বিডিআর হত্যাকাণ্ডবিষয়ক জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তদন্ত কার্যক্রমে সহায়ক তথ্য দিয়ে কমিশনকে সাহায্য করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে।
প্রায় ১৬ বৎসর পূর্বে সংঘটিত ঘটনার তথ্য উদ্ঘাটন জটিল হলেও কমিশন অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে এগিয়ে যাচ্ছে যাতে করে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে সত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।
কমিশন নজিরবিহীন লোমহর্ষক পিলখানা হত্যাযজ্ঞের ওই ঘটনা বিষয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্য ও সাক্ষ্য আহ্বান করেছে। যে পদ্ধতিতে তথ্য দেওয়া যাবে: ওয়েবসাইটের মাধ্যমে bdr-commission.org, ই-মেইলের মাধ্যমে: [email protected]। এছাড়াও কমিশনে হাজির হয়ে। তাছাড়া কুরিয়ার ও ডাকযোগেও সহায়তা করা যাবে। ঠিকানা: বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস (বিআরআইসিএম), নতুন ভবন (৭ম তলা), ড. কুদরত-এ-খুদা সড়ক (সায়েন্স ল্যাবরেটরি রোড), ধানমন্ডি, ঢাকা-১২০৫। কমিশনকে ঢাকার বাইরে অথবা বাংলাদেশের বাইরে অবস্থানকারী তথ্যদাতার বাসায় যেয়ে বা অন্য যেকোনো স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হলে উল্লেখিত ঠিকানায় যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
হটলাইন (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা: ০১৭৬৯-৬০০২৮১)। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এই বিষয়ে সহায়তাকারী ব্যক্তিবর্গের পরিচয়ের গোপনীয়তা বজায় রাখা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
তথ্যদাতা তার নাম, ফোন, ই-মেইল, ঠিকানা সাবমিট করবেন ওয়েবসাইটে। এর আগে তথ্যের প্রকৃতি নির্বাচন করতে হবে-বেঁচে ফিরে আসা শহীদ পরিবারের ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি, অন্যান্য সাক্ষী বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের বিবৃতি, প্রিন্ট মিডিয়া (খবরের কাগজ), ইলেকট্রনিক মিডিয়া (ইমেজ, ভিডিও, অডিও, নিউজ পেপার) মোবাইল কল রেকর্ড, মোবাইল ম্যাসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বার।
স্বাধীন তদন্ত কমিশনের সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমানের স্বাক্ষরিত এই গণবিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের সাথে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার স্বরূপ উদঘাটন, ঘটনায় রুজুকৃত দুটি মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত, ঘটনার ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার সহযোগী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ঘটনার সংঘটনকারী এবং ঘটনার অপরাপর সংশ্লিষ্ট বিষয় ও অপরাধীদের এবং সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংস্থা, বিভাগ, সংগঠন চিহ্নিতকরণের লক্ষ্যে একটি 'জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন' গঠন করেছে। ইতোমধ্যে উক্ত কমিশনের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।’
কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী কিছু কিছু বিদেশি দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করার বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং এই প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি লিখা হয়েছে। প্রিন্ট এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়াতে পিলখানা হত্যাযজ্ঞ নিয়ে প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে। কমিশন সকল তথ্য সংগ্রহ এবং পর্যালোচনা করেছে।
কমিশন সম্পূর্ণ স্বাধীন ভাবে এবং কোন প্রকার চাপ বা প্রভাব মুক্ত অবস্থায় কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
পিলখানায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনার ১৬ বছর পর অন্তর্বর্তী সরকার যে জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। কমিশন তাদের তদন্তে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ইতোমধ্যে একাধিক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। তদন্ত কমিশন তাদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তপ্রক্রিয়ায় ১৫ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। তারা হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ফজলে নূর তাপস, গোপালগঞ্জ-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শেখ ফজলুল করিম সেলিম, ঢাকা-১৩ আসনের সাবেক এমপি জাহাঙ্গীর কবির নানক, জামালপুর-৩ আসনের সাবেক এমপি মির্জা আজম, ঢাকা-৮ আসনের সাবেক এমপি আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, ৪৪ রাইফেল ব্যাটালিয়নের তৎকালীন অধিনায়ক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ শামসুল আলম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোল্লা ফজলে আকবর, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) মঈন ইউ আহমেদ, সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল (অব.) আজিজ আহমেদ, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ড. হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল কাহহার আকন্দ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক নূর মোহাম্মদ ও পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মনিরুল ইসলাম।
বিজ্ঞপ্তিটি প্রকাশের সাত দিনের মধ্যে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য তাদের সময়সূচি ফোন, ই-মেইল বা চিঠির মাধ্যমে কমিশনকে জানানোর জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। যার সময়সীমা ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
গত বছরের ২৪ ডিসেম্বরে সরকারের এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে কমিশন অফ ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬ এর অধীনে মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমানকে (অবসরপ্রাপ্ত) সভাপতি করে ‘পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সংঘটিত বর্বরতম হত্যাযজ্ঞের’ বিষয়ে ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়। পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ও প্রকৃত ঘটনার উদঘাটন এবং অপরাধীদের চিহ্নিত করতে এই জাতীয় স্বাধীন পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়।
কমিশনকে সময়সীমা উল্লেখ করে দেয়া হয়েছে।
জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি বিষয়ে বলা হয়েছে, ১. ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন বিডিআর সদর দফতর, পিলখানায় সংঘটিত ঘটনার প্রকৃতি ও স্বরূপ উদঘাটন করা।
২. ঘটনাকালে সংঘটিত হত্যাকাণ্ড ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটনকারী, সহায়তাকারী, ষড়যন্ত্রকারী, ঘটনার আলামত ধ্বংসকারী, ইন্ধনদাতা এবং ঘটনা সংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয়সহ দেশি-বিদেশি সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের (ব্যক্তি/ গোষ্ঠী/ সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/ বিভাগ/ সংগঠন) চিহ্নিত করা। ৩ হত্যাকাণ্ডের সময় ও হত্যাকাণ্ডের আগে/পরে সংঘটিত অপরাধের উদঘাটন, দায়ীদের চিহ্নিত করা এবং ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করা সহায়তাকারীদের চিহ্নিত করা। ৪. হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাধ প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের (ব্যক্তি/গোষ্ঠী/সংস্থা/প্রতিষ্ঠান/বিভাগ/সংগঠন) চিহ্নিত করা।
৫. হত্যাকাণ্ডসহ সংঘটিত অপরাধে দায়েরকৃত মামলা এবং সংশ্লিষ্ট মামলায় অভিযুক্তদের অপরাধ অক্ষুণ্ন রেখে সংশ্লিষ্ট মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি- এমন প্রকৃত অপরাধীদেরকে তদন্ত প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করা। ৬. তদন্ত কমিশন বাংলাদেশের যে কোনও স্থান পরিদর্শন এবং সন্দেহভাজন যে কোনও ব্যক্তিকে তলব ও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।
ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের ৫৭ জন চৌকস সেনা কর্মকর্তা ও ১৭ বেসামরিক নাগরিককে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ নির্মম, নৃশংস ও ভয়ংকর হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে রচিত হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। বিদ্রোহের ঘটনার পর সীমান্তরক্ষী বাহিনীর নাম পরিবর্তন করে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি রাখা হয়েছে।
পিলখানায় তৎকালীন বিডিআর সদর দপ্তরে নির্মম ও নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছিল। এরমধ্যে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আনা মামলায় বিচারিক আদালত ও হাইকোর্ট ইতিমধ্যে রায় দিয়েছেন। মামলাটি চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এখন আপিল বিভাগে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
অন্যদিকে বিস্ফোরক আইনে করা মামলায় বিচারিক আদালতে এখনো সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে।
পিলখানায় হত্যাযজ্ঞের ঘটনায় ২০০৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে পৃথক মামলা হয়।
এর মধ্যে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় আসামি করা হয় ৮৫০ জনকে। দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে আসামির সংখ্যার দিক থেকে এটিই দেশে সবচেয়ে বড় মামলা।
বিচারিক আদালত ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর এই মামলার রায় দেন। রায়ে ১৫২ জনকে মৃত্যুদণ্ড, ১৬০ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। রায়ে খালাস পান ২৭৮ জন। রায় ঘোষণার আগে চার আসামি মারা যান। এরপর এই হত্যা মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর শুনানি শেষে তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ ২০১৭ সালের ২৬ ও ২৭ নভেম্বর রায় ঘোষণা করেন। হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০২০ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত হয়। রায়ে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয় ২২৮ জনকে। খালাস পান ২৮৩ জন।
হাইকোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামি মারা গেছেন। হত্যা মামলায় হাইকোর্টের দেওয়া দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামির পক্ষে পৃথক ৭৩টি আপিল ও লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে। যা এখন শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।
সৌদি আরব ও যুক্তরাষ্ট্র একটি চুক্তির প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই চুক্তির অধীনে সৌদির কাছে ১০ হাজার কোটি ডলারের (১০০ বিলিয়ন) বেশি মূল্যের অস্ত্র বিক্রি করবে যুক্তরাষ্ট্র। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ কথা জানিয়েছে। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত ছয়টি সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থাটি বৃহস্পতিবার জানিয়েছে, আগামী মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সৌদি আরব, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরের আগেই এ চুক্তি চূড়ান্ত হতে পারে।
রয়টার্স জানায়, লকহিড মার্টিন, আরটিএক্স করপোরেশন, বোয়িং, নর্থরপ গ্রুম্যান এবং জেনারেল অ্যাটমিকসের মতো শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিগুলো এ চুক্তির আওতায় থাকছে। ট্রাম্পের সফরসঙ্গী হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন শীর্ষ নির্বাহীর যাওয়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।
সূত্রগুলো জানায়, চুক্তির আওতায় সৌদি আরবকে সি-১৩০ পরিবহন প্লেন, ক্ষেপণাস্ত্র এবং রাডার সিস্টেমসহ নানা রকম উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করা হতে পারে।
তবে সৌদি আরব লকহিড মার্টিনের তৈরি অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সাধারণত কেবল ন্যাটোর মিত্র দেশ, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াকে এ যুদ্ধবিমান সরবরাহ করে।
রয়টার্স জানায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সৌদি আরবের সঙ্গে একটি নতুন প্রতিরক্ষা চুক্তির চেষ্টা করেছিলেন, যার লক্ষ্য ছিল ইসরায়েলের সঙ্গে সৌদির সম্পর্ক স্বাভাবিক করা। সেই প্রস্তাবিত চুক্তিতে চীনা বিনিয়োগ সীমিত করা এবং বেইজিং থেকে অস্ত্র কেনা বন্ধের বিষয়টিও ছিল। তবে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত চুক্তিতে এসব শর্ত থাকবে কি না, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
হোয়াইট হাউস কিংবা সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। চুক্তিতে যুক্ত কোনো অস্ত্র নির্মাতা কোম্পানিও রয়টার্সের প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
উল্লেখ্য, সাংবাদিক জামাল খাশোগির হত্যাকাণ্ডের পর ২০১৮ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিতে ব্যাপক বিধিনিষেধ আরোপ করে। ২০২১ সালে মার্কিন কংগ্রেস সৌদি আরবের কাছে আক্রমণাত্মক অস্ত্র বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, বিশেষ করে ইয়েমেন যুদ্ধে দেশটির ভূমিকার প্রেক্ষাপটে।
তবে ২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বৈশ্বিক জ্বালানি সংকট দেখা দিলে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে সৌদি আরবের প্রতি কঠোর অবস্থান শিথিল করে। সবশেষ, ২০২৪ সালে গাজা পুনর্গঠনে সৌদি আরবকে গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে বিবেচনা করে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যা
রোমান ক্যাথলিক ধর্মগুরু পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ইতালির রোমে পৌঁছেছেন।
আজ শুক্রবার বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটের দিকে প্রধান উপদেষ্টা ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী বিমানটি রোমে পৌঁছায়। সেখানে ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত প্রধান উপদেষ্টাকে স্বাগত জানান।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আগামীকাল শনিবার ভ্যাটিকান সিটিতে পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন হবে।
অধ্যাপক ইউনূস আজ দোহা থেকে সরাসরি রোমে যান। তিনি চারদিনের সরকারি সফরে কাতারের রাজধানী দোহায় অবস্থান করছিলেন।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, পোপ ফ্রান্সিসের সঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের ব্যক্তিগত সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ছিল। বন্ধুর প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তিনি পোপের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিতে যাচ্ছেন।
পোপ ফ্রান্সিস গত সোমবার মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। তিনি ১২ বছর রোমান ক্যাথলিক গির্জার সর্বোচ্চ নেতার দায়িত্ব পালন করেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে রেললাইনের পাশ থেকে মোহাম্মদ রফিক (২০) নামের এক তরুণের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর (৯৯৯) থেকে ফোন পেয়ে রফিকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশ বলছে, রফিককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে। তিনি চিহ্নিত ছিনতাইকারী ছিলেন।
বৃহস্পতিবার বিকেলে মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
পুলিশ জানায়, নিহত রফিকের বাড়ি জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জের অফিস তারাটি এলাকায়। রফিক কারওয়ান বাজার এলাকায় ছিনতাই করতেন। চুরি ও ছিনতাইয়ের অভিযোগে তেজগাঁও থানায় তার বিরুদ্ধে আটটি মামলা রয়েছে। চুরি ও ছিনতাইয়ের টাকার ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে বিরোধের জেরে সহযোগীরা তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করেছে।
গতকাল শুক্রবার তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী শামীমুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় জরুরি সেবা নম্বর ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে কারওয়ান বাজার রেললাইনের পূর্ব পাশ থেকে রফিকের ক্ষতবিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার সারা শরীরে ছুরিকাঘাতের চিহ্ন রয়েছে। পরে গতকাল সকালে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয়দের কাছ থেকে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার দুপুরে নিহত রফিকের সহযোগীরা কারওয়ান বাজারে একটি রেস্তোরাঁর সামনে তাকে ছুরিকাঘাত করেন। খবর পেয়ে রফিকের নানী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই তিনি মারা যান। পরে তার মরদেহটি কারওয়ান বাজারে রেললাইনের পাশে রাখা হয়। ঘটনাটি তেজগাঁও থানা এলাকায় হওয়ায় এ ঘটনায় তেজগাঁও থানায় মামলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। গতকাল বৃহস্পতিবার নিজের ফেসবুক পেজে তিনি এ তথ্য নিশ্চিত করেন। একই সঙ্গে বিষয়টি ‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের পর্যায়ে যেতে পারে আশঙ্কায় ওই লাইসেন্স বাতিল করিয়ে পোস্টে ‘বাবার ভুলের জন্য’ ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বাবার ঠিকাদারি লাইসেন্স থাকার বিষয়টি জানিয়ে গত বুধবার রাতে ফেসবুকে পোস্ট দেন এক গণমাধ্যমকর্মী। এর আগে ওই সাংবাদিক বিষয়টির সত্যাসত্য জানতে চেয়েছিলেন আসিফ মাহমুদের কাছে। আসিফ মাহমুদ খোঁজ করে তাকে জানান, তাঁর বাবার লাইসেন্স নেওয়ার বিষয়টি সঠিক। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হতে থাকে।
এরপর গতকাল আসিফ মাহমুদ বিষয়টি নিয়ে নিজেই পোস্ট দিয়ে তার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চান।
আসিফ মাহমুদের দেওয়া পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
‘প্রথমেই আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। গত বুধবার রাত ৯টার দিকে একজন সাংবাদিক কল দিয়ে আমার বাবার নামে ইস্যুকৃত ঠিকাদারি লাইসেন্সের বিষয়ে জানতে চাইলেন। বাবার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হলাম তিনি জেলা পর্যায়ের (জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার এর কার্যালয় থেকে ইস্যুকৃত) একটি লাইসেন্স করেছেন। বিষয়টি উক্ত সাংবাদিককে নিশ্চিত করলাম। তিনি পোস্ট করলেন, নিউজও হলো গণমাধ্যমে। নানা আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে; তাই ব্যাখ্যা দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলাম।
আমার বাবা একজন স্কুল-শিক্ষক। আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূঁইয়া পাবলিক উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। স্থানীয় একজন ঠিকাদার কাজ পাওয়ার সুবিধার্থে বাবার পরিচয় ব্যবহার করার জন্য বাবাকে লাইসেন্স করার পরামর্শ দেন। বাবাও তার কথায় জেলা নির্বাহী ইঞ্জিনিয়ার থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স করেন। রাষ্ট্রের যেকোনো ব্যক্তি ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে যেকোনো লাইসেন্স করতেই পারে। তবে আমি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বরত থাকা অবস্থায় বাবার ঠিকাদারি ব্যবসায় জড়ানো স্পষ্টভাবেই কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট। বিষয়টি বোঝানোর পর আজ (গতকাল) বাবার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।
বাবা হয়তো কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্টের বিষয়টি বুঝতে পারেননি, সে জন্য বাবার পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।
উল্লেখ্য, মধ্যবর্তী সময়ে উক্ত লাইসেন্স ব্যবহার করে কোনো কাজের জন্য আবেদন করা হয়নি।
পহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারতশাসিত কাশ্মীর এবং ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ভ্রমণ নিরুৎসাহিত করা হয়েছে মণিপুর এবং মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিভিন্ন অংশেও। গত বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভারত ভ্রমণের বিষয়ে নতুন নির্দেশনা জারি করেছে। এতে ভারতের যেকোনো জায়গা ভ্রমণে ন্যূনতম দ্বিতীয় মাত্রার সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে দেশটির চারটি অঞ্চল ভ্রমণে সর্বোচ্চ চতুর্থ মাত্রার, অর্থাৎ ভ্রমণ না করার নির্দেশনা দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ।
পহেলগামে মঙ্গলবারের সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের বেশির ভাগই ছিলেন পর্যটক। ২০১৯ সালের পুলওয়ামা হামলার পর এটিই কাশ্মীর উপত্যকায় সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা।
যুক্তরাষ্ট্রের সতর্কবার্তায় বলা হয়েছে, ভারতের কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাসী হামলা এবং সহিংস বেসামরিক অস্থিরতা ঘটতে পারে। এই অঞ্চলটি ভ্রমণ করবেন না (তবে লাদাখ ও এর রাজধানী লেহ সফরের অনুমতি রয়েছে)। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে সম্ভাব্য সশস্ত্র সংঘাতের ঝুঁকি থাকায় ওই অঞ্চল এড়িয়ে চলারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বার্তায় আরও বলা হয়েছে, মাওবাদী চরমপন্থি গোষ্ঠী অথবা নকশালপন্থিরা ভারতের একটি বিশাল অঞ্চলে সক্রিয়। এরা স্থানীয় পুলিশ, আধাসামরিক বাহিনী এবং সরকারি কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে অনেক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে।
এদের হুমকির তীব্রতার কারণে মার্কিন কর্মকর্তাদের বিহার, ঝাড়খণ্ড, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং উড়িষ্যা রাজ্যের বেশিরভাগ অঞ্চলে ভ্রমণের আগে অনুমতি নিতে হবে। তবে তারা যদি কেবল এই রাজ্যগুলোর রাজধানী শহরে ভ্রমণ করেন তবে অনুমতির প্রয়োজন নেই। মার্কিন কর্মকর্তাদের জন্য মহারাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চল এবং মধ্যপ্রদেশের পূর্বাঞ্চলে ভ্রমণেও অনুমোদনের প্রয়োজন হবে।
সহিংসতা এবং অপরাধের হুমকির কারণে মনিপুর ভ্রমণেও সর্বোচ্চ চতুর্থ মাত্রার সতর্কতা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
এছাড়া, জাতিগত বিদ্রোহীদের মধ্যে সহিংসতার কারণে উত্তরপূর্ব ভারতের কিছু এলাকায় ভ্রমণ পুনর্বিবেচনা করার পরামর্শ দিয়েছে মার্কিন কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছে, ভারতে ভ্রমণকারী মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের সিকিম এবং অরুণাচল প্রদেশ রাজ্যে ভ্রমণের আগে এবং আসাম, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার রাজধানী শহরগুলোর বাইরের যেকোনো এলাকা পরিদর্শনের সময় পূর্বানুমতি নিতে হবে।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে মেধাসম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার ও মেধাস্বত্ব সংরক্ষণে সকলকে উদ্যোগী হতে হবে।
তিনি বলেন, বৈশ্বিক সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের অবস্থান সুদৃঢ় করার প্রয়োজনে দেশে শক্তিশালী উদ্ভাবনী সংস্কৃতি গড়ে তুলতে সবাই কার্যকর অবদান রাখবেন-এ প্রত্যাশা করি।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস উপলক্ষ্যে এক বাণীতে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস-২০২৫’ উদযাপনের উদ্যোগকে আমি স্বাগত জানাই। এ বছরের প্রতিপাদ্য- 'আইপি এন্ড মিউজিক : ফিল দ্য বিট অব আইপি' যা বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।"
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, সংগীত এক সর্বজনীন ভাষা, যা হৃদয়ের গভীরে প্রতিধ্বনিত হয় এবং আমাদের ঐতিহ্য ও বৈচিত্র্যময় শিল্পধারাকে প্রতিফলিত করে। লোকগান থেকে শুরু করে আধুনিক গানের মূর্ছনায় আমাদের শিল্পীরা প্রতিনিয়ত বিশ্বকে মুগ্ধ করে চলেছেন।
তিনি বলেন, সংগীত শিল্পের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবন এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির মধ্যে শক্তিশালী সংযোগ গড়ে তুলতে মেধাসম্পদ আইন ও নীতির যথাযথ প্রয়োগ প্রয়োজন। এতে শিল্প ও আধুনিক প্রযুক্তির সমন্বয়ে আমাদের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি আরো ত্বরান্বিত হবে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছাত্র-শ্রমিক-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি বৈষম্যহীন সমৃদ্ধ বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে।
তিনি ‘বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস-২০২৫’ উদযাপন উপলক্ষ্যে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।'
পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা বলেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমার মূল এজেন্ডা তিনটি। গুণগত শিক্ষা, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন ও পরিবেশের উন্নয়ন। এ লক্ষ্যেই আমরা এখন কাজ করছি।
বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে উপদেষ্টার ভাবনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময়ে আমি ওই অঞ্চলের প্রতিটি কর্নারে গিয়েছি। মানুষের অবস্থা জানতে চেয়েছি। প্রতিটি জাতিগোষ্ঠীর অবস্থা জানার চেষ্টা করেছি। প্রত্যেকের প্রয়োজনীয়তাগুলো জানতে চেয়েছি। আমার মনে হয়েছে ওই অঞ্চলের লিডারদের অভিজ্ঞতার প্রয়োজন আছে। খাগড়াছড়ি, বান্দরবন ও রাঙ্গামাটিতে কোথায় কী প্রয়োজন এসব কিছু একজন লিডার এর জানা প্রয়োজন। জেলা পরিষদ ও উন্নয়ন সংস্থাগুলোতে কিছু যোগ্য লিডার আছে। পার্বত্য চট্টগ্রামে সরকার অনেক টাকা পয়সা দিচ্ছে। কিন্তু আমরা সামষ্টিকভাবে কিছু করতে পারছি না। সরকারি অফিসগুলো সামষ্টিকভাবে কিছু করতে পারছে না। সরকারের অনেক টাকা ওই অঞ্চলে গেছে কিন্তু উন্নয়নটা সেভাবে হয়নি।
পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিগোষ্ঠীগুলোর জন্য গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার সব সময় চিন্তা ছিল পার্বত্য চট্টগ্রামে গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করা। আমাদের প্রতিযোগিতায় আসতে হবে। কেননা সব সময় তো আর আমাদের কোটা থাকবে না। এই প্রতিযোগিতায় আসতে হলে আমাদের কিছু ভালো স্কুল, কলেজ প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আমার চিন্তা হলো— স্যাটেলাইট এডুকেশন। এটা করতে হলে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে হোস্টেল তৈরি করতে হবে। ক্লাস থ্রি-ফোর পর্যন্ত পড়ালেখা শেষে বাচ্চারা উপজেলার হোস্টেলে এসে পড়ালেখা করবে ক্লাস এইট পর্যন্ত। এরপর ইন্টামেডিয়েট (উচ্চ মাধ্যমিক) পর্যন্ত পড়বে জেলার হোস্টেলে থেকে। এ জন্য আমাদের উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কিছু ভালো স্কুল করতে হবে। তারা যদি এসব স্কুলগুলোতে থেকে পড়ালেখা করতে পারে তবে তারা যেকোনো পর্যায়ে প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুত হবে। আমি যখন উন্নয়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলাম সেসময় পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় ৪০টি হোস্টেল তৈরির কথা বলেছিলাম। এগুলো হবে কিনা জানি না।
তিনি আরও বলেন, গুণগত শিক্ষা ছাড়াও পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে আমার আরও দুটি এজেন্ডা আছে। ওই অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়ন ও পরিবেশের উন্নয়ন। আমাদের টি-আর সব নারীদের দিচ্ছি। আমার চিন্তা হলো-নারীদের ক্ষমতায়ন করা গেলে পরিবারের সক্ষমতা বাড়বে। পরিবারের সক্ষমতা বাড়লে তাদের সন্তানদের পড়ালেখা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। পাহাড়ের সকল জাতিগোষ্ঠীর ক্যাপাসিটি এক না। এদের প্রত্যেককেই ছোট-বড় সহযোগিতার মাধ্যমে উঠিয়ে নিয়ে আসতে হবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমার তৃতীয় এজেন্ডা পাহাড়ের পরিবেশের উন্নয়ন। পাহাড়ে যত্রতত্র বাড়িঘর তৈরি হচ্ছে। আমি এটার পক্ষে না। আমাদের গবেষণায় দেখা গেছে, পাহাড়ের বড় নদীগুলোতে পানির পরিমাণ কমে গেছে। আমাদের বনভূমি রক্ষা করতে হবে। এ জন্য পানি সংরক্ষণ করে রাখে এমন গাছ লাগাতে হবে। তবেই আমাদের বন আগের অবস্থায় ফিরে যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামকে পর্যটন আকর্ষণীয় করা ও নিরাপত্তার বিষয়ে তিনি বলেন, এই অঞ্চলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার অনেক কিছু আছে কিন্তু সিকিউরিটির অভাব আছে। এগুলো একদিনে হবে না। প্রতিনিয়ত কাজ করে যেতে হবে। পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন হলে পার্বত্য এলাকার অর্থনৈতিক উন্নয়নও হবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে চাঁদাবাজি বন্ধের বিষয়ে তিনি বলেন, দিনদিন আমাদের উন্নয়ন হচ্ছে। আমাদের বাহিনীগুলোও অনেক অবদান রাখছে। কিন্তু নিরাপত্তা নিয়ে এখনো আমাদের কিছু অসুবিধা রয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমাদের কাজ করতে হবে। আমার চিন্তা হলো- চাঁদাবাজি করা লোকদের যদি আমরা চাকরি ব্যবস্থা করার মাধ্যমে পুনর্বাসন করতে পারি তবে আশা করা যায় ওই অসুবিধাটা কমে যাবে।
পার্বত্য চট্টগ্রামের উন্নয়নের মূল প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, সরকার পার্বত্য চট্টগ্রামে উন্নয়নের জন্য সকল দরজা খুলে রাখছে। কিন্তু মূল সমস্যা হলো- আমাদের লোকেরা জানে না কোথায় কোন সুবিধা নিতে হবে। পার্বত্য অঞ্চলে সবচেয়ে ভালো করেছে কৃষি বিভাগ। দেখা গেছে, গাছ লাগিয়েছে পানিও দিচ্ছে কিন্তু গাছে ফল দিচ্ছে না। এটা তো একটা সমস্যা। এর সমাধান কিন্তু কৃষি অফিসে গেলেই পাওয়া যাবে। কিন্তু তারা এটা জানেই না। এজন্য পাহাড়িদের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমার লোকেরা নিজেরাই জানে না কোথায় কী চাইতে হবে।
উপদেষ্টা আরও বলেন, এছাড়া ওই অঞ্চলে অনেক হস্তশিল্প আছে। যেটা তারা কাপড় হিসেবে বিক্রি করে একশো টাকায়। কিন্তু ওইটা ড্রেস হিসেবে বিক্রি করলে হবে সাত শত টাকা। এ জিনিসটাই আমরা তাদের বুঝাতে চেষ্টা করছি। পার্বত্য চট্টগ্রামে আমার একটি প্রজেক্ট চলছে। সেখানে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ৬০-৭০ জন মহিলা কাজ করছেন। তাদের মাধ্যমে কাপড় উৎপাদন করে তা বাজারজাত কীভাবে করা যায় সে চেষ্টা আমরা করছি।
মন্তব্য