গাজীপুরের কালিয়াকৈরে বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সংরক্ষিত বনাঞ্চলে কয়েক দিন পরপর জ্বলে ওঠে রহস্যজনক আগুন। গত শনিবার দুপুরেও দুর্বৃত্তের আগুনে পুড়েছে বনাঞ্চল। এতে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। আগুন আতঙ্কে থাকেন আশপাশের মানুষজন। স্থানীয়দের অভিযোগ- শালবন ধ্বংস করে সেখানে বনের প্লট তৈরির লক্ষ্যে এভাবে আগুন জ্বালিয়ে দিচ্ছে দুর্বৃত্তরা।
এলাকাবাসী ও বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ও কাচিঘাটা রেঞ্জের আওতায় হাজার হাজার একর সংরক্ষিত বনভূমি আছে। এসব বনভূমির বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠলেও বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে বনাঞ্চল। আর প্রতি বছরের এই মৌসুমে কয়েক দিন পরপর বিভিন্ন এলাকায় বনাঞ্চলে হঠাৎ আগুন জ্বলে ওঠে। আর দুর্বৃত্তের দেওয়া ওই আগুন আশপাশের ঘরবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ার আতঙ্কে থাকেন সেখানকার বসবাসরত মানুষজন। গত শনিবার দুপুরেও উপজেলার চন্দ্রা রেঞ্জের বোয়ালি বিট অফিসের আওতাধীন পাঠাতা মৌজায় বারবাড়িয়া এলাকায় বনাঞ্চলে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। খবর পেয়ে স্থানীয় বনবিভাগের লোকজন সেখানে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আগুন নেভাতে পারেনি। অথচ আগুন লাগলে বন রক্ষায় কেন তারা ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয় না এমন প্রশ্ন ছুড়েন এলাকাবাসী? ফলে বেশিক্ষণ আগুন জ্বলে ওই এলাকায় ২-৩ একর বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। এতে বনভূমি ধ্বংসের পাশাপাশি মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়েছে জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। আগুনে পুড়ে বন্যপ্রাণী, কীটপ্রতঙ্গ কিংবা বিরল প্রজাতির বিভিন্ন গাছপালাও ধ্বংস হচ্ছে। তবে এসব বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে অচিরেই বনাঞ্চল ধ্বংস হবে বলেও মন্তব্য করেছেন নানা মহলের মানুষ।
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন সময় কখনো বনবিভাগের কার্যালয়ের সামান্য দূরে, কখনো সড়কের পাশে, আবার কখনো গভীর বনে কয়েক দিন পরপর আগুনে পুড়ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। দুর্বৃত্তরা আগুন জ্বালিয়ে দিলেও অনেক সময় জানেন না বলেও জানান তারা, বিষয়টি রহস্যজনক। আসলে বনকর্মীদের উদ্দেশ্য প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস করা। এরপর পতিত বনভূমিতে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আকাশমনি প্লট বরাদ্দের নামে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। এ কারণেই আগুন নিভিয়ে বনাঞ্চল রক্ষার কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। এ ছাড়া একই লক্ষ্যে এই অসময়েও ওই বোয়ালি বিট অফিসের আওতাধীন নিশ্চিন্তপুর এলাকাসহ কয়েকটি স্থানে বন কেটে পরিষ্কার করাচ্ছেন তারা। প্রকাশ্যে বনের গাছও কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এসব বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের নামে মামলা করাসহ নানা ধরনের হুমকিও দেন বনবিভাগের লোকজন। তাই ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চান না।
এ ব্যাপারে বোয়ালি বিট কর্মকর্তা আবু ইউনুছ জানান, বারবাড়িয়া আগুনের খবর পেয়ে আমরা নেভানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু আমাদের সামান্য জনবল দিয়ে আগুন নেভানো সম্ভব হয় না। এর আগের কয়েকটি স্থানে বনে আগুন দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এসব ঘটনায় জিডি করা আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আগুনে পুড়ে ছাই সার হয়ে জমিতে নামবে এমন লক্ষ্যে পাশের জমিওয়ালা আগুন দিতে পারেন। তবে প্লট বরাদ্দের জন্য এমন আগুনের ঘটনা অস্বীকার করেন তিনি।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দেখা করে ‘অতি গোপনীয়’ অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আব্দুল্লাহ। তবে কী নিয়ে বা কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন, তা প্রকাশ করেননি তারা।
আজ বুধবার দুপুর আড়াইটার দিয়ে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে তাদের এই বৈঠক হয়েছে। পরে হাসনাত আব্দুল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কিছু অভিযোগ নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে এসেছি। আমাদের অভিযোগগুলো লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
কী ধরনের অভিযোগ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভেরি কনফিডেনসিয়াল (অতি গোপনীয়)।’ কাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ– এ প্রশ্নে সরাসরি উত্তর না দিয়ে হাসনাত বলেন, ‘এটিও ভেরি কনফিডেনসিয়াল। এখন কনফিডেনসিয়াল বিষয় বলে দিলে তো আর কনফিডেনসিয়াল থাকলো না। তাছাড়া অপরাধীরা তখন সতর্ক হয়ে যাবে।’
এসময় সারজিস সারজিস আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘অতীতে দুদককে ব্যবহার করে অনেকে সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। অনেক সাধারণ মানুষকে আবার বিনা অপরাধে হয়রানি করা হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই সময়ে এসেও এখন আমরা সেটি প্রত্যাশা করি না। আমাদের কিছু অভিযোগ ছিল, যা আমরা সেগুলো লিখিতভাবে জানিয়েছি। সেজন্যই আমরা এখানে এসেছি। এর বেশি কিছু বলছি না এখন।’
ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, হালাল টাকা খরচ করে হজ করতে হবে। হারাম টাকা দিয়ে ইবাদত হয় না।
তিনি আজ সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে হজযাত্রী প্রশিক্ষণ, ২০২৫-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, মানুষের মধ্যে সুদ, ঘুস বা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ আয় করার প্রবণতা আছে। তবে অসৎপথে উপার্জিত অর্থে হজ কবুল হবে না।
হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, কোন দুর্নীতিবাজ, লুটেরা, সুদখোর বা ঘুসখোর যখন হারাম শরীফে গিয়ে বলে, আল্লাহ আমি হাজির। তখন ফেরেশতারা সমস্বরে বলতে থাকেন, তোমার হাজিরা কবুল হয়নি।
তিনি সকলকে সৎপথে অর্থ উপার্জনের অনুরোধ জানান।
ধর্ম উপদেষ্টা আরো বলেন, হজব্রত পালনে শারীরিক কষ্ট ও অর্থ ব্যয়ের প্রশ্ন জড়িত রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে পরিবহন সেবা নাও পাওয়া যেতে পারে। পায়ে হেঁটে মিনা-আরাফা-মুজদালিফায় যেতে হতে পারে। হাজিদেরকে কষ্ট বা ত্যাগ স্বীকারের মানসিকতা থাকতে হবে। সবকিছু সহজে মেনে নিতে হবে। আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করতে হবে।
প্রশিক্ষণের গুরুত্ব তুলে ধরে উপদেষ্টা বলেন, প্রশিক্ষণ মানুষকে কুশলি করে তোলে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই কর্মে সিদ্ধিলাভ করা যায়। যত বেশি মনোযোগ সহকারে হজ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা যাবে, হজের আনুষ্ঠানিকতা পালন তত বেশি সহজ হবে।
তিনি হজযাত্রীদেরকে মনোনিবেশ সহকারে প্রশিক্ষণ গ্রহণের অনুরোধ জানান।
হজযাত্রীদেরকে ভাগ্যবান অভিহিত করে ড. খালিদ বলেন, হজ ভাগ্যের ব্যাপার। টাকা কিংবা বিত্তবৈভব থাকলেই হজ করা যাবে, একথা ঠিক নয়। অনেকের টাকা থাকা সত্ত্বেও আজ যাবে, কাল যাবে করে যেতে পারে না। মানুষ যখন মায়ের পেটে থাকে, তখনই কে কতদিন দুনিয়ায় থাকবে, কী পরিমাণ রিজিক পাবে, সৎকর্ম করবে কিনা বা হজ করতে পারবে কি না- এ বিষয়গুলো নির্ধারিত হয়ে যায়।
কবুল হজের ফজিলত বর্ণনা করে ড. খালিদ বলেন, কবুল হজের প্রতিদান হলো জান্নাত। হাজিদেরকে আল্লাহ সদ্য ভূমিষ্ঠ শিশুর মতো নিষ্পাপ করে দেন।
হজ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. মতিউল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য প্রদান করেন- ধর্ম সচিব একেএম আফতাব হোসেন প্রামাণিক, হাবের সভাপতি সৈয়দ গোলাম সরওয়ার, হজ অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মঞ্জুরুল হক ও হাবের মহাসচিব ফরিদ আহমেদ মজুমদার।
এ সময় উপদেষ্টার একান্ত সচিব ছাদেক আহমদ ও হজ অফিসের পরিচালক মো. লোকমান হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
উল্লেখ্য, ঢাকা জেলার বেসরকারি মাধ্যমে হজযাত্রীদের মধ্য হতে আজ দুটি ব্যাচে সাত শতাধিক হজযাত্রীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। আগামী ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত এ প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলবে।
সম্প্রতি শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মিয়ানমারের উদ্দেশে ত্রাণ, জরুরি চিকিৎসাসামগ্রী ও অন্যান্য মানবিক সহায়তা নিয়ে গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ‘বানৌজা সমুদ্র অভিযান’ চট্টগ্রাম বন্দর ত্যাগ করেছে। ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে জাহাজটি প্রায় ১২০ টন ত্রাণসহ মিয়ানমারের উদ্দেশে যাত্রা করে। ত্রাণবাহী এই জাহাজের যাত্রার প্রাক্কালে নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান ত্রাণসামগ্রী প্রেরণে গৃহীত কার্যক্রম পরিদর্শন করেন এবং গমনকারী সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। আশা করা হচ্ছে, জাহাজটি আগামী ১১ এপ্রিল মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুন বন্দরে পৌঁছাবে। সেখানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমার সরকারের প্রতিনিধি দলের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ত্রাণসামগ্রী হস্তান্তর করা হবে। বাংলাদেশের অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পৃষ্ঠপোষকতা ও সার্বিক তত্ত্বাধানে এই সহায়তা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, সশস্ত্র বাহিনী, সেনা কল্যাণ সংস্থা এবং রেড ক্রিসেন্টের সহযোগিতায় প্রাপ্ত ১২০ টন ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে রয়েছে ৭৭ টন শুকনা খাবার, ৯ টনেরও অধিক তাঁবু এবং ব্যবহারযোগ্য বস্ত্রাদি, ২৯ টন বিশুদ্ধ খাবার পানি, ৪ টন হাইজিন কিট এবং প্রায় ১ টন প্রয়োজনীয় ওষুধ সামগ্রী।
এই অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা মিয়ানমারের ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং তাদের দুর্ভোগ লাঘবে সহায়ক হবে। গত ২৮ মার্চ মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডে সংঘটিত ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে দুই ধাপে সেনাবাহিনী ও বিমান বাহিনীর পরিবহন বিমানের মাধ্যমে ৩১.৫ টন ত্রাণ সামগ্রী, উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তাকারী দল প্রেরণ করেছে। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের দুর্যোগকালীন সময়ে বাংলাদেশের এই সহানুভূতিশীল পদক্ষেপ দুই দেশের পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাসকে আরও বর্ধিত করবে এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে আরও সুদৃঢ় করবে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী ২০২৩ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্কে বিমানযোগে ত্রাণ এবং উদ্ধার ও চিকিৎসা সহায়তা দল প্রেরণ এবং ২০২৩ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’-তে বিপর্যস্ত মিয়ানমারের জনগণকে জাহাজযোগে ত্রাণ সহায়তা প্রেরণ করেছিল। ভবিষ্যতেও যেকোনো জাতীয় ও বৈদেশিক দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের নীতিমালার আলোকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
দেশের ৯টি শিক্ষা বোর্ডের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে এক যোগে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ বছর ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থী দেশের বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
এরই মধ্যে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সম্পূর্ণ নকলমুক্ত পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। প্রশ্নপত্র ফাঁস, গুজব, নকল বা অসদুপায় অবলম্বনের সাথে জড়িতদের ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছে কমিটি।
ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের রুটিন অনুযায়ী ১০ এপ্রিল শুরু হয়ে পরীক্ষা চলবে ১৩ মে পর্যন্ত। এবারও বাংলা প্রথমপত্রের পরীক্ষা দিয়ে শুরু হবে এসএসসি পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ হবে বাংলা (আবশ্যিক) দ্বিতীয় পত্রের ও সহজ বাংলা দ্বিতীয় পত্র দিয়ে। নির্দিষ্ট দিনগুলোতে সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টা পর্যন্ত তত্ত্বীয় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ব্যবহারিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ১৫ থেকে ২২ মে পর্যন্ত।
এ বছর ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পরীক্ষার্থী রয়েছে ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এরমধ্যে ছাত্র ৭ লাখ এক হাজার ৫৩৮ জন এবং ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি, প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ১৮ হাজার ৮৪টি।
মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থী রয়েছে ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। এরমধ্যে ছাত্র এক লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। এই বোর্ডের অধীনে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি। প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯ হাজার ৬৩টি।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সর্বমোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এরমধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
বাংলাদেশের শিল্প খাতের বিকাশ ও বিপুল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান এবং বৈদেশিক আয়ে অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ কোরিয়ান রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেডে) পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইয়াংওয়ান করপোরেশনের চেয়ারম্যান কিহাক সাংকে দেওয়া হয়েছে সম্মান সূচক নাগরিকত্ব।
চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী দিনে আজ বুধবার তার হাতে এই স্বীকৃতি তুলে দেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। এর মাধ্যমে একজন বিদেশি বিনিয়োগকারী হিসেবে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় বিশেষ ভূমিকা রাখার জন্য তিনি পেলেন এই দেশের নাগরিক না হয়েও ‘সম্মানিত নাগরিক’ মর্যাদা।
বুধবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলন-২০২৫ এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে সিহাক সাংয়ের হাতে নাগরিকত্বের প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট তুলে দেওয়া হয়।
বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে কিহাক সাং তার প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, ‘সম্মানসূচক নাগরিকত্ব পেয়ে আমি সত্যিই গর্বিত।’
কিহাক সাং বাংলাদেশে সর্বোচ্চ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অন্যতম। ১৯৮০ সাল থেকে তিনি বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন।
কিহাক সাংসহ মোট পাঁচজন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়।
উদ্ভাবনে-ফ্যাব্রিক লাগবে লিমিটেড, বিদেশী বিনিয়োগে-বিকাশ, স্থানীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্কয়ার ফার্মাসিটিক্যালস এবং ওয়ালটনকে এক্সেলেন্স ইন ইনভেস্টমেন্ট অ্যাওয়ার্ডে ভূষিত করা হয়েছে।
প্রধান উপদেষ্টা এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের হাতে অ্যাওয়ার্ড তুলে দেন।
যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশ বিষয়ক বাণিজ্য দূত ব্যারোনেস রোজি উইন্টারটন, ইন্ডিটেক্সের সিইও অস্কার গার্সিয়া মাসেইরাস এবং অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর বিনিয়োগ বাংলাদেশে বিনিয়োগ প্রসঙ্গে তাদের মতামত তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ নিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মূখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ এবং প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম প্রমুখ।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী।
কিহাক সাং বাংলাদেশের শিল্পের সঙ্গে যে তার যাত্রা শুরু করেছিলেন, এখন তা এক শিল্প সামাজ্যে রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয়, আশির দশকে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প উদ্যোক্তাদের মধ্যে তিনি ছিলেন প্রধম বিদেশি বিনিয়োগকারী।
ইয়াংওয়ান ১৯৮০ সালের মে মাসে টেক্সটাইল ও অ্যাপারেল রপ্তানি খাতে প্রথম বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এই শিল্পে নারী কর্মসংস্থানের পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্বকে বদলে দিতে বাংলাদেশে ব্যবসা নিয়ে আসার জন্য বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
‘বিশ্বকে বদলে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ ক্রেজি আইডিয়ার দেশ... বাংলাদেশ তা সম্ভব করেও তুলছে,’ আজ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে বাংলাদেশ বিনিয়োগ শীর্ষ সম্মেলন-২০২৫ এর উদ্বোধনী অধিবেশনে ভাষণ দেওয়ার সময় তিনি আজ একথা বলেন।
এ শীর্ষ সম্মেলনের সার্বিক আয়োজন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)।
স্পেন থেকে অস্কার গার্সিয়া, যুক্তরাজ্য থেকে রোজি উইন্টারটন এবং বাংলাদেশ থেকে নাসিম মঞ্জুর অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
বিডা'র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বাংলাদেশে ব্যবসা এবং বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন।
৭ এপ্রিল শুরু হওয়া চার দিনের এই শীর্ষ সম্মেলনে দেশের ক্রমবর্ধমান বিনিয়োগের সুযোগ এবং অর্থনৈতিক সংস্কার তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, জুলাই বিপ্লবের পর সংঘটিত অর্থনৈতিক সংস্কারকে তুলে ধরা এবং টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য দীর্ঘমেয়াদী বিনিয়োগের পাইপলাইন তৈরির লক্ষ্যে এই শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
এ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিনিয়োগকারী, শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়িক নির্বাহী এবং নীতিনির্ধারকগণ।
পহেলা বৈশাখ উদ্যাপনে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি নেই বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদ্যাপন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা-সংক্রান্ত সভাশেষে উপদেষ্টা সাংবাদিকদের এ কথা জানান। এ সময় সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীও উপস্থিত ছিলেন।
উপদেষ্টা বলেন, এ বছর ব্যাপকভাবে বাংলা নববর্ষ পালন হবে। এ বিষয়টি সামনে রেখে এবার নিরাপত্তাও বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা যাতে বিঘ্নিত না হয় তার জন্য যা করা প্রয়োজন সেসব করা হচ্ছে।
নববর্ষ উদ্যাপনকে কেন্দ্র করে কোনো ধরনের নিরাপত্তা হুমকি আছে কি না, জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, কোনো ধরনের সিকিউরিটি থ্রেট (নিরাপত্তা হুমকি) নেই।
অন্তর্বর্তী সরকারের ৮ মাসে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে আপনি কতটা সন্তুষ্ট জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আপনারা যতটুকু সন্তুষ্ট আমিও ততটুকু সন্তুষ্ট।
বাটাসহ বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানির শোরুমে ভাঙচুর করা হয়েছে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। এসব দোকানের সামনে নিরাপত্তা বাড়ানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সারা দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমার দায়িত্ব। যারা এসব ঘটিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সময় পাশে বসা সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, নববর্ষের শোভাযাত্রার নাম মঙ্গল শোভাযাত্রা হবে কি না, এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিদ্ধান্ত নেবে। সেখান থেকেই ১০ তারিখে সিদ্ধান্ত হবে। তবে নাম পরিবর্তন নিয়ে আজকে আলোচনা হয়নি। যেহেতু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এটা আয়োজন করে সেহেতু তারাই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এবারের উৎসবে প্রচুর জনসমাগম হবে। বিভিন্ন জায়গায় মেলাও হচ্ছে। বাঙালি ছাড়াও ২৬টি জাতিগোষ্ঠী এতে অংশগ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছেন সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা।
মন্তব্য