মফস্বল থেকে ভালো রেজাল্ট করে ঢাকা কমার্স কলেজের বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন জাহিন জাইমা। তবে পড়াশোনার চাপ নিতে না পেরে দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। করোনার সময়ের পড়াশোনার গ্যাপ কাটিয়ে উঠতে ও সেশনজট কমাতে তার কলেজ যে বেশি বেশি ক্লাস-পরীক্ষার চাপ দিচ্ছিল, তা নিতে পারেননি জাইমা।
এক পর্যায়ে মানসিক চাপে শরীর খারাপ হতে শুরু করলে আবার মফস্বলে গিয়ে সাধারণ একটি কলেজে ভর্তি হন এই শিক্ষার্থী। তবে রাজধানীর ভালো কলেজে পড়ার অনেক স্বপ্ন নিয়ে আসা জাইমার সেই কলেজে থাকতে না পারার কষ্ট রয়েই গেছে।
আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে ভর্তি হওয়ার পর অতিরিক্ত পড়াশোনার চাপে খাওয়াদাওয়ার নিয়মেও ব্যাঘাত ঘটে ফজলে শ্রাবণের। শরীরে ধরা পড়ে জন্ডিস। বাধ্য হয়ে তিনি ট্রান্সফার নিয়ে চলে যান নিজের এলাকার একটি কলেজে।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে নেভি কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একই দিন দুই-তিনটা করে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। সব কিছু ভুলে সারা দিন বই নিয়ে থাকতে হয়। এতে কোথাও ১০ মিনিট বসে আড্ডা দেয়ার কথা ভাবা তো দূরে থাক, মানসিক রিফ্রেশমেন্টের জন্যও বাইরে যাওয়ার সাহস হয়ে ওঠে না।
‘মাঝে মাঝে খুব আপসেট হয়ে যাই। হতাশ লাগে। এত চাপে শেষ পর্যন্ত টিকতে পারব কিনা। আমার বন্ধুরাও যারা বিভিন্ন কলেজে রয়েছে সবারই এক অবস্থা। কারও সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকমতো হয় না এখন। আগে যেখানে দিনে অন্তত একবার হলেও কথা হতো।’
এসব হতাশা তীব্র আকার ধারণ করলে নানা ধরনের মানসিক সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সার্বিক পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটেছে দেশে। বেড়েছে আত্মহত্যার প্রবণতা।
দেশে সোমবার পালিত হচ্ছে বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘সবার মানসিক স্বাস্থ্য ও ভালো থাকাটাই হোক বৈশ্বিক অগ্রাধিকার।' সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও সামাজিক সংগঠন আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে।
অতিরিক্ত স্পর্শকাতরতা এবং প্রত্যাশা
সম্প্রতি আঁচল ফাউন্ডেশন এক সংবাদ সম্মেলনে ‘মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর অ্যাকাডেমিক চাপের প্রভাব এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আত্মহত্যার প্রবণতা’ শীর্ষক এক গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে।
ফাউন্ডেশনের সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, ‘আমরা গবেষণায় দেখি, গত ৯ মাসে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা মারাত্মক বেড়ে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আত্মহত্যা করেছেন ৪০৪ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৫৭, স্কুলের রয়েছে ২১৯ জন, মাদ্রাসার ৪৪ জন ও কলেজপড়ুয়া আছে ৮৪ জন। আত্মহত্যা করাদের মধ্যে ছাত্রী ২৪২ ও ছাত্র ১৬২ জন।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণার বিষয়বস্তু ছিল দুটি। এক. আত্মহত্যা কেন করছে। দুই. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চাপ। আত্মহত্যার কারণ হিসেবে দেখা যায় গত দুই বছরে শিক্ষার্থীরা অনেকটা ভঙ্গুর মানসিকতার হয়ে গেছে।’
উদাহরণ দিয়ে তানসেন রোজ বলেন, ‘এ বছর সাত বছরের একটি শিশু আত্মহত্যা করে। শিশুটি বাবার কাছে দুই টুকরো মাংস চাওয়ায় বাবা দেননি। এক টুকরো দিয়েছেন। এটা তার প্রত্যাশার জায়গাকে আঘাত করেছে। বিষয়টি খুব ছোট হলেও তার স্পর্শকাতরতার জন্য সেটা মেনে নিতে পারেনি। এতে সে এমন একটা পথ বেছে নিয়েছে। আরও কিছু ব্যাপার আছে, এসব কাউন্সেলিং এবং বাবা-মায়ের সচেতনার মাধ্যমে কমিয়ে আনা সম্ভব।’
পরিবারের ভাঙন থেকেও বাড়ছে হতাশা
কিছুদিন আগে কয়েক দিনের ব্যবধানে পরপর দুটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনাই হতাশাজনিত কারণে, যা মানসিক সমস্যার একটি রূপ। আর দুজনই আত্মহত্যা করেন ছাদ থেকে লাফিয়ে। একজন রাজধানীর হলিক্রস স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী পারপিতা ফাইহা। আরেকজন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ছাত্রী সানজানা মোসাদ্দেক।
তীব্র হতাশার কারণে তারা এই পথ বেছে নিয়েছিলেন বলে মত বিশেষজ্ঞদের। এর মধ্যে সানজানার ছিল ডিসথিমিয়া (মানসিক রোগ)।
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এইচ এম মাহমুদ হারুন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এই ধরনের রোগীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা থাকে। তবে পরিবেশের নেতিবাচক প্রভাবের কারণে তা আরও তীব্র হয়। পারিবারিক অশান্তি তার একটি বড় কারণ।
‘আবার এই রোগ জন্মগতভাবে হয় এটা না। আশপাশের পরিবেশ এই হতাশার কারণ হতে পারে। যেহেতু সানজানার পারিবারিক অশান্তি তীব্র ছিল এবং বাবাই তাকে শারীরিক এবং মানসিক অত্যাচার করতেন বলে জানা গেছে, সে ক্ষেত্রে তার এই প্রবণতা আরও প্রকট হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমার একজন রোগী আসেন, যিনি এক সন্তানের মা। ডিভোর্স হওয়ার পর বিয়ে করে নতুন জীবন শুরু করেন তিনি। সেখানে তার সন্তানের সঙ্গে খুব বন্ধুত্বপূর্ণ রিলেশন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সন্তান মায়ের কাছে থাকে। এ ক্ষেত্রে সৎবাবা যদি নিজের সন্তানের মতোই ভালোবাসা দেন, তাহলে ব্রোকেন ফ্যামিলির ব্যাপারটা সে ফিল করে না।’
মনোরোগ বিশেষজ্ঞ মাহমুদ হারুন বলেন, ‘আমাদের মেডিক্যাল টার্মে আছে, কোনো দম্পতির কেউ একজন ডিভোর্স চাইলে সেখানে কাপল থেরাপি কাজ করে না। সেই পরিবারও মনের বিরুদ্ধে সম্পর্ক টিকিয়ে রেখে সন্তানকে একটা স্বাস্থ্যকর পরিবেশ দিতে পারে না। এতেও কিন্তু সন্তান ভালো থাকছে না।
‘সেক্ষেত্রে সন্তানকে এমন একটা পারিবারিক পরিবেশ দিতে হবে, যেন মা-বাবার সেপারেশনকে সে নেতিবাচকভাবে না নিয়ে জীবনেরই একটা স্বাভাবিক অংশ মনে করে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবিব বলেন, ‘পরিবার হলো সামাজিকীকরণের প্রথম মাধ্যম। আমাদের জীবনে দীর্ঘ একটি প্রভাব ফেলে আমাদের সমাজ। বাংলাদেশে যে বিষয়গুলো আমরা দেখতে পাচ্ছি, পরিবারের ভাঙন বা মা-বাবার মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের প্রভাব। সেটা সন্তানদের ওপর পড়ছে এবং সেই জায়গা থেকে মুক্তি আমরা পাচ্ছি না।
‘এর কারণ হচ্ছে বাচ্চাদের মধ্যে একটা সেন্স অফ ডিপ্রাইভেশন অর্থাৎ বিচ্ছেদের যে অনুভূতি এটা কোনো না কোনোভাবে মা-বাবাই তৈরি করেছেন। আমাদের সমাজে যে মা-বাবা সেপারেশনে যান, তাদের মধ্যে খুব কমসংখ্যকই আছেন, যারা তাদের সন্তানের মানসিক চাহিদাটা পূরণ করতে পারেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা হয়ত অর্থনৈতিক দায়িত্বটা পালন করি। কিন্তু সেই সঙ্গে তাদের মানসিক বিকাশ, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং সুন্দর একটি সামাজিক পরিবেশ দেয়া, সেই জায়গাগুলোতে আমরা খুব বেশি নজর দেই না। যার ফলে তারা একাকীত্ব অনুভব করে এবং ডিপ্রেশনে চলে যায়। এর থেকে এ রকম আত্মহত্যার প্রবণতা চলে আসতে পারে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২-এর জরিপ বলছে, প্রতি বছর বিশ্বে আনুমানিক ৭ লাখ ৩ হাজার মানুষ আত্মহত্যা করে। এ রকম প্রতিটি আত্মহত্যার কারণে আরও ২০ জন আত্মহত্যার চেষ্টা করছে এবং অনেকে আত্মহত্যার গুরুতর চিন্তা রয়েছে। বহু মানুষ তীব্র কষ্টের মধ্যে থাকে। যার ফলে আত্মঘাতী আচরণ তাদের গভীরভাবে প্রভাবিত করে।
সংস্থাটি বলছে, আত্মহত্যায় মৃত্যু জনস্বাস্থ্যের জন্য উদ্বেগ। এটি তাদের আশপাশের লোকদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে। সচেতনতা বাড়ানোর মাধ্যমে এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে হবে। তাহলে বিশ্বজুড়ে আত্মহত্যার ঘটনা কমানো সম্ভব।
আরও পড়ুন:মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে রাজধানীর তেজগাঁও প্রধান সড়ক অবরোধ করে রেখে প্রতিবাদ করছেন কোহিনুর ক্যামিকেল কোম্পানির কারখানার শ্রমিকরা।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) দুপুরের পর থেকে সড়কটি বন্ধ রয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটে এসেছেন। কিন্তু এখনো পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
কারখানার কসমেটিকস বিভাগের বাবু নামে এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মহানবী হজরত মুহাম্মদকে (সা.) নিয়ে কটূক্তি করার অভিযোগ করা হয়েছে। বিষয়টি জানতে পেরে শ্রমিকরা প্রতিবাদ করেন।পরে তারা প্রধান সড়কে নেমে বিক্ষোভ ও অবরোধ করেন।
এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন শতশত মানুষ। মহাখালী থেকে আসা যাওয়ার সড়কটি বন্ধ হয়ে গেছে।
শ্রমিকদের দাবি হচ্ছে, সেই কর্মকর্তাকে চাকরিচ্যুত করার পাশাপাশি তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। এই মুহূর্তে ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ছুটে এসেছেন। তাদের মধ্য থেকে একজন তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করছেন। বারবার তাদের আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু এখনো পরিস্থিতি শান্ত হয়নি।
তারা আরও বলেন, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ঠিক বিপরীত পাশে সড়কে কোহিনুর কেমিক্যাল কোম্পানির অবস্থান। সেই কারখানাটির গেটের সামনে শ্রমিকরা বিক্ষোভ করছেন। বিকেল ৪ টা ৫০ মিনিটে সেনাবাহিনীর একজন অফিসার এসে তাদের সাথে কথা বলেন। এ সময় তাকে বলতে শোনা যায়, কারখানাটির কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছেন। সেই ব্যক্তিকে চাকরি থেকে অপসারণের পাশাপাশি আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
এমন বিষয় জানানোর পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা কারখানাটির সামনের সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তবে এখন পর্যন্ত কোন ভাঙচুর বা হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মহাখালী জোনের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার (ট্রাফিক) দেলোয়ার হোসেন বলেন, রাস্তা ব্লকের কারণে তেজগাঁও সাত রাস্তাসহ আশেপাশে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সাধারণ মানুষের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে পাটের তৈরি সরবরাহ করা হবে বলে জানিয়েছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। এ সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে (ঢাবি) শব্দদূষণমুক্ত ঘোষণা করারও আহ্বান জানান তিনি।
তিনি বলেন, ‘ভর্তুকি মূল্যে পাটের ব্যাগ দেওয়ার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করা হবে।’
শনিবার (১৯ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনে প্লাস্টিক দূষণ রোধে করণীয় সংক্রান্ত সেমিনার এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘পাটের ব্যাগ ব্যবহারে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রচার কার্যক্রম চালানো হবে। পাটের ব্যাগ তৈরির সঙ্গে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করা হবে। টেকসই ব্যবস্থার জন্য জেডিপিসি, এসএমইএফ, জয়িতা ফাউন্ডেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’
উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ রোধে সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। অপ্রয়োজনীয় প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’
‘প্লাস্টিকের বিকল্প নেই—এই ধারণা ঠিক নয়। সরকারের সব উদ্যোগ রাতারাতি বাস্তবায়ন সম্ভব নয়, তবে ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে,’ বলেন তিনি।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান। অ
নুষ্ঠানে বক্তব্য দেন—পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ; পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. কামরুজ্জামান, এনডিসি; ঢাকা নরওয়েজিয়ান দূতাবাসের উপ-মিশন প্রধান মারিয়ান রাবে ক্নাভেলসরুদ; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মামুন আহমেদ; ইউনিডোর বাংলাদেশ কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ ড. জাকি উজ জামান; ঢাকা মেডিকেল কলেজের ড. আফিয়া শাহনাজ; বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. মফিজুর রহমান।
সময় পরিবেশ উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক ও শব্দদূষণমুক্ত ঘোষণা করার আহ্বান জানান।
রাজধানীতে পরিচালিত পৃথক অভিযানে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া এসব সংগঠনের সাম্প্রতিক ঝটিকা মিছিল নিয়ে সাধারণ জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)।
শনিবার (১৯ এপ্রিল) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব জানিয়েছে ডিএমপি। বিজ্ঞপ্তিতে তারা জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগ ও তাদের সমভাবাপন্ন বিভিন্ন সংগঠন ঝটিকা মিছিল করে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরির মাধ্যমে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তারা পুলিশের গতিবিধি অনুসরণ করে নির্দিষ্ট কোনো এলাকায় গাড়ি থেকে নেমে দুয়েক মিনিট মিছিল করে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। পরবর্তীতে এসব মিছিলের ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করে তাদের অস্তিত্ব জানান দেয়।
তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করা সম্ভব না হলেও পরবর্তীতে ছবি ও ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তাদের মধ্যে অনেককেই গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে বলে জানায় ডিএমপি। পৃথক অভিযানে রাজধানীতে ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
গ্রেপ্তার হওয়া ছয় সদস্য হলেন- পল্লবী থানা ছাত্রলীগের ৫ নং ওয়ার্ডের সিনিয়র সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম নাইম, যাত্রাবাড়ী থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. রিপন হোসেন ফাহিম, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৫৯ নং ওয়ার্ড শ্রমিক লীগের সহ-সভাপতি শেখ মো. সোহেল, বাড্ডা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ বিষয়ক সম্পাদক মো. সোহেল রানা, বাড্ডা থানার ৩৭ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইয়ামিন ও বাড্ডা ১২ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবুল বাশার খান।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার (১৮ এপ্রিল) পল্লবী থানার বাউনিয়া এলাকা থেকে আশরাফুল ইসলাম নাইমকে গ্রেফতার করে ডিবি-মিরপুর বিভাগ।
অন্যদিকে, মহানগর গোয়েন্দা সাইবার বিভাগের বিভাগের একটি দল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে মো. রিপন হোসেন ফাহিমকে গ্রেফতার করে। ডিবি-ওয়ারী বিভাগ কদমতলী থানাধীন মোহাম্মদবাগ এলাকা থেকে শেখ মো. সোহেলকে গ্রেফতার করে।
এরপর শনিবার (১৯ এপ্রিল) ভোরে ডিবি সাইবারের একটি টিম রাজধানীর বাড্ডা থানার মধ্য বাড্ডা এলাকা থেকে মো. সোহেল রানা ও মোহাম্মদ ইয়ামিনকে এবং শাহ আলি এলাকা হতে অপর একটি টিম পৃথক অভিযান চালিয়ে আবুল বাশার খানকে গ্রেফতার করে।
ডিএমপি জানায়, এসব সংগঠনের অপতৎপরতা রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ সময় সাধারণ জনগণকে এসব সংগঠনের বিচ্ছিন্ন অপতৎপরতা সম্পর্কে অহেতুক আতঙ্কিত না হওয়ার অনুরোধ করেছে মহানগর পুলিশ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) আজ যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত মহাসড়কে এবং যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলা হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযান পরিচালনা করে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়ার উপস্থিতিতে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছয়শত পরিচ্ছন্ন কর্মী এই বিশেষ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে অংশগ্রহণ করেন।
সকাল ৬ টায় শুরু হওয়া এ পরিচ্ছন্নতা অভিযানে যাত্রাবাড়ী থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এবং যাত্রাবাড়ী থেকে কাজলা হয়ে স্টাফ কোয়ার্টার পর্যন্ত মহাসড়কে ও আইল্যান্ডে জমে থাকা দীর্ঘদিনের বর্জ্য অপসারণ করা হয়েছে।
পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, মহাসড়কে ও মহাসড়কের আইল্যান্ডে দীর্ঘদিন ময়লা জমে থাকায় বায়ুদূষণসহ পরিবেশের বিভিন্ন ক্ষতি হচ্ছিল। মহাসড়কটি সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের অধীন হওয়ায় এখানে সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কর্মী নিয়োগের সুযোগ নেই।
পরিবেশ, বন ও জলাবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের নির্দেশনায় আজকের এই বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের আওতাভুক্ত সাইনবোর্ড এলাকা পর্যন্ত মহাসড়কের ময়লা পরিষ্কারের ফলে এই মহাসড়ক ব্যবহারকারীরা যেমন স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি থেকে রক্ষা পাবেন, ঠিক তেমনি পরিবেশ দূষণ রোধ সম্ভব হবে।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রশাসক বলেন, আসন্ন বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএসসিসি এখন থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বর্তমানে খাল পুনরুদ্ধার ও ড্রেন পরিষ্কাার চলমান রয়েছে।
এছাড়া, আগামী ২৩ এপ্রিল থেকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের খাল-ড্রেন উদ্ধার ও পরিষ্কারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। ডেঙ্গু মৌসুম মোকাবিলার জন্য মশক কর্মীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান শুরু হয়েছে।
এছাড়া প্রতিটি ওয়ার্ডে নিয়মিত ভাবে লার্ভিসাইডিং এবং এডাল্টিসাইডিং কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে প্রশাসক নগরবাসীর সচেতনতা ও সহযোগিতা কামনা করেন।
পরিচ্ছন্নতা অভিযানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. জিল্লুর রহমান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা এয়ার কমডোর মো. মাহাবুবুর রহমান তালুকদারসহ উর্ধ্বতন কর্মকতারা উপস্থিত ছিলেন।
রাজধানীর বনানীতে নৌবাহিনী সদরদপ্তর ও আর্মি স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি স্থানে শুক্রবার পোশাকশ্রমিক বহনকারী একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সাত নারী আহত হয়েছেন।
তাদের ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আহত সাত শ্রমিক হলেন রাশেদা (২৮), লাকি আক্তার (৩৫), পারভিন বেগম (৩৪), নিলুফা আক্তার (৩০), হোসনেয়ারা (৩৫), রাশেদা আক্তার (৩১)।
আহত নারী শ্রমিকদের ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই কারখানার মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান ফয়সাল আহমেদ বলেন, ‘নারী শ্রমিকরা গাজীপুরের কালীগঞ্জের পূর্বাচল অ্যাপারেল লিমিটেডের পোশাকশ্রমিক। আজ ভোরে ডিউটি শেষ করে সকালে ঢাকার দিকে যাওয়ার পথে চালক বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আর্মি স্টেডিয়াম ও নৌ বাহিনী সদরদপ্তরের মাঝামাঝি স্থানে বাসটি উল্টে যায়। এতে আহত হয় অনেকে। পরে আমরা খবর পেয়ে আহতদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাই।
‘এদের মধ্যে গুরুতর আহত সাতজন শ্রমিককে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। তারা এখন চিকিৎসাধীন।’
ঢামেক পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মোহাম্মদ ফারুক জানান, বনানীতে পোশাক শ্রমিকদের বাস দুর্ঘটনায় আহত সাতজনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। শ্রমিকদের কারও মাথায়, কারও শরীরে এবং পায়ে হাতে জখমের চিহ্ন রয়েছে। তাদের চিকিৎসা চলমান।বিষয়টি সংশ্লিষ্ট থানাকে অবহিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন:পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটির দিনগুলোতে যাতে চিকিৎসা ব্যবস্থার কোনো ঘাটতি না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএমইউ) ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম।
রোগীদের সুবিধার্থে ২৯ মার্চ ও ২ এপ্রিল খোলা থাকবে বিএমইউর বহির্বিভাগ।
এ দুই দিন সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বহির্বিভাগে রোগীদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবু নোমান মোহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিনকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিদিনই বিএমইউ হাসপাতালের ইনডোর ও জরুরি বিভাগ প্রচলিত নিয়মে খোলা থাকবে।
হাসপাতালের জরুরি ল্যাব কার্যক্রম সেবাও চালু থাকবে।
বিএমইউর রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে ২৮, ৩০, ৩১ মার্চ এবং ১, ৩ ও ৪ এপ্রিল। এর মধ্যে পবিত্র শবে কদর উপলক্ষে শুক্রবার এবং সাপ্তাহিক ছুটি উপলক্ষে ৪ এপ্রিল বহির্বিভাগ বন্ধ থাকবে। বন্ধের দিনগুলোতে ২৯ মার্চ শনিবার থেকে ৩ এপ্রিল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ক্লাস, অফিস, বৈকালিক স্পেশালাইজড কনসালটেশন সার্ভিস, সুপার স্পেশালাইজড হাসপাতালের কনসালটেশন সার্ভিস বন্ধ থাকবে।’
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, হাসপাতালে রোগীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
চেক ডিজঅনার মামলায় ক্রিকেটার ও মাগুরা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) সাকিব আল হাসানের সম্পত্তি ক্রোকের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জিয়াদুর রহমান বাদীপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সোমবার এ আদেশ দেন।
আদালতের পেশকার রিপন মিয়া বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ১৫ ডিসেম্বর ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুল হকের আদালতে আইএফআইসি ব্যাংকের পক্ষে শাহিবুর রহমান বাদী হয়ে এ মামলা করেন।
চেক ডিজঅনার মামলায় সাকিব আল হাসানসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর তিনজন হলেন সাকিব আল হাসান অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেডের এমডি গাজী শাহাগীর হোসাইন এবং প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ইমদাদুল হক ও মালাইকা বেগম।
আদালত ১৫ ডিসেম্বর বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করে ১৯ জানুয়ারি তাদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। গত ১৯ জানুয়ারি সাকিবের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তিনি পরে এ মামলায় জামিন নেন।
আজ গ্রেপ্তার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য করেন আদালত। বাদীপক্ষ সাকিবের সম্পত্তি ক্রোকের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন।
মামলার বিবরণ সূত্রে জানা যায়, সাকিবের মালিকানাধীন অ্যাগ্রো ফার্ম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময় আইএফআইসি ব্যাংকের বনানী শাখা থেকে ঋণ গ্রহণ করে। তার বিপরীতে দুটি চেক ইস্যু করে সাকিবের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চেক দিয়ে টাকা উত্তোলন করতে গেলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার হয়। দুই চেকে টাকার পরিমাণ প্রায় চার কোটি ১৫ লাখ।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য