যৌনক্ষমতা বৃদ্ধির ওষুধ হিসেবে গিরগিটির তেলের পসার রয়েছে পাকিস্তানে। ভায়াগ্রা নিষিদ্ধ হওয়ায় এ তেলের ব্যবসা এখন রমরমা। বাজারের চাহিদা পূরণ করতে অকাতরে মারা হচ্ছে বিপন্ন প্রজাতির গিরগিটি। স্থানীয়ভাবে তেলটি পরিচিত ‘সান্ডার তেল’ নামে। নিউজ ও কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সভিত্তিক সাইট ভাইসের প্রতিবেদন অবলম্বনে পাকিস্তানের সান্ডার তেলের বাজার নিয়ে লিখেছেন রুবাইদ ইফতেখার।
নোংরা ফুটপাতের ওপর এক লোক ছোট একটি চুলায় প্যান চাপিয়ে কী যেন ভাজছেন। প্যানে ময়লা সোনালি রঙ্গের মিশ্রণের ওপর তিনি কোনো এক ভেষজ ছিটিয়ে দেন। সঙ্গে সঙ্গে চর্বি পোড়ার তীব্র গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশে। একপাশে পরিপাটি করে সাজানো অদ্ভুত সব উপকরণ। জাফরান, দারুচিনি এবং বিড়াল ছানার আকারের একদল গিরগিটি।
ওনার নাম মোহাম্মদ নাসির। নাসির গিরগিটির তেল বিক্রি করেন। পাকিস্তানে এ তেল পুরুষাঙ্গের উত্থানসংক্রান্ত জটিলতার চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এর ব্যবহার অনেকটা তরল ভায়াগ্রার মতো। নাসির পাঁচ বছর ধরে রাওয়ালপিন্ডির ঐতিহাসিক রাজা বাজার এলাকায় এ তেল বিক্রি করছেন। স্থানীয়ভাবে এটি ‘সান্ডার তেল’ নামে পরিচিত। ভারতীয় প্রজাতির গিরগিটির (ইন্ডিয়ান স্পাইনি টেইলড লিজার্ড বা Saara hardwickii) চর্বি ভেজে এ তেল বের করা হয়। স্থানীয় কবিরাজ ও ফুটপাথের হকাররা এটি বিক্রি করেন।
নাসির বলেন, ‘এ তেল পুরুষাঙ্গে মাখতে হয়। এতে যৌন অক্ষমতা ঠিক হয়ে যায়। সেই সঙ্গে পুরুষাঙ্গ লম্বা, মোটা ও শক্ত হয়। এটি ব্যবহারে পুরুষাঙ্গ অনেকক্ষণ উত্থিত থাকে এবং দ্রুত বীর্যপাত হয় না।’
তেল বানানোর সময় নাসিরকে ঘিরে ছিলেন উৎসুক অনেক দর্শক। কেউ কেউ মজা করছিলেন বিষয়টি নিয়ে, কেউ নোংরা মন্তব্য করছিলেন। তাদের এ আচরণের পরেও বোঝা যাচ্ছিল, বিষয়টি নিয়ে তারা বেশ আগ্রহী।
পাকিস্তানে ভায়াগ্রা নিষিদ্ধ এবং সামাজিক বিধিনিষেধের কারণে অনেকে পুরুষাঙ্গের উত্থানহীনতার চিকিৎসা নিতে ভয় পান। আর এ কারণেই এ ধরনের তেলের চাহিদা অনেক বেশি। ভায়াগ্রাকে বৈধ করার পদক্ষেপে দেশটির ধর্ম মন্ত্রণালয় বাধা দিয়েছে। তাদের ভাষ্য, এটা পাকিস্তানের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধের বিরোধী। আর এই নিষেধাজ্ঞার ফলে কবিরাজ ও বিক্রেতারা জরুরি একটি চাহিদা মেটানোর আরও ভালো সুযোগ পেয়েছেন।
পাকিস্তানে এই তেলের সরবরাহ প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকা শিকারি, বিক্রেতা ও কবিরাজদের সবাই পুরুষের এ সমস্যার ফায়দা লোটেন। পুরুষত্বহীনতা ছাড়াও পুরুষাঙ্গের আকৃতি বড় করা, উর্বরতা বৃদ্ধি ও বাতের ব্যথার জন্য এ তেল ব্যবহার করা হয়।
ইসলামাবাদের ইউরোলজিস্ট (মূত্রনালি বিশেষজ্ঞ) আসিম খান বলেন, ‘আমার রোগীদের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ এসব ওষুধের ভুল ব্যবহার করেছেন।’
যেসব গিরগিটি থেকে এই তেল সংগ্রহ করা হয়, সেগুলো বিপন্ন প্রজাতির ও ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর কনসারভেশন অফ নেচারের লাল তালিকাভুক্ত। শিকারিরা গিরগিটিগুলো ধরার পর এদের পিঠ ভেঙে দেন, যাতে তারা পালাতে না পারে। জীবন্ত অবস্থাতেই এদের নাড়িভুঁড়ি বের করে ফেলা হয় এবং চর্বি আলাদা করে চুলায় চড়ানোর জন্য প্রস্তুত করা হয়। তেলের সঙ্গে জিনসেং, শুকনো আদা, জাফরান, দারুচিনি ও ব্রাহ্মী বীজ মেশানো হয়। অনেক সময় বিপন্ন প্রজাতির কস্তুরি হরিণ থেকে আহরণ করা কস্তুরি সুগন্ধিও ব্যবহার করা হয় মিশ্রণে।
রানা ফরিদ ওয়াজিরাবাদ শহরের একজন হাকিম। যিনি তার দোকানে ১৮ বছর ধরে এই তেল বিক্রি করছেন। তার ক্লিনিকের লিফলেটে গিরগিটি, সাপ ও বিভিন্ন সরীসৃপের সাহায্যে পুরুষাঙ্গের চিকিৎসার ওপর জোর দেয়া হয়।
ফরিদ বলেন, ‘সমগ্র পাকিস্তান থেকে আমার গ্রাহক আসেন। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন ও ইংল্যান্ড থেকেও আসেন। আমার এ ওষুধের কথা তারা তাদের পাকিস্তানি আত্মীয়দের কাছ থেকে শুনেছেন।’
ওয়াজিরাবাদের বাসিন্দা হাফিজ পাঁচ বছর ধরে ফরিদের কাছ থেকে এ ওষুধ নিচ্ছেন। স্পর্শকাতর বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় হাফিজ নিজের পুরো নাম জানাতে চাননি।
তিনি বলেন, ‘এটা ব্যবহারের আগে আমি ও আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন সন্তান গ্রহণের চেষ্টা করেছি। তবে মিলনের সময় আমি বেশিক্ষণ উত্থান ধরে রাখতে পারতাম না। আমি আগেও অনেক অর্থ খরচ করেছি, লাভ হয়নি। তবে এটা কাজে দিয়েছে। আমি এখন পুত্রসন্তানের বাবা।’
তবে চিকিৎসকেরা এটা মানতে পারছেন না।
‘অলৌকিক ওষুধের’ ওপর যথেষ্ট গবেষণা না থাকায় তারা এর কার্যকারিতা ও নিরাপদ ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট সন্দিহান।
ডা. খান বলেন, ‘এখন প্রমাণভিত্তিক ওষুধের যুগ। বাজারে বিক্রির আগে কোনো ওষুধ সম্বন্ধে সঠিক গবেষণা করতে হবে। এ চিকিৎসাগুলোর সমস্যা হচ্ছে যে আমাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণ উপাত্ত নেই।
‘ধরে নিলাম, তারা ৫০০ জনকে এই তেল একটা নির্দিষ্ট সময়ে বিক্রি করেন। এক মাস পর তাদের কী হয়? তাদের কিডনি কীভাবে কাজ করে? লিভারের ওপর এর প্রভাব কী? আমরা এগুলো জানি না।’
পুরুষাঙ্গের উত্থান জটিলতার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। জৈবিক, মানসিক ও জীবন যাত্রাগত নানা কারণ রয়েছে। হরমোনে সমস্যা, দুর্বল হৃদযন্ত্র ও এক জায়গায় দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করার সঙ্গেও এর যোগ রয়েছে।
ডা. খান বলেন, ‘যতক্ষণ না আপনি সমস্যার মূল কারণ চিহ্নিত করেন, ততক্ষণ এর স্থায়ী সমাধান করা খুব কঠিন। পুরুষাঙ্গের উত্থান জটিলতা বা দ্রুত বীর্যপাতের সমস্যার তাৎক্ষণিক উপশমের জন্য কিছু ভেষজ ওষুধ ও হাতুড়ে চিকিত্সা রয়েছে। তবে এগুলো সাময়িকভাবে সমস্যার সমাধান করতে পারে। রক্ত, হরমোন ও আল্ট্রাসাউন্ড পরীক্ষা না করলে আমরা এই রোগের সঠিক চিকিত্সা করতে পারব না।’
পুরুষাঙ্গের উত্থান জটিলতা নিয়ে পাকিস্তানে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়। ২০০৩ সালে করা এক সমীক্ষায় দেশের ক্লিনিকগুলোতে পুরুষদের ৪০.৪ শতাংশ এ সমস্যার কথা জানিয়েছেন। গত বছর প্রকাশিত একটি সমীক্ষা যা করাচি শহরের রোগীদের মধ্যে করা হয়েছিল, তাতে দেখা যায়, একটি স্থানীয় হাসপাতালে ৪৫০ জন রোগীর মধ্যে এই জটিলতায় ভোগার হার ছিল ২১ শতাংশ।
এমন পরিসংখ্যানের পরেও ভায়াগ্রার মতো মূলধারার যৌনশক্তি বর্ধনকারী ওষুধের বিক্রি ঠেকাতেই বেশি জোর দিচ্ছে দেশটির গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। তবে নিষিদ্ধ এ ওষুধের বিরুদ্ধে ক্র্যাক ডাউন থাকার পরেও ভায়াগ্রা সারা দেশে অনলাইন ও স্থানীয় ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া যায়।
সরকারি এই নিষেধাজ্ঞা ও গোপনীয়তার সংস্কৃতির সুবিধা নিচ্ছে সান্ডা বা গিরগিটির তেল।
রাওয়ালপিন্ডির নৃতাত্ত্বিক আব্দুল কাদের বলেন, ‘পুরুষের যৌনতা প্রকাশ করার ক্ষেত্রে এবং বৈবাহিক সম্পর্কেও সাধারণ ধারণা হচ্ছে নারী সঙ্গীকে জয় করতে হবে। যৌনতার এমন ধারণা থেকেই পুরুষ বিশ্বাস করে, তাদের যৌনশক্তি বাড়াতে হবে।’
এ বিশ্বাস থেকেই তারা গিরগিটির তেল ব্যবহারে আগ্রহী হচ্ছেন। হাকিম ফরিদের মতে, এ তেল সব বয়সের মানুষের কাছেই আকর্ষণীয়। স্ত্রী বা সঙ্গীকে আনন্দ দেয়ার জন্য তরুণরাও এর ব্যবহার করছেন। বিয়ের আগে নিজেদের যৌনক্ষমতা নিয়ে উদ্বিগ্ন তরুণরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করেন বলে দাবি ফরিদের।
তিনি বলেন, ‘তারা যৌন সক্ষমতা নিয়ে চিন্তিত, কারণ স্বমৈথুনের সময় তাদের দ্রুত বীর্যপাত হয় এবং একজন নারীকে সন্তুষ্ট করতে পারবে কি না- সেটি ভেবে তারা ভয় পায়।’
সেক্স থেরাপিস্ট ও মনোবিদ তাহিরা রুবাবের মতে, অনেকে পৌরুষত্ব নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকেন। কারণ তারা পুরুষের যৌনক্ষমতা সম্পর্কে সমাজের প্রচলিত ধারণা দিয়ে প্রভাবিত।
রুবাব বলেন, ‘সমাজ পুরুষদের বলে, তারা যদি যৌনক্ষম না থাকে তাহলে তারা পুরুষই নয়। এ চাপ তার সঙ্গীর কাছ থেকে আসে না, আসে সমাজের কাছ থেকে। এটি শেষ পর্যন্ত পুরুষদের আত্মসতর্ক করে তোলে ও মানসিকভাবে পুরুষত্বহীনতার একটি চক্রের মধ্যে তাদের ফেলে দেয়।’
যৌনক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য হতাশা ও চাহিদা নানা সামাজিক শ্রেণি ও ভিন্ন ভিন্ন শিক্ষার স্তরেও দেখা যায়।
ডা. খান বলেন, ‘এটা শিক্ষার বিষয় নয়, সচেতনতার অভাব। একবার আমি ইসলামাবাদে এক রোগীকে পেয়েছিলাম, যিনি ২০তম গ্রেডের সিভিল অফিসার ছিলেন। হাকিম তার কাছে চিকিৎসা বাবদ ৪৫ হাজার রুপি (২২ হাজার টাকা প্রায়) নিয়েছিলেন।’
পাকিস্তানের ড্রাগ রেগুলেটরি অথরিটি ও প্রচলিত ওষুধের বিভিন্ন সংস্থা সান্ডার তেলের ওপর নজরদারি রাখার চেষ্টা করেছে। তারপরেও এর বিক্রি অনেকটাই অনিয়ন্ত্রিত। ফলে সরবরাহকারী ও পরিমাণের ওপর নির্ভর করে এর দাম একেক জায়গায় একেক রকম।
রাস্তার হকাররা ছোট এক শিশি তেল বিক্রি করেন ৩০০ রুপিতে, আর বড় বোতলের দাম ২০০০ রুপি পর্যন্ত হতে পারে। গ্রামে ও আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায়- যেখানে হাকিম ও কবিরাজ ছাড়া চিকিৎসার গতি নেই, সেখানে রোগীরা বেশি দাম দিতে বাধ্য থাকেন। একেক বোতল ১০ হাজার রুপিতেও বিক্রি হতে পারে।
এই প্রতারণার তথ্য জানার পরও ক্রেতারা দামি ওষুধ খাওয়া বা বেআইনি ভায়াগ্রার চেয়ে এই তেল পছন্দ করেন। ফুটপাথের হকারদের সঙ্গে প্রচুর দরদাম করেন ক্রেতারা, বিশেষ করে যারা কবিরাজদের কাছ থেকে নিয়মিত ওষুধ নেন।
নৃতাত্ত্বিক কাদের বলেন, ‘হাকিমদের সঙ্গে ক্রেতাদের বন্ধুত্বপূর্ণ ও অপেশাদার এক ধরনের সম্পর্ক রয়েছে। তারা এমনকি চার মাসের জন্য অর্থ ছাড়াই ওষুধ চাইতে পারে। এটি দর-কষাকষির ধারণাটিকে সহজ করে তোলে এবং গ্রাহককে আরও আগ্রহী করে তোলে।’
পাকিস্তানের মরুভূমিতে এ গিরগিটিগুলো বেশি দেখা যায়। গত কয়েক বছরে চোরাশিকারিদের বিরুদ্ধে অভিযান ও গ্রেপ্তারের হার বাড়লেও ‘পুরুষত্ব’ বাড়ানোর তেলের ব্যাপক চাহিদা মেটাতে গিরগিটি ধরে কবিরাজ ও রাস্তার বিক্রেতাদের কাছে দেদার বিক্রি করা হচ্ছে।
মাদক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও পুলিশ এ বাজার নিয়ন্ত্রণে আনতে তেমন কিছুই করছে না। পাকিস্তানের বন্য প্রাণী কর্তৃপক্ষই একমাত্র পদক্ষেপ নিয়েছে।
নাসির তেল বিক্রির পাশাপাশি তার ভাইকে নিয়ে গিরগিটি শিকার করেন। তিনি বলেন, ‘পুলিশ আমাদের কিছুই বলে না। কেবল বন্য প্রাণী বিভাগ আমাদের পেছনে লাগে। আমাকে বেশ কয়েকবার জরিমানা করেছে তারা। তবে আমার কিছু করার নেই। এটাই আমার জীবিকা।’
নাসির ভাইসকে তার ১০ হাজার রুপির জরিমানার রসিদটিও দেখিয়েছেন।
আটক গিরগিটিগুলো সারা দেশ থেকে পাঞ্জাব প্রদেশে আসে। বন্য প্রাণী কর্মকর্তারদের মতে, এ এলাকা সান্ডার তেলের ব্যবসার কেন্দ্র। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পরিচালিত পাঁচটি অভিযানে বন্য প্রাণী কর্মকর্তারা সিন্ধু প্রদেশের শিকারিদের কাছ থেকে ৯৭৮টি গিরগিটি উদ্ধার করেছেন। ২০২০ সালে সিন্ধের করাচি ও থাট্টা শহর-শহরতলি থেকে আড়াই হাজার গিরগিটি উদ্ধার করা হয়। দুর্ভাগ্যবশত একবার ধরার পর গিরগিটির পিঠ ভেঙে গেলে, বনে ছেড়ে দিলেও তাদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম।
সিন্ধ ওয়াইল্ডলাইফ ডিপার্টমেন্টের সংরক্ষক জাভেদ আহমেদ মাহের বলেন, ‘তেলের চাহিদা না কমা পর্যন্ত চোরাশিকার অব্যাহত থাকবে। চোরাশিকারিদের অধিকাংশই অত্যন্ত দরিদ্র যাযাবর সম্প্রদায়ের। অর্থনৈতিক উন্নতির জন্য তাদের আর কোনো ভালো সুযোগ দেয়া হয়নি। এ কারণেই তারা অসহায় নিরীহ প্রাণীদের ধরতে এখানে এসেছেন।’
আরও পড়ুন:‘আমি বাংলায় গান গাই’ গানের প্রখ্যাত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায় আর নেই, যার বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শনিবার তার মৃত্যু হয়।
গত সপ্তাহ থেকেই এ শিল্পী হাসপাতালটির নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ছিলেন। জানুয়ারিতে হাসপাতালে ভর্তি করানোর সময় তার নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। তাই স্নায়ু এবং নাক-কান ও গলা বিশেষজ্ঞদের পর্যবেক্ষণে চিকিৎসা হয় তার।
ফেব্রুয়ারির শুরুতে হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হলে চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে জানান, প্রতুলের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। দ্রুত তাকে কার্ডিওলজি বিভাগে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে চিকিৎসা চলাকালে শিল্পীর ফুসফুসেও সংক্রমণ দেখা দেয়। দ্রুতই শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে।
প্রতুলের গাওয়া অন্যতম জনপ্রিয় গান হলো ‘আমি বাংলায় গান গাই’, ‘ডিঙ্গা ভাসাও সাগরে সাথী রে’। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তার গানের গুণমুগ্ধ ছিলেন। মমতার তত্ত্বাবধানেই হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছিল তাকে।
বাংলাদেশের বরিশাল জেলায় ১৯৪২ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন প্রতুল মুখোপাধ্যায়। বাবা ছিলেন সরকারি স্কুলের শিক্ষক। শৈশব থেকেই গান লিখে তাতে সুর দিয়ে গাওয়ার ঝোঁক ছিল তার।
প্রতুল মুখোপাধ্যায়কে পাদপ্রদীপের আলোয় আনে তার গাওয়া ‘আমি বাংলায় গান গাই’। এ ছাড়া সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে তৈরি ‘গোঁসাইবাগানের ভূত’ ছবির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন তিনি।
তার মতে, সৃষ্টির মুহূর্তে লেখক-শিল্পীকে একা হতে হয়। তারপর সেই সৃষ্টিকে যদি মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া যায়, কেবল তাহলেই সেই একাকিত্বের সার্থকতা। সেই একক সাধনা তখন সকলের হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় হারনাই জেলায় শুক্রবার শ্রমিক বহনকারী গাড়ি লক্ষ্য করে বোমা বিস্ফোরণে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
দেশটির কোয়েটা থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি এ খবর জানায়।
জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা শাহজাদ জাহরি এএফপিকে জানান, হারনাই জেলায় এ বোমা বিস্ফোরণে ১০ খনিশ্রমিক নিহত হন।
একই জেলার আরেক জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা সেলিম তারিন এএফপিকে বলেন, ‘শ্রমিকরা কাজের জায়গা থেকে বাজারে কেনাকাটার জন্য যাচ্ছিলেন। ঠিক তখনই তাদের গাড়িটি আক্রমণের শিকার হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটি ছিল একটি আইইডি বিস্ফোরণ।আমরা হামলার তদন্ত করছি।’
হারনাই দক্ষিণ-পশ্চিম পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশের রাজধানী কোয়েটা থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত একটি জেলা।
কোনো গোষ্ঠী এ হামলার দায় স্বীকার করেনি, তবে বেলুচ লিবারেশন আর্মি প্রায়ই অন্যান্য প্রদেশের নিরাপত্তা বাহিনী বা পাকিস্তানিদের, বিশেষ করে বেলুচিস্তানের পাঞ্জাবিদের বিরুদ্ধে মারাত্মক হামলার দাবি করে।
আরও পড়ুন:পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে সেনাবাহিনীর আলাদা তিন অভিযানে অন্তত ৩০ জন নিহত হয়েছেন।
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণমাধ্যম শাখা আন্তবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) শনিবার এক বিবৃতিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে নিরাপত্তা বাহিনী প্রদেশের লাক্কি মারওয়াত, কারাক ও খাইবার জেলায় অভিযান চালায়।
এতে আরও বিবৃতিতে বলা হয়, লাক্কি মারওয়াতে অভিযানে ১৮ সন্ত্রাসী নিহত ও ছয়জন আহত হন। কারাক জেলায় আরও ৮ সন্ত্রাসী নিহত হন।
সেনাবাহিনী আরও বলেছে, তাদের তৃতীয় অভিযানটিতে গোষ্ঠীটির নেতাসহ ৪ সন্ত্রাসী নিহত ও দুজন আহত হন।
অভিযানে বিপুল পরিমাণ সমরাস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে আইএসপিআর।
এলাকায় অন্য সন্ত্রাসীদের উপস্থিতি নির্মূল করতে একটি ক্লিয়ারেন্স অপারেশন চালানো হচ্ছে।
সেনাবাহিনী বলেছে, দেশ থেকে সন্ত্রাসবাদের বিপদ নির্মূল করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী।
আরও পড়ুন:ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের বেঙ্গালুরুতে ২৮ বছর বয়সী বাংলাদেশি এক নারীর মরদেহ পাওয়া গেছে।
তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে বলে পুলিশ ধারণা করছে।
পুলিশ জানায়, একটি অ্যাপার্টমেন্টে গৃহকর্মীর কাজ করতেন ওই নারী। বৃহস্পতিবার কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে।
বাহিনীটি আরও জানায়, শুক্রবার সকালে স্থানীয়রা একটি নির্জন এলাকায় নারীর মৃতদেহ দেখতে পান। তারা তাৎক্ষণিকভাবে পুলিশকে খবর দেন।
কর্ণাটক থেকে পিটিআই শনিবার এ খবর জানায়।
এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, প্রাণ হারানো নারী বাংলাদেশি নাগরিক, যিনি ছয় বছর ধরে ভারতে বসবাস করছিলেন।
তার কোনো বৈধ কাগজপত্র ছিল না। তবে তার স্বামীর বৈধ পাসপোর্ট রয়েছে এবং তিনি মেডিক্যাল ভিসায় ভারতে প্রবেশ করেছিলেন।
ওই নারী বৃহস্পতিবার তার সহকর্মীকে বলেছিলেন, তার কিছু ব্যক্তিগত কাজ আছে এবং দেরি হতে পারে। তাই সহকর্মীকে বলেন তাকে ছাড়াই চলে যেতে। তবে বাড়ি ফিরতে নারীর দেরি হলে তার স্বামী রামমূর্তি নগর থানায় অভিযোগ করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ওই নারী স্বেচ্ছায় কোনো নির্জন জায়গায় গিয়েছিলেন পরিচিত কারও সঙ্গে দেখা করার জন্য। শুক্রবার সকালে তার মরদেহ পাওয়া যায়। তার মাথায় গুরুতর জখমের চিহ্ন ছিল।
তথ্য পাওয়ার পর ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও ডগ স্কোয়াড নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পূর্ব বিভাগ পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (ডিসিপি) দেবরাজ।
আরও পড়ুন:ভারতের মধ্যাঞ্চলে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ১২ মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হয়েছেন।
নয়াদিল্লি মাওবাদীদের দীর্ঘস্থায়ী সহিংসতা দমনে পদক্ষেপ জোরদার করেছে। শুক্রবার পুলিশ এই খবর জানায়।
কয়েক দশকের মাওবাদী সহিংসতায় ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিহত হন।
বিদ্রোহীদের দাবি, তারা প্রান্তিক আদিবাসীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন।
সহিংসতার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত ছত্রিশগড়ের বিজাপুর জেলার বন-জঙ্গলে বৃহস্পতিবার এ বন্দুকযুদ্ধের ঘটনা ঘটে।
জ্যেষ্ঠ পুলিশ কর্মকর্তা সুন্দররাজ পি. এএফপিকে বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে ১২ মাওবাদী নিহত হয়েছে।’
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত বছর নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে দুই শতাধিক মাওবাদী বিদ্রোহী নিহত হন।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, সরকার আশা করছে ২০২৬ সালের মধ্যে বিদ্রোহীদের দমন করা সম্ভব হবে।
বিদ্রোহীরা গত কয়েক বছরে সরকারি সেনাদের টার্গেট করে বেশ কিছু প্রাণঘাতী হামলা চালায়।
চলতি মাসের গোডার দিকে রাস্তায় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে ৯ ভারতীয় সেনা নিহত হন।
আরও পড়ুন:ভারতের মুম্বাইয়ে নিজ বাসায় অনুপ্রবেশকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা সাইফ আলী খান।
স্থানীয় সময় বুধবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
এনডিটিভির খবরে বলা হয়, রাত আড়াইটায় একজন অনুপ্রবেশকারী বাসায় ঢুকে সাইফ আলীকে ছয়বার ছুরিকাঘাত করে। বর্তমানে মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার চলছে।
হাসপাতালকর্মীরা বলছেন, সাইফ আলী খান এখন বিপদমুক্ত। রাতে তার নিউরো সার্জারি করা হয়েছে। বর্তমানে প্লাস্টিক সার্জারি চলছে।
এ ঘটনায় বান্দ্রা থানায় একটি এজাহার করা হয়েছে। তাতে বলা হয়, সাইফ আলী যখন বাসায় ঘুমিয়ে ছিলেন, তখন একজন অনুপ্রবেশকারী চুপিসারে তার বাসায় ঢোকেন। এ সময়ে ওই ব্যক্তির সঙ্গে সাইফের হাতাহাতি হয়।
এরপর সাইফ আলী খানকে ছয়বারের বেশি ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যান অনুপ্রবেশকারী।
এক বিবৃতিতে লীলাবতী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, ছয়টি আঘাতের মধ্যে দুটি তার মেরুদণ্ডের কাছে গভীর ক্ষত তৈরি করেছে।
এরই মধ্যে তার বাসার তিন পরিচালককে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। এ বিষয়ে তদন্ত করছে মুম্বাই ক্রাইম ব্রাঞ্চ।
এক বিবৃতিতে সাংবাদিক ও ভক্তদের ধৈর্য ধারণ করতে বলেছে সাইফ আলী খান টিম।
এতে বলা হয়, ‘এটি এখন পুলিশের কাজ। আমরা আপনাদের হালানাগাদ তথ্য জানিয়ে দেব।’
কারিনা কাপুর খান টিমও একই বিবৃতি দিয়ে বলেছে, ‘পরিবারের অন্য সদস্যরা ভালো আছেন।’
আরও পড়ুন:নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই শনিবার বলেছেন, তিনি তার জন্মভূমি পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে ‘অভিভূত’ ও ‘আনন্দিত’।
ইসলামি বিশ্বে নারী শিক্ষাবিষয়ক বিশ্বব্যাপী এক শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে তিনি এখন পাকিস্তানে অবস্থান করছেন।
ইসলামাবাদ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, ২০১২ সালে স্কুলছাত্রী মালালাকে পাকিস্তানি তালেবানরা গুলি করে এবং এরপর তিনি বিদেশে চলে যান। বিদেশে যাওয়ার পর মাত্র কয়েকবার তিনি দেশে আসেন।
রাজধানী ইসলামাবাদে সম্মেলনে পৌঁছে তিনি বলেন, ‘পাকিস্তানে ফিরে আসতে পেরে আমি সত্যিই সম্মানিত, অভিভূত ও আনন্দিত।’
প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফ দুই দিনব্যাপী এ শীর্ষ সম্মেলন উদ্বোধন করেন শনিবার সকালে। এতে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর প্রতিনিধিরা একত্রিত হবেন।
স্থানীয় সময় রোববার ইউসুফজাইয়ের সম্মেলনে ভাষণ দেওয়ার কথা রয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ প্ল্যাটফর্ম এক্সে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমি সকল মেয়ের স্কুলে যাওয়ার অধিকার রক্ষার বিষয়ে কথা বলব। আফগান নারী ও মেয়েদের বিরুদ্ধে অপরাধের জন্য কেন তালেবান নেতাদের জবাবদিহি করতে হবে, সে ব্যাপারেও বলব।'
দেশটির শিক্ষামন্ত্রী খালিদ মকবুল সিদ্দিকী এএফপিকে জানান, আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে এ সম্মেলনে যোগদানের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে তালেবান ইসলামাবাদের এ আমন্ত্রণে কোনো সাড়া দেয়নি।
আফগানিস্তান বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে মেয়ে ও নারীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেতে বাধা দেওয়া হয়। ২০২১ সালে ক্ষমতায় ফিরে আসার পর থেকে তালেবান সরকার আফগানিস্তানে কঠোরভাবে ইসলামী আইন আরোপ করেছে। জাতিসংঘ একে ‘লিঙ্গ বর্ণবাদ’ বলে অভিহিত করেছে।
সরকারি পরিসংখ্যান অনুসারে, পাকিস্তান তীব্র শিক্ষা সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। দেশটিতে দুই কোটি ৬০ লাখের বেশি শিশু স্কুলের বাইরে রয়েছে। তাদের অধিকাংশই দারিদ্র্যের কারণে স্কুলে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকার একটি স্কুল বাসে ২০১২ সালে পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের হামলার পর ইউসুফজাই বিশ্বব্যাপী পরিচিত হয়ে ওঠেন। এরপর তাকে যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়।
পরবর্তী সময়ে তিনি নারী শিক্ষার জন্য বিশ্বব্যাপী প্রবক্তা হয়ে ওঠেন। ১৭ বছর বয়সে সর্বকনিষ্ঠ হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী হন তিনি।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য