্মকর্তার তথ্যমতে, পাঁচ থেকে সাত বছর স্থায়ী হবে, এমন একটি যুদ্ধবিরতির বিষয়ে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রস্তাবে ইসরায়েলি কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তির বিনিময়ে সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তি, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি এবং গাজা থেকে পুরোপুরি ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। আলোচনার জন্য হামাসের জ্যেষ্ঠ নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলের কায়রো সফরে যাওয়ার কথা।
এই পরিকল্পনায় সব ইসরায়েলি জিম্মির মুক্তির বিনিময়ে ইসরায়েলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের ছেড়ে দেওয়া, যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক অবসান এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের সেনা সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার জন্য হামাসের একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল ইতোমধ্যে কায়রোতে পৌঁছেছে।
গাজা উপত্যকায় হামলায় খান ইউনিস, জাবালিয়া, বেইত লাহিয়া ও গাজা শহর সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই কায়রোতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন হামাসের রাজনৈতিক কাউন্সিল প্রধান মোহাম্মদ দারবিশ ও মুখ্য আলোচক খলিল আল-হাইয়া। এর আগে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে প্রস্তাব ছিল, হামাসকে নিরস্ত্র করার শর্তে ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি। যদিও হামাস তা প্রত্যাখ্যান করে।
২০০৭ সাল থেকে হামাস গাজার শাসনক্ষমতায় থাকলেও ফিলিস্তিনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামাস এখন পশ্চিম তীরভিত্তিক ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ বা নতুন কোনো প্রশাসন এর নিকট গাজা হস্তান্তরে রাজি। তবে নেতানিয়াহু ইতোমধ্যে এই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে হামলা চালিয়ে প্রায় ১২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যায়। এরপর ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান চালায়, যাতে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি।
প্রাণ গেল আরও ২৯ ফিলিস্তিনির
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর বিমান ও স্থল অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রতিদিনের মতো সোমবারও ভয়াবহ হামলায় প্রাণ গেছে আরও ২৯ জন ফিলিস্তিনির। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার বরাতে জানা যায়, ইসরায়েলি বাহিনী গাজাজুড়ে নির্বিচারে অভিযান চালিয়ে অন্তত ২৯ জনকে হত্যা করেছে। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া সাধারণ মানুষও।
গাজা শহরের একটি তাঁবু ক্যাম্পে চালানো হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার চিকিৎসা কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, এই হামলা এমন সময় চালানো হয়েছে, যখন তাঁবুগুলোতে আশ্রয় নেওয়া মানুষজন দিনের খাবার সংগ্রহ বা বিশ্রামে ছিলেন।
এদিকে গাজার বর্তমান অবস্থা যেন এক বন্দিশিবিরে রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী উপত্যকার প্রধান সংযোগ সড়কগুলো বন্ধ করে ফেলার পাশাপাশি গাজাকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলেছে। জানা গেছে, গাজার মোট ভূখণ্ডের ৬৯ শতাংশকেই ‘নো-গো জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছে দখলদার ইসরায়েল, যেখানে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা প্রবেশ তো দূরের কথা, নড়াচড়াও করতে পারছে না।
এ ছাড়া গাজা ছাড়াও অধিকৃত পশ্চিম তীরেও ইসরায়েলি আগ্রাসন চলছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে আরও তিন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনারা। সংঘাতময় এই প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলি গণমাধ্যম জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর সরকার যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তিপ্রাপ্ত ফিলিস্তিনি বন্দিদের পুনরায় গ্রেপ্তারের পরিকল্পনা করছে, যেন হামাসের ওপর চাপ আরও বাড়ানো যায়।
এদিকে লোহিত সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিমানবাহী রণতরীতে ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের হামলার দাবি ঘিরে উত্তেজনা আরও বেড়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হুতিদের বিরুদ্ধে ‘শক্তিশালী প্রতিক্রিয়ার’ হুমকি দিয়েছেন।
গাজার দুঃসহ পরিস্থিতির মধ্যেও মানবিক সম্পর্কের এক আবেগঘন চিত্র উঠে এসেছে। সম্প্রতি প্রয়াত খ্রিষ্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা পোপ ফ্রান্সিসের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও শোক জানিয়েছেন গাজার ফিলিস্তিনিরা। পোপ চলমান যুদ্ধে গাজার মানুষের পাশে থেকে ধারাবাহিকভাবে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে সমবেদনা জানিয়ে আসছিলেন।
প্রতিদিন যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার খোঁজ নিতেন পোপ ফ্রান্সিস
গাজার সংঘাত নিয়ে একাধিকবার মুখ খুলেছেন ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিস। একইসঙ্গে গাজা উপত্যকায় বসবাসকারী ফিলিস্তিনি খ্রিষ্টানদের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার গাজার ল্যাটিন-রাইট চার্চ অব দ্য হোলি ফ্যামিলির যাজক ফাদার গ্যাব্রিয়েল রোমানেলি বিবিসিকে এ কথা জানান। গ্যাব্রিয়েল রোমানেলি জানান, পোপ তাদের নিরাপত্তার খোঁজখবর নিতে দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে প্রতিদিন ফোন করতেন। এমনকি তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় কিছু আরবি বাক্যও শিখেছিলেন তিনি।
রোমানেলি জানান, সর্বশেষ শনিবার পোপের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। পোপ তাদের ফোন করে আশীর্বাদ দিয়েছেন এবং তার জন্য প্রার্থনা করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। হোলি ফ্যামিলির যাজক আরও বলেন, ‘এখানে জীবনযাপন করা সহজ নয়। এখানকার একজন যাজক হিসেবে পোপের ঘনিষ্ঠতা অনুভব করা আমাদের জন্য ঈশ্বরের বিশেষ দয়ার একটি নিদর্শন ছিল। চার্চে ঈশ্বরের সেবা করার জন্য এটি আমাদের উৎসাহ জুগিয়েছে।’
পোপ ফ্রান্সিস মারা যাওয়ার আগে তার শেষ বার্তায় গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেছিলেন। ইস্টার সানডের ওই বার্তা উচ্চ স্বরে পড়েছিলেন তার সহযোগী।
ইস্টার সানডে উপলক্ষে যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনে হামলার অভিযোগ উঠেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি অভিযোগ করেছেন, ভ্লাদিমির পুতিন দুই হাজারের বেশিবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছেন। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, রুশ বাহিনী দুই হাজারের বেশি বার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। তবে সোমবার ইউক্রেনে কোনো ধরনের এয়ার অ্যালার্ট জারি করা হয়নি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেন, রোববার দিনের শুরু থেকেই রুশ বাহিনী দুই হাজারের বেশিবার যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করেছে। অন্যদিকে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তারা ইউক্রেনের হামলা প্রতিহত করেছে এবং কিয়েভের বিরুদ্ধে শত শত ড্রোন হামলা ও গোলা ছোড়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। যুদ্ধবিরতির মধ্যেও পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনা ঘটছে এবং দেশ দুটি একে অপরকে দুষছে। তবে যুদ্ধরত উভয়পক্ষের এসব দাবির সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
পুতিন সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ফ্রন্টলাইন বরাবর ইস্টার সানডে উপলক্ষে এক দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির আদেশ দিয়েছিলেন। গত তিন বছরের বেশি সময় ধরে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ চলছে।
অপরদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, তিনি আশা করছেন যে চলতি সপ্তাহেই রাশিয়া ও ইউক্রেন একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে। তবে এর বিস্তারিত কোনো তথ্য তিনি দেননি।
রাশিয়া ২০২২ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে পূর্ণ সামরিক আগ্রাসন শুরু করে। দেশটির অন্তত ২০ শতাংশ ভূমি এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। এর মধ্যে ২০১৪ সালে রাশিয়ার দখল করা ক্রিমিয়ার দক্ষিণাঞ্চলও রয়েছে। ধারণা করা হয়, ২০২২ সালে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে লাখ লাখ মানুষ হয় মারা গেছে বা আহত হয়েছে। এদের মধ্যে একটি বড় অংশই সৈন্য।
গত মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের একটি পূর্ণাঙ্গ ও নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবের জবাবে মস্কো বেশ কিছু শর্ত আরোপ করে। শনিবার পুতিন মস্কোর স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৬টা থেকে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেন। কিয়েভও এটা মেনে চলার কথা বলেছিল।
পুতিন এক ঘোষণায় বলেন, এই সময়ের জন্য আমি সব সামরিক কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ দিচ্ছি। তিনি বলেন, আমরা মনে করি ইউক্রেনও আমাদের পদক্ষেপ অনুসরণ করবে। একই সময়ে আমাদের সৈন্যরা অবশ্যই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন ও উসকানি প্রতিহত করতে প্রস্তুত থাকবে।
তবে জেলেনস্কি রোববার রাতে বলেন, যুদ্ধবিরতির এই সময়ের মধ্যে রাশিয়া ১ হাজার ৮৮২ বার গোলাবর্ষণ করেছে এবং ৮১২টি ঘটনায় ভারী অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেছে। তিনি বলেন, দখল করা পোকরোভস্ক শহরের কাছে ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে বেশি গোলাবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। শহরটি দোনেৎস্ক অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ একটি হাব যেখান থেকে রসদ সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ইউক্রেনের পদক্ষেপ ছিল এমন যে আমরা নীরবতার জবাব নীরবতা দিয়ে দিয়েছি। আমাদের হামলা ছিল রাশিয়ার হামলা থেকে সুরক্ষার জন্য। এর আগে তিনি সেদিন কোনো রেড অ্যালার্ট না থাকার কথা জানিয়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি পুতিনের ঘোষণাকে অর্থহীন বলেও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, এই ইস্টারে এটা পরিষ্কার হয়েছে, যুদ্ধের একমাত্র উৎস ও কারণ হলো রাশিয়া। তবে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলছে, তাদের সৈন্যরা যুদ্ধবিরতি কঠোরভাবে মেনে চলেছে।
যদিও রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাকারোভা ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধবিরতির সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহকৃত হিমারাস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন।
যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগেই ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেছেন, সময় বাড়ানোর কোনো নির্দেশ পুতিন দেননি। এর আগে রাশিয়া ইউক্রেন আলোচনার মধ্যস্থতা থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প সরে দাঁড়ানোর কথা বলার পর এই যুদ্ধবিরতির ঘোষণা দিয়েছিলেন পুতিন।
রোববার ওয়াশিংটন আবারও একটি সমন্বিত ও পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধবিরতির কথা বলেছে। তবে ইস্টারের প্রার্থনায় কিয়েভে ও রাশিয়ার দখলীকৃত দোনেৎস্কে যারা অংশ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে পুতিনের যুদ্ধবিরতি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
ওলেনা পপরিচ নামের এক আইনজীবী রয়টার্সকে বলেন, আমি মনে করি না তার (পুতিন) মধ্যে মানবতা বলতে কিছু আছে। জেলেনস্কিও যুদ্ধবিরতিতে কতটা অনড় থাকবেন, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন দোনেৎস্কের অধিবাসী ওই আইনজীবী।
রোববার ব্রিটিশ সরকার পুতিনের যুদ্ধবিরতিকে ‘এক দিনের নাটক’ হিসেবে অভিহিত করেছে। তারা বলেছে, এ সময়েও সেখানে নিরীহ মানুষের আহত বা নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, পুতিন সত্যিকারভাবেই শান্তির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এমন কোনো প্রমাণ তারা পাননি। যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করছে; কিন্তু তাতে বড় ধরনের কোনো অগ্রগতি আসেনি। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও বলেছেন, এটি হলে কয়েক দিনের মধ্যেই হতে হবে।
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বর্বরতা অব্যাহত রয়েছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলায় এক দিনে অন্তত আরও ৩৩ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন আরও অনেকে। এর ফলে অবরুদ্ধ এই উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৫১ হাজার ২০০ ছাড়িয়েছে। আল-জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে দিনভর হামলা চালিয়ে আরও ৩৩ জন ফিলিস্তিনিকে এবং লেবাননে আরও দুজনকে হত্যা করেছে। এর মধ্যে গাজার আল-মাওয়াসির তথাকথিত ‘নিরাপদ অঞ্চলেও’ হামলা করেছে ইসরায়েল। গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের গণহত্যামূলক আগ্রাসনে ভূখণ্ডটিতে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫১ হাজার ২০১ জনে পৌঁছেছে বলে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি আক্রমণে আহত হওয়া আরও ১৪৫ জনকে গাজার বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। এর ফলে সংঘাতের শুরু থেকে আহতের সংখ্যা বেড়ে ১ লাখ ১৬ হাজার ৮৬৯ জনে পৌঁছেছে। অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় পড়ে থাকলেও উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারেননি।
দীর্ঘ ১৫ মাস সামরিক অভিযানের পর যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ইসরায়েল। তারপর প্রায় দুই মাস গাজায় কম-বেশি শান্তি বজায় ছিল; কিন্তু গাজা থেকে সেনা প্রত্যাহারের প্রশ্নে হামাসের মতানৈক্যকে কেন্দ্র করে মার্চ মাসের তৃতীয় গত সপ্তাহ থেকে ফের গাজায় বিমান হামলা শুরু করে ইসরায়েল।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত ১৮ মার্চ থেকে গাজায় নতুন করে শুরু হওয়া ইসরায়েলি বিমান হামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮২৭ ফিলিস্তিনি নিহত এবং আরও ৪ হাজার ৮২৮ জন আহত হয়েছেন। ইসরায়েলের বর্বর এই হামলা চলতি বছরের জানুয়ারিতে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে দিয়েছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলের বর্বর আক্রমণের কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর আগে গত বছরের নভেম্বরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এবং তার সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে। অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে আগ্রাসনের জন্য আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার মামলার মুখোমুখিও হয়েছে ইসরায়েল।
ভয়াবহ মানবিক সংকটে গাজাবাসী
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি আগ্রাসন ও অবরোধে দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে মানবিক সংকট। এখন ক্ষুধাই হয়ে উঠেছে সবচেয়ে ‘বড় অস্ত্র’। ইসরায়েলের বোমাবর্ষণের চেয়েও বেশি আতঙ্কের কারণ হয়ে উঠেছে অনাহার। ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে ফিলিস্তিনিদের এমনই দুঃসহ জীবনের করুণ চিত্র উঠে এসেছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর ঘোষণার পর ২ মার্চ থেকে গাজায় সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিষিদ্ধ। এর ফলে খাদ্য, ওষুধ, পানি ও বিদ্যুৎহীন অবস্থায় লাখো মানুষ মৃত্যুর মুখে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধকালীন সময়ে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত। ফলে বেঁচে থাকার ন্যূনতম জিনিসও এখন অনেকের নাগালের বাইরে।
অক্সফামের জরিপ বলছে, গাজায় শিশুদের একটি বড় অংশ দিনে এক বেলারও কম খাবার পাচ্ছে। অনেক বাবা-মা নিজের খাবার ত্যাগ করে সন্তানদের খাওয়াচ্ছেন এবং নিজেরা অভুক্ত থাকছেন।
যু্দ্ধবিরতির সময় যে খাদ্য সহায়তা এসেছিল তা প্রায় শেষ। উদভ্রান্তের মতো ত্রাণ দেওয়া তাঁবুগুলোতে খালি হাঁড়ি নিয়ে ছুটে বেড়াচ্ছেন গাজার মানুষ। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাম্প্রতিক তথ্যমতে, যুদ্ধের সময় বাজারগুলোতে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে ১ হাজার ৪০০ শতাংশ।
৪৪ বছর বয়সি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক হিকমাত আল মাসরি বলেন, ‘আমি প্রায়ই আমার নিজের খাবার থেকে ছেলেকে ভাগ দিই। এই ক্ষুধাতেই আমি মারা যাব- ধীরে ধীরে এই অনাহার আমাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দুঃখ-দুর্দশার কথা কেউ কল্পনাও করতে পারবে না, মৃত্যু আমাদের চারপাশ দিয়ে ঘিরে রেখেছে।
এদিকে গাজার হাসপাতালগুলোও চরম সংকটে। চিকিৎসাসামগ্রী ও জ্বালানি ঘাটতির কারণে অনেক সময় রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। দেইর আল-বালাহর চিকিৎসাকর্মী আমান্দে বাজেরোল জানান, বার্ন ক্লিনিকগুলোতে দিনপ্রতি ১০ জনের বেশি রোগী নেওয়া হচ্ছে না, কারণ ওষুধ শেষ হয়ে আসছে।
গত ১৮ মার্চ একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভেঙে গাজার ওপর পুনরায় হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের কাছে থাকা অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি না দিলে গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না বলে বারবার জানিয়ে আসছে ইসরায়েলের অনেক রাজনীতিক ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা।
ইসরায়েলের দাবি, নিরাপত্তার স্বার্থে গাজায় এই অবরোধ দিয়েছেন তারা, ক্ষুধাকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে না। এই দাবির বিপরীতে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর অভিযোগ, মানবিক সহায়তা ইচ্ছাকৃতভাবে আটকে রাখা হচ্ছে, যা যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজার ৭০ শতাংশ ভূখণ্ড বর্তমানে ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে। নিরাপত্তা বাফার জোন তৈরির নামে ফিলিস্তিনিদের সরিয়ে ভূমি দখলের আশঙ্কা দিনে দিনে প্রবল হচ্ছে।
‘ভুল-বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যা’
অভিযানসংক্রান্ত ভুল-বোঝাবুঝি থেকে গাজায় চিকিৎসকদের হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছে ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)। তাদের তদন্তে বিষয়টি উঠে এসেছে। গত মাসে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গাজায় ১৫ জন চিকিৎসক নিহত হন। ইসরায়েলি বাহিনী তদন্ত করে বলেছে, তাদের নির্দেশ-সংক্রান্ত ভুল-বোঝাবুঝি ও আদেশ লঙ্ঘনের কারণে এ ঘটনা ঘটে।
ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) তদন্তে এ ঘটনার বেশ কিছু ব্যর্থতার কথা উঠে এসেছে। তদন্তের সময় অসম্পূর্ণ এবং ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত ইউনিটের ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের সর্বোচ্চ ধর্মীয়গুরু পোপ ফ্রান্সিস মারা গেছেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) ভ্যাটিকানের কাসা সান্তা মার্তায় নিজ বাসভবনে তার মৃত্যু হয়েছে। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর।
মার্কিন বার্তা সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি) এমন খবর দিয়েছে। ল্যাটিন আমেরিকান ইতিহাসে তিনিই ছিলেন প্রথম কোনো পোপ। এরআগে মহাদেশটি থেকে কোনো পোপ নির্বাচিত হননি। যাপিত জীবনে বিনয়ের জন্য বিশ্বজুড়ে পরিচিত ছিলেন তিনি। দরিদ্রদের নিয়ে তার উদ্বেগ ও পুঁজিবাদের সমালোচনায় মুখর ছিলেন তিনি। এছাড়া বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়েও তাকে সরব থাকতে দেখা গেছে।
কার্ডিনাল কেভিন ফেরেল তার মৃত্যুর ঘোষণা দিয়েছেন। এরপর রোমের গির্জাগুলোতে ঘণ্টাধ্বনি বাজানো হয়েছে। কেভিন ফেরেল বলেন, ‘আজ (রবিবার) সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে স্বর্গে গমন করেছেন রোমের বিশপ। প্রভু ও তার গির্জার জন্য নিজের পুরো জীবনকে তিনি উৎসর্গ করেছিলেন।’
শ্বাসপ্রশ্বাসে সমস্যা দেখা দেওয়ায় অসুস্থ হয়ে গেল ১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুস রোগে আক্রান্ত ছিলেন পোপ ফ্রান্সিস। তরুণ বয়সে তার ফুসফুসের একটি অংশ কেটে ফেলতে হয়েছিল।
১৪ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ৩৮ দিন হাসপাতালে কাটাতে হয়েছে খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের এই ধর্মীয় গুরুকে। তার গেল এক যুগের পোপজীবনে এটা ছিল সবচেয়ে বেশি সময়ে হাসপাতালে থাকা।
কিন্তু মৃত্যুর আগের দিন রবিবার ইস্টার সানডেতে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার লোককে আশীর্বাদ জানাতে তিনি সেন্ট পিটার্স চত্বরে আসেন। পোপমোবাইলে—পোপের জন্য বানানো বিশেষ গাড়ি—চড়ে হাজির হলে লোকজন তাকে দেখে উল্লাশ প্রকাশ করেন।
২০১৩ সালের ১৩ মার্চের এক বৃষ্টিভেজা রাতে দুই হাজার বছরের পুরোনো প্রতিষ্ঠানে এসে নতুন বাতাসে শ্বাস নেন আর্জেন্টিনায় জন্ম নেওয়া জর্জ মারিও বার্গোগ্লিও। এমন এক সময়ে তিনি পোপ হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিলেন, তখন প্রতিষ্ঠানটির প্রভাব ছিল অনেকটা কমতির দিকে।
২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আকস্মিক পদত্যাগ করেন পোপ এ্যামিরেটাস ষোড়শ বেনেডিক্ট। ১৪১৫ সালে ত্রয়োদশ গ্রেগরির পর প্রথম ব্যক্তি হিসেবে তিনি মৃত্যুর আগেই পোপের দায়িত্ব ছেড়েছিলেন। এরপর নতুন পোপ নির্বাচিত হয়েছিলেন ফ্রান্সিস। কিন্তু তার নেওয়া কিছু প্রগতিশীল পদক্ষেপে রক্ষণশীলদের ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে।
তাকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় ২০১৮ সালে। তখন চিলিতে ধর্মযাজকের যৌন হয়রানির ঘটনা ফাঁস হয়ে গেলে তিনি ঘটনাটি জোড়াতালি দিয়ে সুরাহা করার চেষ্টা করেন। এতে যারা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছিলেন, তারা ব্যথিত হন এবং পোপের সমালোচনা করেন।
পোপ ফ্রান্সিস ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ সফরে এসেছিলেন। এ সময় তিনি ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি উচ্চারণ করে সবার পক্ষ থেকে তাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন।
চলমান রাজনৈতিক টানাপোড়েনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে রেল সংযোগ-সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্পে প্রায় ৫ হাজার কোটি রুপির অর্থায়ন ও নির্মাণকাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে ভারত সরকার। নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণ দেখিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে দেশটির সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
জানা গেছে, বাংলাদেশকে এড়িয়ে এখন নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সেভেন সিস্টার্সকে যুক্ত করার ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে। একটি সূত্র জানিয়েছে, নেপাল ও ভুটানের মাধ্যমে সাড়ে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার কোটি রুপির সংযোগ প্রকল্পের বিষয়ে চিন্তা করছে মোদি সরকার।
এই সিদ্ধান্তে ৩টি গুরুত্বপূর্ণ চলমান প্রকল্প বন্ধ হয়ে গেছে ও ৫টি সম্ভাব্য প্রকল্পের জরিপ কার্যক্রমও স্থগিত করা হয়েছে। এসব প্রকল্প মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের মধ্যদিয়ে সংযুক্ত করার লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছিল।
বন্ধ হওয়া প্রধান প্রকল্পগুলো হচ্ছে- ১. আখাউড়া-আগরতলা সীমান্ত রেল সংযোগ প্রকল্প। এই প্রকল্পটি ভারত সরকারের প্রায় ৪০০ কোটির অনুদানে বাস্তবায়িত হচ্ছিল। ১২ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই রেলপথের মধ্যে বাংলাদেশের অংশ ৬ দশমিক ৭৮ কিলোমিটার ও ত্রিপুরার অংশ ৫ দশমিক ৪৬ কিলোমিটার। এতে ত্রিপুরা ও আসামসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সংযোগ বাড়ার কথা ছিল।
২. খুলনা-মোংলা বন্দর রেললাইন প্রকল্প। এই প্রকল্পটির মোট ব্যয় প্রায় ৩ হাজার ৩০০ কোটি রুপি, যা ভারত সরকারের কনসেশনাল লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছিল। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর মোংলা ভারতের ব্রডগেজ রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হতো।
এই প্রকল্পের আওতায় মোংলা বন্দর ও খুলনার মধ্যে ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রড গেজ রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছিল। সেইসঙ্গে এই বন্দরের একটি টার্মিনাল পরিচালনার অধিকারও থাকার কথা ছিল ভারতের।
৩. ঢাকা-টঙ্গী-জয়দেবপুর রেল সম্প্রসারণ প্রকল্প। এটি ২০২৭ সালের মধ্যে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও এখনো ৫০ শতাংশ কাজও শেষ হয়নি। ভারতীয় এক্সিম ব্যাংক থেকে ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপি অর্থ-সহায়তা দেওয়ার কথা ছিল। তবে অর্থ ছাড় ও প্রশাসনিক অনুমোদনে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া আরও ৫টি প্রকল্পে অবস্থান জরিপ কাজ চলছিল, যা এখন স্থগিত রয়েছে।
মন্তব্য