টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স নিয়ে চলছে সাত সহস্রাধিক ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশা (ইজিবাইক)।
তৃতীয় দফায় পৌরসভার মেয়র স্বাক্ষরিত রিকশার লাইসেন্সের মেয়াদ বেড়েছে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধে ২০২১ সালে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাসহ সড়ক পরিবহনবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই নির্দেশনা ও সিদ্ধান্ত অমান্য করে ব্যাটারিচালিত এসব অটোরিকশার লাইসেন্স দেয়ার অভিযোগ উঠেছে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীরের বিরুদ্ধে।
বিপুলসংখ্যক ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করায় শহরে যেমন বেড়েছে যানজট, তেমনি দেখা দিয়েছে বৈদ্যুতিক সমস্যা। এতে দুর্ভোগে পড়েছেন শহরবাসী।
১৮৮৭ সালের পয়লা জুলাই স্থাপন করা হয় টাঙ্গাইল পৌরসভা, বর্তমানে যার আয়তন ২৯.৪৩ বর্গকিলোমিটার। ১৮টি ওয়ার্ডের প্রথম শ্রেণির এই পৌরসভায় সড়কের সংখ্যা ৫৯০টি।
টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স বিভাগ জানায়, পৌরসভার লাইসেন্সপ্রাপ্ত অটোরিকশার সংখ্যা সাড়ে চার হাজার। আর পায়ে চালিত রিকশা রয়েছে পাঁচ হাজার।
অটোরিকশার লাইসেন্স ফি ১০ হাজার ৫০০। আর পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স ফি এক হাজার টাকা।
টাঙ্গাইলে পৌরসভা নির্ধারিত ১০ হাজার ৫০০ টাকা ফির পরিবর্তে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশাগুলোর পেছনে চালকের বসার সিটের নিচে সাঁটানো হয়েছে টাঙ্গাইল পৌরসভার লাইসেন্স। পৌরসভার বর্তমান মেয়র এস.এম সিরাজুল হক আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বছর মেয়াদি ওই লাইসেন্সগুলো ২০২২ সালে দ্বিতীয় দফায় অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
কিছু রিকশার লাইসেন্সের মেয়াদ ২০২২ থেকে ২০২৩ সালের ৩০ জুন। ওই রিকশাগুলোর লাইসেন্সের মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
তৃতীয় দফায় স্বাক্ষরিত রিকশা লাইসেন্সের মেয়াদ হয়েছে ২০২৩ সাল থেকে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
এর আগেও তৎকালীন টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র দেন চার হাজার ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স, যাতে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ ছিল। শহরজুড়ে এ সময় লাগামহীন যানজট লেগে থাকায় ওই চার হাজার অটোরিকশা চলাচলে দুই শিফট চালু করা হয়।
তখন থেকে প্রতি শিফটে ২ হাজার করে অটোরিকশা চলাচল শুরু করে। বর্তমানে শহরজুড়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার পাশাপাশি চলাচল করছে প্রায় আট হাজার ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশা। এ ছাড়াও রয়েছে লাইসেন্সপ্রাপ্ত সাড়ে পাঁচ হাজার পায়ে চালিত রিকশা।
টাঙ্গাইল পৌরসভায় অটোরিকশাগুলো দুই শিফট পদ্ধতিতে চলাচল করলেও সাত সহস্রাধিক মেট্রো রিকশা চলছে দিনভর।
এর বাইরে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছোট-বড় ১২৮টি পরিবহন, সরকারি বেসরকারি অফিস, ব্যাংক, বিমা, আদালতের যানবাহন, চিকিৎসক ও ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ির পাশাপাশি গড়ে প্রতিদিন তিন সহস্রাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করছে টাঙ্গাইল শহরে। এর ফলে শহরের প্রধান প্রধান সড়কের বেবীস্ট্যান্ড, শান্তিকুঞ্জ মোড়, মেইন রোড, নিরালা মোড়, পার্কবাজার মোড়, ক্যাপসুল মার্কেট, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, সুপারি বাগান মোড়, কলেজ গেট আর নতুন বাস টার্মিনাল এলাকায় নিয়মিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে যানজট।
যানজট নিরসনে মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করলেও হিমশিম খাচ্ছেন তারা। এতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন রোগী, শিশু, বৃদ্ধ, নারীসহ নানা বয়সী যাত্রী ও সাধারণ মানুষ।
চালকদের অভিযোগ, এর আগে পৌরসভা নির্ধারিত ১০ হাজার ৫০০ টাকা ফির ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার লাইসেন্স এক থেকে দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বর্তমান পৌর প্রশাসন দায়িত্ব নেয়ার পর এক বছর মেয়াদি পায়ে চালিত রিকশার এক হাজার টাকার লাইসেন্স বিক্রি করেছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায়। মেট্রো রিকশার লাইসেন্সের কথা বলে অতিরিক্ত ওই টাকাগুলো নেয়া হয়েছে।
মেট্রো রিকশার চালক মো. পলাশ জানান, তিন বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছেন। রিকশা ও গদি আটকে রেখে তাদের লাইসেন্স নিতে বাধ্য করা হয়েছে। লাইসেন্স ছাড়া চালানো যাচ্ছিল না বলেই তিনি বাধ্য হয়ে লাইসেন্সটি নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকায় পৌরসভা থেকে লাইসেন্স বিক্রি করা হলেও দেড় মাস আগে মুসলিমপাড়ার একজন গ্যারেজ মিস্ত্রির মাধ্যমে ১২ হাজার টাকায় লাইসেন্সটি নিয়েছেন তিনি। সুদের টাকায় রিকশা আর লাইসেন্সটি কিনেছেন তিনি।
মেট্রো রিকশার চালক মো. হযরত জানান, পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্স বইয়ের মধ্যে ‘ইজিবাইক’ লেখা আছে বলেই তিনি লাইসেন্সটি নিয়েছেন ২০ হাজার টাকায়। তার লাইসেন্স নম্বর ৮২৫। টাকাগুলো নিয়েছে পৌরসভার লোকজন।
চালক রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পৌরসভা থেকে মেট্রো রিকশা লাইসেন্স আর নম্বর প্লেট বিক্রি করার সুযোগে তারা এই ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাচ্ছেন। পৌরসভার লোকজন লাইসেন্স ও প্লেট বিক্রি করেছেন। এ কারণে এই রিকশা বন্ধ হচ্ছে না।
‘এরপরও যদি সরকারিভাবে এই রিকশা চলাচল বন্ধ করে, তাহলে অন্য কাজ করে খাব।’
৯৯৫ নম্বর লাইসেন্সপ্রাপ্ত মেট্রো রিকশাচালক রফিক বলেন, ‘৪৩ হাজার টাকায় পুরাতন রিকশাটি কিনেছি। মাসে ১২০০ টাকা ভাড়ায় লাইসেন্সটি নিয়েছি।
‘আদি টাঙ্গাইল এলাকার রিকশা গ্যারেজ ব্যবসায়ী আকবরের কাছ থেকে পৌরসভার লাইসেন্সটি কিনেছিলাম।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশন ও যুবাদের জন্য ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়ে অবৈধ মেট্রো রিকশা বৈধতা দেয়ার ষড়যন্ত্র চালানো হচ্ছে। দ্রুত অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো বন্ধে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের পদক্ষেপ নেয়া উচিত।’
করোনেশন ড্রামাটিক ক্লাব তথা সিডিসির নাট্য সম্পাদক ও শিশুদের জন্য ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান সাম্য বলেন, ‘সড়ক অনুপাতে যানবাহন দ্বিগুণ হওয়ায় শহরজুড়ে বৃদ্ধি পেয়েছে যানজট। যানজটের অন্যতম কারণ হচ্ছে ব্যাটারিচালিত রিকশা। পৌরসভা পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্সের নামে আর মোটা টাকার বিনিময়ে দিয়েছে ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশার লাইসেন্স।
‘পায়ে চালিত রিকশার লাইসেন্স ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। সেখানে নেয়া হয়েছে ২২ হাজার থেকে ২৩ হাজার টাকা। গরিবের টাকা অমানবিকভাবে হরিলুট হচ্ছে। এর প্রভাব তীব্র যানজট ভোগ করছেন সাধারণ মানুষ।’
তিনি আরও বলেন, সরকারের মনোনীত মেয়র এই হরিলুটের অন্যতম বলে দাবি করেছেন তিনি। এর ফলে সরকারের প্রতি মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হচ্ছে। ১,২০০ টাকার লাইসেন্স ২২,০০০ থেকে ২৩,০০০ হাজার টাকায় বিক্রির মত বড় একটি অনিয়ম প্রশাসন, রাজনৈতিক, সামাজিক ও সংস্কৃতিবিদ সকলে জানা সত্ত্বেও এর কোন প্রতিকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবদুস সবুর বলেন, ‘টাঙ্গাইল পৌরসভা থেকে চলাচলের জন্য ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশাগুলোকে পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্স দিয়েছে। লাইসেন্স দেয়ার দায়িত্ব তাদের না। পৌরসভার মেয়র পায়ে চালিত রিকশা লাইসেন্স দিয়েছেন মেট্রো রিকশায়।
‘ব্যাটারিচালিত মেট্রো রিকশা আমাদের সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত, তবে এই লাইসেন্স দেয়া নিয়ে পৌরসভার মেয়র আমাদের সাথে কোনো মিটিং করেননি।’
ওই সময় ইজিবাইক বন্ধে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্যের বিষয়টি মেয়রের বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র এস.এম. সিরাজুল হক আলমগীরের মোবাইল ফোনে কল দিলে তার ব্যক্তিগত সচিব (পিএস) সাজ্জাদ রিসিভ করে বলেন, ‘এ ব্যাপারে সাক্ষাতে কথা বলা হবে। মেয়র সাহেব ব্যস্ত আছে।’
পরে পৌরসভার কার্যালয়ে যাওয়ার পর মেয়রের পিএস বলেন, ‘কোনো প্রকার বক্তব্য দেয়া হবে না।’
সড়ক পরিবহনবিষয়ক জাতীয় টাস্কফোর্সের ২০২১ সালের ২০ জুনের সভায় দুর্ঘটনা রোধে সারা দেশে ব্যাটারিচালিত রিকশা ও ভ্যান বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর সারা দেশে চলা অবৈধ ব্যাটারিচালিত ৪০ লাখ ইজিবাইক বন্ধের নির্দেশসহ আমদানি ও ক্রয়-বিক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা এবং অবৈধ ইজিবাইক আমদানি থেকে বিরত থাকতে কর্তৃপক্ষের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে রুল জারি করে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ।
আরও পড়ুন:দুর্নীতির অভিযোগ থাকায় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়, খুলনা-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শেখ সালাউদ্দিন, তার ভাই শেখ সোহেল ও শেখ জালাল উদ্দিন রুবেলের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন আদালত।
আজ বৃহস্পতিবার দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিব এ আদেশ দেন।
দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম গণমাধ্যমকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিন দুদকের পক্ষে সংস্থাটির উপ-পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে আবেদন করেন।
আবেদনে বলা হয়, বিগত সরকারের সাবেক মন্ত্রী ও বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অকল্পনীয় অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট এই ব্যক্তিরা তাদের নামে অবৈধভাবে অর্জিত সম্পত্তি হস্তান্তর করে বিদেশে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন মর্মে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়।
তারা বিদেশে পালিয়ে গেলে তদন্ত কার্যক্রম দীর্ঘায়িত বা ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অভিযোগটি সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া একান্ত প্রয়োজন।
শুনানি শেষে আদালত তাদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন।
সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের নামে রাজধানীর উত্তরায় থাকা একটি ফ্ল্যাট ও মোট ১৮ কাঠার তিনটি প্লট জব্দের আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ জাকির হোসেন গালিব দুদকের আবেদন মঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুদকের আবেদন সূত্রে জানা যায়, হারুনের নামে থাকা পৃথক তিনটি প্লট রাজধানীর উত্তরায় অবস্থিত। এছাড়াও জব্দের আদেশ দেয়া ১৫৭০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটটিও উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে অবস্থিত।
এদিন হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আবেদন করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) উপপরিচালক মোহাম্মদ জয়নাল আবেদীন।
আবেদনে বলা হয়, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে সাবেক ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের বিরুদ্ধে দেশে-বিদেশে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধানাধীন রয়েছে।
অনুসন্ধান চলাকালে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, তিনি এসব সম্পদ বিক্রয় বা হস্তান্তরের চেষ্টা করছেন। এজন্য সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে হারুনের এসব সম্পদ জব্দের আদেশ দেয়া প্রয়োজন।
এর আগে গত ১৯ ফেব্রুয়ারি হারুন অর রশিদের ১০০ বিঘা জমি, পাঁচটি ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট জব্দের আদেশ দেন আদালত। একই সঙ্গে তার নামে বিভিন্ন ব্যাংকের ১০টি হিসাবে থাকা ১ কোটি ২৬ লাখ ৯০ হাজার ৪৬৮ টাকা অবরুদ্ধের আদেশ দেয়া হয়।
পাশাপাশি এদিনই তার ভাই এবিএম শাহরিয়ারের ৩০ বিঘা জমি জব্দ, ১১টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি কোম্পানির শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ দেন ঢাকার আদালত।
রাজধানীর বনানীতে প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম পারভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ বুধবার তাদের গাইবান্ধা ও চট্টগ্রাম থেকে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার করে র্যাব ও পুলিশ।
এর মধ্যে এজাহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মো. মেহেরাজ ইসলামকে (২০) গাইবান্ধা থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-১৩ এবং ৩ নম্বর আসামি মাহাথির হাসানকে (২০) চট্টগ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানা পুলিশ।
বিকেলে র্যাব সদর দপ্তর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রাসেল সারওয়ার মাহাথির হাসানের গ্রেপ্তারের বিষয়িটি দৈনিক বাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।
র্যাব-১৩ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও জ্যেষ্ঠ সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) বিপ্লব কুমার গোস্বামী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে জনা যায়, পাভেজ হত্যা মামলার এজহারনামীয় ১ নম্বর আসামি মেহেরাজ ইসলাম গাইবান্ধায় অবস্থান করছে। পরে গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে গাইবান্ধা সদরের ভবানীপুর গ্রামে অভিযান চলানো হয়। অভিযানে এরশাদ হোসেন নামে এক ব্যক্তির বাড়ি থেকে মেহরাজ ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিকে বনানী থানার ওসি মো. রাসেল সারওয়ার দৈনিক বাংলাকে বলেন, তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে পারভেজ হত্যা মামলার ৩ নম্বর এজাহারনামীয় আসামি মাহাথির হাসানের অবস্থান শনাক্ত করা হয়। পরে গতকাল সকালে চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে বনানী থানায় আনা হয়েছে।
এর আগে গত রোববার রাতে পারভেজ হত্যা মামলায় তিন আসামিকে রাজধানীর মহাখালী ও আশপাশের এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তারা হলেন- আল কামাল শেখ ওরফে কামাল (১৯), আলভী হোসেন জুনায়েদ (১৯) এবং আল আমিন সানি (১৯)। তাদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৭ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া গত সোমবার রাতে কুমিল্লার তিতাস উপজেলার মনাইরকান্দি গ্রাম থেকে হৃদয় মিয়াজি (২৩) নামে মামলার এজহারনামীয় আরেক আসামিকে গ্রেপ্তার করে র্যাব ১ ও র্যাব-১১ ব্যাটালিয়নের যৌথ দল। পরে গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে তাকে বনানী থানায় হস্তান্তর করা হয়। সব মিলিয়ে পারভেজ হত্যা মামলায় ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকেল প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে একটি দোকানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রী সিঙ্গারা খাচ্ছিলেন। একই সময় পারভেজ তার বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় হাসছিলেন। ইউনিভার্সিটি অব স্কলার্সের দুই ছাত্রীর অভিযোগ পারভেজ তাদের দেখে হাসছিলেন। তাদের মধ্যে একজন প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী পিয়াসের বান্ধবী। পরে বান্ধবীরা মুঠোফোনে খবর দিলে পিয়াস ও তার দুই বন্ধু মেহরাজ ও মাহথির এসে পারভেজের সঙ্গে তর্ক-বিতর্কে জড়ান। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি হয়। পরে বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়।
একপর্যায়ে দুই পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি মীমাংসার করে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পর পারভেজকে একদল যুবক ছুরিকাঘাত করে। তার বুকে ছুরিকাঘাত করা হয়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় পরদিন রোববার তার ভাই হুমায়ুন কবির প্রাইম এশিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও বহিরাগতসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত পরিচয় ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে বনানী থানায় মামলা করেন।
রাজধানীসহ সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে গত ২৪ ঘন্টায় ১ হাজার ৬১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ৯০৬ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৭০৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, এসব অভিযানে বিভিন্ন ধরণের অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা অস্ত্রের মধ্যে রয়েছে- ১টি দেশীয় পাইপগান, ১টি একনালা বন্দুক, ১ রাউন্ড কার্তুজের খোসা ও ২ রাউন্ড অকেজো কার্তুজ উদ্ধার করা হয়।
এর আগে গত সোমবার ২৪ ঘন্টায় সারাদেশে বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ জনকে। তার মধ্যে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত ১ হাজার ১৩ জন আসামি এবং অন্যান্য ঘটনায় ৬১৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তার আগে গত রোববার ২৪ ঘণ্টায় বিশেষ অভিযানে ১ হাজার ৫৩৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল।
দেশের বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে বলেও জানিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তর।
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি আগামীকাল।
সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে দেখা যায় মামলাটি বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান ও বিচারপতি মো. সগীর হোসেনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চে বিষয়টি আগামীকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে মূলতবি/নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত শুনানির জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে প্রধান বিচারপতি আলোচিত এই মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য এই হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠান।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। এই ঘটনায় করা মামলার বিচার শেষে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালত দুজনকে মৃত্যুদণ্ড, ছয়জনকে যাবজ্জীবন ও সাতজনকে খালাস দিয়ে রায় দিয়েছিলেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক বরখাস্ত লিয়াকত আলী ও টেকনাফ থানার বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশ।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের বরখাস্ত উপ-পরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত, সাগর দেব, রুবেল শর্মা, টেকনাফ থানায় পুলিশের করা মামলার সাক্ষী টেকনাফের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের নুরুল আমিন, মো. নেজামুদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
বিচারিক আদালতের রায়ের পরে নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের দণ্ডাদেশ অনুমোদনের জন্য ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে। অন্যদিকে, দণ্ডিত আসামিরা আপিল ও জেল আপিল করেন।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলায় পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পড়ে গেছে বলে দাবি করা হয়েছে, সঠিক নয়।
মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগে নতুন উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এমন তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রচারিত সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথিপত্র ডিবি হেফাজতে পুড়ে যাবার তথ্যটি সঠিক নয়।’
‘সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের সময় আরও ছয় মাস বাড়ানো হয়েছে। এ নিয়ে কেউ কেউ ডিবির নথি পুড়ে যাওয়ার নিউজ করছেন, যা সঠিক না,’ যোগ করেন তিনি।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আদালতে আগুনে এসব নথি পুড়ে যাওয়ার কথা বলা হয়নি। এডিশনাল অ্যাটর্নি জেনারেল আরশাদ রউফ বলেছেন, ডিবির অধিকাংশ অফিসার বদলি হওয়ায় পুরনো নথি খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ।’
‘এ জন্য রাষ্ট্রপক্ষ নয় মাস সময় চাইলে বাদীপক্ষ তিন মাস সময়ের কথা বলেন। পরবর্তীতে আদালত ছয়মাস সময় দেন,’ যোগ করেন তিনি।
এরআগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশ করা হয়েছে, সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার ডিবিতে থাকা নথি আগুনে পুড়ে গেছে বলে হাইকোর্টকে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আরসাদুর রউফ বলেন, ‘আমি এমন কোনো কথা কখনোই বলিনি। সাগর-রুনি হত্যা মামলার নথি পোড়েনি। আমি বলেছি, এটা পুরনো মামলা।’
ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে রাজধানীর গুলশান থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (২১ এপ্রিল) রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা ডিবি তাকে গ্রেফতার করেছে।
ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, ঢাকা-৫ আসনের সাবেক এমপি কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে গ্রেফতার করেছে ডিবি। আজ বিকেলে রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
কাজী মনিরুল ইসলাম মনু ২০১৬ সাল থেকে যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০০৩ সালে তিনি বৃহত্তর ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। তিনি ১৯৭৭ সালে অবিভক্ত ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড ১ বার ও ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের দুইবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন।
২০২০ সালের ৬ মে ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা মারা গেলে শূন্য আসনে একই বছরের ১৭ অক্টোবর উপ-নির্বাচন তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
মন্তব্য