উল্টো পথে চলা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টঙ্গী-গাজীপুর রুটের ‘ক্ষণিকা’ বাসের ধাক্কায় রাজধানীতে এক বেসরকারি চাকরিজীবী নিহত হওয়ার ঘটনায় দায় নিচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তারা বলছে, বাসটি বিআরটিসির হওয়ায় তেমন কিছু করণীয় নেই।
দুর্ঘটনার তিন দিন কেটে গেলেও নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো যোগাযোগ করেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস উল্টো পথে চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়নি স্বীকার করে কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বন্ধে কঠোর নির্দেশনা দেয়া হবে।
এয়ারপোর্ট রোডে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে বৃহস্পতিবার বিকেলে ‘ক্ষণিকা’ বাসের ধাক্কায় গুরুতর আহত হন ২৪ বছর বয়সী আলামিন টুটুল।
বিআরটিসির দোতলা বাসটি ভাড়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহন করছিল। পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ওই দিন বিকেল ৪টায় বাসটি কার্জন হল থেকে ছেড়ে আসে। দীর্ঘক্ষণ জ্যামে থাকায় ফার্মগেটের পরে ড্রাইভার উল্টো পথ দিয়ে যেতে শুরু করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনের সড়কে সেটি আলামিন টুটুলকে ধাক্কা দেয়।
পুলিশ জানায়, দুর্ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও টুটুলের সহকর্মীরা তাকে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। ঢাকা মেডিক্যালে কিছু পরীক্ষার পর টুটুলকে আইসিইউতে ভর্তির পরামর্শ দেন চিকিৎসক। তবে সেখানে আইসিইউ খালি না থাকায় মালিবাগের সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে নেয়া হয় টুটুলকে। সেখানে রাত পৌনে ১০টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
টুটুলের বাড়ি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলায়। ঢাকার রাজাবাজারে ভাড়া বাসায় থাকতেন তিনি। বিজয় সরণির আওলাদ হোসেন মার্কেটের সিএসএল নামে একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চেইন ম্যানেজমেন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করতেন তিনি। সিএসএল বিভিন্ন কোম্পানির ক্লিনিং বিভাগে পণ্য সরবরাহ করে।
মামলার বাদী ও টুটুলের বড় ভাই আরিফুল আলম রোববার নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ঢাকা ইউনিভার্সিটির বাসের ঢাক্কায় আমায় ছোট ভাইয়ের মৃত্যু হয়েছে। এরপর ঢাকা ইউনিভার্সিটির পক্ষ থেকে এখনও কেউ আমাদের পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ করেনি। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।’
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানীর ফোনে রোববার কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
অন্যদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন ম্যানেজার কামরুল ইসলাম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘সে সময় (বৃহস্পতিবার বিকেল) শিক্ষার্থীদের ক্লাস বা পরীক্ষার কোনো তাড়া ছিল না। তারপরও ড্রাইভার একক স্বেচ্ছাচারিতায় উল্টো পথে গাড়ি চালিয়েছেন।
‘শিক্ষার্থীরা এ ধরনের কোনো অনুরোধ করেননি। গাড়িগুলো যেহেতু আমাদের নয় তাই আমরা তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। বিষয়টি আমরা বিআরটিসিকে জানিয়েছি।’
নিহত টুটুলের পরিবারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কোনো যোগাযোগ করেনি স্বীকার করেন তিনি। তবে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘যে ব্যক্তিটি মারা গেছেন তার পরিবারের কাছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক সমবেদনা জানাব।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে কোনো সহায়তা দেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের এখনও কোনো চিন্তা নেই। যেহেতু এটি বিআরটিসির, শুনেছি তারা এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে সহায়তা দেয়ার বিষয়টি নিয়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করব।’
বৃহস্পতিবারের দুর্ঘটনার পর উল্টো পথে বাস চালানো বন্ধে নতুন করে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই শিক্ষার্থী এবং ড্রাইভারের সঙ্গে মিটিং করে গাড়ি যেন উল্টো পথে না চালায় সেই নির্দেশনা দেয়া আছে। নির্দেশনাটা অনেকাংশে প্রতিপালিত হচ্ছে। উল্টো পথে গাড়ি চালানোর প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. সামাদ রোববার বিকেলে নিউজবাংলার প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে জানান, তিনি ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে সংশ্লিষ্টদের রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দিচ্ছেন।
অধ্যাপক সামাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। এটা নিয়ে কিছু করার সময় পাইনি। এখনই আমি এ ঘটনায় বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলে দিচ্ছি। রিপোর্ট পাওয়ার পর আমাদের করণীয় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’
তিনি বলেন, ‘উল্টো পথে গাড়ি চালানো তো বেআইনি। অপরাধী যে-ই হোক আমরা কোনো ছাড় দেব না। বিশ্ববিদ্যালয় বলে কোনো সহানুভূতি পেতে হবে সেটাও আমরা হতে দেব না। আইন সবার জন্য সমান।’
আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলছেন, বিআরটিসির বাস হওয়ায় তাদের তেমন কিছু করণীয় নেই।
উপাচার্য বলেন, ‘এটি আমাদের গাড়ি নয়। এটি বিআরটিসির গাড়ি, আমরা শুধু ভাড়া নিয়ে চালাই। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব কোনো গাড়ি এ রকম উল্টো পথে চালানোর কথাই নয়। যদি কোনো ড্রাইভার এটি করত আমরা সরাসরি তাকে বাদ দিয়ে দিতাম।’
নিহত ব্যক্তির পরিবারের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে যোগাযোগ বা কোনো সহায়তা দেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তিনি ‘ঠিক আছে, ভালো থেকো’ বলে ফোন রেখে দেন।
তেজগাঁও থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এ ঘটনায় তাৎক্ষণিক বাসের চালক বজলুর রহমানকে তেজগাঁও থানা পুলিশ আটক করে। ঘটনার পরদিন সকালে ভুক্তভোগীর পরিবার ২০১৮ সালের সড়ক ও পরিবহন আইনে মামলা করেছে। পরে ওই মামলায় চালককে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে পাঠিয়েছি। তিনি এখন জেলহাজতে।
‘দুর্ঘটনা ঘটার পরপরই ট্রাফিক পুলিশ বাসটি আটক করে। পরে ছাত্ররা অন্য চালক এনে বাসটি নিয়ে যান।’
জিজ্ঞাসাবাদে চালকের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘চালক আমাদের বলেছেন যানজটের কারণে ছাত্রদের চাপে পড়ে তিনি রং রুটে গিয়েছিলেন। এ কারণেই দুর্ঘটনাটি ঘটে।’
আরও পড়ুন:ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় দেশীয় অস্ত্র ঠেকিয়ে একটি মাইক্রোবাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
ওই সময় ছিনতাইকারীদের বাধা দিতে গিয়ে আহত হয়েছেন মাইক্রোবাসটির দুই যাত্রী।
আহত দুজন হলেন মাইক্রোবাসের যাত্রী তাহেরা বেগম (৬৫) ও আবদুস সালাম (১৮)। তাদের বাড়ি নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলায়।
প্রত্যক্ষদর্শী মাইক্রোবাসের যাত্রী হানিফ মিয়া বলেন, ‘আমার ছোট ভাই হুমায়ুন কবির সৌদি আরব প্রবাসী। ছুটিতে তিনি আজকে বাংলাদেশে আসছেন। আমরা যাচ্ছিলাম তাকে এয়ারপোর্ট থেকে এগিয়ে আনতে। ভোর সাড়ে তিনটার দিকে আমরা সোনাইমুড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই। এ সময় চালকসহ আমরা চারজন মাইক্রোবাসটিতে ছিলাম।
‘শুক্রবার সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে আমরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের গজারিয়া অংশের ভিটিকান্দি এলাকায় পৌঁছাই। এ সময় ঢাকাগামী লেনে একটি যাত্রীবাহী বাস দুর্ঘটনার শিকার হলে মহাসড়কের এই অংশে যানজট ছিল। যানজটে আটকে থাকার সময় হঠাৎ করে তিন-চারজন যুবক বগি দা, রামদা নিয়ে আমাদের গাড়িতে হামলা করে।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা আমাদের মারধর করে নগদ ২৮ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। ডাকাতের হামলায় আমার মা তাহেরা বেগম, আমার ভাগিনা আবদুস সালাম আহত হয়েছে। আমরা এই ঘটনায় গজারিয়া থানাতে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছি।’
ছিনতাইয়ের ঘটনায় আহত আবদুস সালাম বলেন, ‘দিনে-দুপুরে এভাবে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটতে পারে। তা ছিল আমাদের কল্পনার বাহিরে। সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে অস্ত্রের মুখে আমাদের জিম্মি করে আমাদের সাথে থাকা নগদ টাকা, মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকারসহ সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া হয়।
‘আমি প্রতিবাদ করায় আমাকে রামদা দিয়ে কোপ দেওয়া হয়। আমি সরে গেলে তা আমার পাঞ্জাবিতে লাগে।’
আহত তাহেরা বেগম বলেন, ‘ছিনতাইকারীরা আমার ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নিতে চাইলে আমি তাদের বাধা প্রদান করি। এ সময় তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে মারধর করে। তাদের সাথে না পড়ে একসময় বাধ্য হয়ে আমি ভ্যানিটি ব্যাগ তাদের দিয়ে দিই।’
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘এ রকম একটি খবর আমিও পেয়েছি। ভুক্তভোগীদের থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে বলা হয়েছে। বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি।’
আরও পড়ুন:জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির নামে দিনাজপুরের কোতোয়ালি থানায় অপহরণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে একটি মামলা করা হয়েছে।
কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক মো. মতিউর রহমান বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় যুক্তরাজ্যপ্রবাসী দিনাজপুর শহরের মুন্সিপাড়া মহল্লার ওলিউর রহমান নয়ন বাদী হয়ে সাবেক হুইপ ইকবালুর রহিমসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে, ২০ জন অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি মামলাটি দায়ের করেছেন।’
মামলায় অপর উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের জেলা সভাপতি আবু ইবনে রজবী, আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান, আওয়ামী লীগ নেতা রশিদুল ইসলাম, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ড কর্মচারী সমিতির সভাপতি মাসুদ আলম, ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জিয়াউর রহমান জিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার শাহ আলম, ধীমান সরকার, সাবেক পৌর কাউন্সিলর ও যুবলীগ নেতা মুক্তি বাবু ও যুব মহিলা লীগ নেত্রী সৈয়দা সেলিনা মমতাজ।
বাদী তার মামলায় অভিযোগ করেন, ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি শহরের মুন্সিপাড়ার লুৎফুন্নেসা টাওয়ারে তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় রিজ নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তৎকালীন প্রাথমিক গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানকে দিয়ে উদ্বোধন করিয়েছিলেন।
এ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে আসামিরা তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
তিনি অভিযোগে জানান, ২০১৫ সালের ২৫ ডিসেম্বর দুপুরে আসামিরা দলবদ্ধ হয়ে তার প্রতিষ্ঠানে এসে হুমকি দেয় এবং তারা বলেন, ইকবালুর রহিমকে বাদ দিয়ে অন্য কোনো নেতাকে দিয়ে তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উদ্বোধন করায় তার কাছে এক কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন।
পরবর্তী সময়ে ২০১৬ সালের ২৬ জানুয়ারি দুপুরে বাদী নয়নকে আসামিদের দাবিকৃত চাঁদা না দেওয়ায় তাকে অপহরণ করে আসামি আবু ইবনে রজবীর সদর উপজেলার বাঙ্গিবেচা ঘাটের পাশে তার রিসোর্টে নিয়ে গিয়ে আটক করে রাখা হয়। পরে আসামিদের নির্যাতনে বাধ্য হয়ে বাদী ওই দিন বিকেলে তার স্কুলের কর্মচারী সাক্ষী মিজানুর রহমান ও মিজানুর রহমান জুয়েলের মাধ্যমে আসামি রশিদুল ইসলাম, জিয়াউর রহমান জিয়া ও ধীমান সরকারকে ৩০ লাখ টাকা চাঁদা হিসেবে পরিশোধ করেন।
আসামিরা চাঁদা পেয়ে অবশিষ্ট ৭০ লাখ টাকা স্বল্প সময়ের মধ্যে দেওয়ার অঙ্গীকারে ওলিউরকে ছেড়ে দেয়।
ওলিউর তার মামলায় অভিযোগ করেন, আসামি ইকবালুর রহিমের প্রভাবে পরবর্তী সময়ে আসামি সৈয়দা সেলিনাল মমতাজ বাদী হয়ে তার কন্যাকে ভুক্তভোগী সাজিয়ে অলিউর রহমানের বিরুদ্ধে পৃথক দুটি মামলা করেন। একটি নিয়মিত মামলা এবং অপরটি নারী নির্যাতন আইনে। এই মামলা দুটি অনেক অর্থের বিনিময়ে আপস-নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এরপর নয়ন নিরাপত্তার অভাবে দেশ ছেড়ে যুক্তরাজ্য চলে যান। বর্তমানে দেশে মামলা দায়ের ও বিচারের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি দেশে ফিরে বৃহস্পতিবার রাতে মামলাটি আসামিদের বিরুদ্ধে দায়ের করেন।
আরও পড়ুন:মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ায় পাঁচ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগে প্রতিবেশী এক মুদি দোকানিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
ঘটনার দিন মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তারের পর ৬৫ বছর বয়সী আসামিকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘বিষয়টি আমরা মঙ্গলবার সন্ধ্যায় জানতে পারি। খবর পাওয়ামাত্রই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়।
‘রাত ৯টার দিকে অভিযুক্তকে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের পরে তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।’
প্রত্যক্ষদর্শী দাবিদার শিশুটির ফুফু জানান, মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তাদের বাড়ির পাশের মুদি দোকানে যায় শিশুটি। দোকানের মালিক শিশুটিকে চকলেট দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দোকানের ভেতরে নিয়ে যান। সে সময় তিনি শিশুটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। হঠাৎ তিনি (ফুফু) সেখানে উপস্থিত হলে হাতেনাতে বিষয়টি ধরে ফেলেন।
ফুফুর অভিযোগ, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে উল্টো মুদি দোকানি ও তার ছেলেরা তার ওপর চড়াও হন। অভিযুক্তের পরিবার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় ধর্ষণের অভিযোগ করে ভুক্তভোগীরা উল্টো নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন।
শিশুটি বলে, ‘শুধু আমি একা না, দাদার দোকানে যারাই যায় আশেপাশে কেউ না থাকলে তিনি বাচ্চাদের তার কোলে নিয়ে বসায়। বিস্কুট দেয়, বেলুন দেয়। তারপর শরীরে হাত দেয়।’
এদিকে বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, মুদি দোকানির বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ আগেও পাওয়া গিয়েছিল। এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বলতে সাহস পায় না।
বিষয়টি সম্পর্কে অভিযুক্ত দোকানির সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন:আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট থেকে প্রদত্ত ‘নো অর্ডার’ বিষয়ে স্পষ্টীকরণ করে বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়েছে।
প্রধান বিচারপতির আদেশক্রমে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল ড. আজিজ আহমদ ভূঞা স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “এতদ্বারা সংশ্লিষ্ট সকলের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট থেকে বিভিন্ন মামলায় ‘নো অর্ডার’ মর্মে আদেশ প্রচারিত হয়ে থাকে। বিষয়টির প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ এবং সাধারণ বিচারপ্রার্থীরা অনেক সময়ে অসুবিধার সম্মুখীন হয়ে থাকেন।
“ফলে ‘নো অর্ডার’-এর প্রকৃত অর্থ সম্পর্কে স্পষ্টীকরণ প্রয়োজন। এমতাবস্থায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চেম্বার কোর্ট হতে কোনো মামলায় ‘নো অর্ডার’ মর্মে আদেশ প্রচারিত হলে আবেদনকারীর প্রার্থিত প্রতিকার মঞ্জুর করা হয়নি এবং চেম্বার কোর্ট বিতর্কিত আদেশ বা রায়ের বিষয়ে কোনোরূপ হস্তক্ষেপ ছাড়াই আবেদনটি নিষ্পত্তি করেছেন মর্মে গণ্য করতে হবে।”
জামালপুর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) মির্জা আজম ও তার স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে থাকা ৩১টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন ঢাকার একটি আদালত।
দুদকের আলাদা দুই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জনসংযোগ বিভাগের উপপরিচালক আকতারুল ইসলাম বিষয়টি সাংবাদিকদের জানান।
মির্জা আজমের নামে ১৮টি ও স্ত্রী দেওয়ান আলেয়ার নামে ১৩টি ব্যাংক হিসাব রয়েছে। এ ছাড়া তাদের ১৯ বিঘা জমি জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকলে এবং দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
সচিবালয়ে মঙ্গলবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির অষ্টম সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। বিশেষ করে আগামীকাল স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস এবং আসন্ন পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও নিয়ন্ত্রণে থাকে, সে বিষয় করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে। অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত এবং দেশবিরোধী ও ধ্বংসাত্মক আন্দোলন-সমাবেশে উসকানিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধকল্পে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি, টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি আরও বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
‘ঈদ নির্বিঘ্ন করার লক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হবে। বিভিন্ন আবাসিক হোটেল ও বস্তিতে অভিযান বৃদ্ধি করা হবে।’
ঢাকার কেরানীগঞ্জে এক কিশোরীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে করা মামলায় তিনজনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।
ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৪-এর বিচারক মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করেন।
ঢাকা জেলার আদালত পরিদর্শক আকতার হোসেন বাসসকে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন মো. সজিব, মো. রাকিব ও শাওন ওরফে ভ্যালকা শাওন। এ ছাড়া লাশ গুমের ঘটনায় তাদের তিনজনকে সাত বছর করে কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
এদিকে আলী আকবর ও মো. রিয়াজ নামে দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় তাদের খালাস দেন আদালত।
রায় ঘোষণার আগে কারাগারে থাকা তিন আসামি রাকিব, রিয়াজ ও শাওনকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে দণ্ডিত রাকিব এবং শাওনকে সাজা পরোয়ানা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়। দণ্ডিত সজিব পলাতক থাকায় আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, ২০২২ সালের ১১ জুন কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন আঁটিবাজার এলাকায় পুলিশ টহল দিচ্ছিল। ডিউটি চলাকালে সকাল পৌনে ৮টার দিকে জরুরি সেবা ৯৯৯-এর মাধ্যমে সংবাদ পায়, কেরানীগঞ্জ মডেল থানার পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের সামনে পুকুরের পানিতে একজনের লাশ পানিতে ভাসছে। পুলিশ সেখানে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে।
পরে কেরানীগঞ্জ মডেল থানায় পুলিশ মামলা করে তদন্ত শুরু করে। প্রথমে ভুক্তভোগীর পরিচয় শনাক্ত করা হয়। তার বান্ধবী বৃষ্টি আক্তার সাক্ষী হিসেবে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জানান, এটা তার বান্ধবী মারিয়ার লাশ।
স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে পুলিশ শাওনকে গ্রেপ্তার করে। শাওন আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন। সেখানে জানান, তিনি, মো. রাকিব, মো. সজিব, মো. আলী আকবর মিলে ভিকটিম মারিয়াকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে পশ্চিম বামনসুর জামে মসজিদের পানিতে ফেলে রাখেন। পরে রাকিব এবং সজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তারাও একই কথা বলে আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দি দেন।
পাঁচজনকে অভিযুক্ত করে ২০২৩ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন কেরানীগঞ্জ মডেল থানার উপপরিদর্শক অলক কুমার দে। মামলার বিচার চলাকালে ১৯ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেন।
আরও পড়ুন:
মন্তব্য