নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের অগ্রদূত ও খ্যাতিমান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের নেতৃত্বে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। দলটির নাম রাখা হয়েছে ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’। গতকাল শুক্রবার সকাল ১০টায় রাজধানীর শাহবাগে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের রূপসী বাংলা গ্র্যান্ড বলরুমে (নিচতলা) এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দলটির আত্মপ্রকাশের ঘোষণা দেওয়া হয়।
দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘গড়ব মোরা ইনসাফের দেশ’- এ স্লোগানকে সামনে রেখে রাজনীতির মাঠে যাত্রা শুরু করেছে ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’। দলটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন এবং মহাসচিবের দায়িত্বে আছেন বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ।
অনুষ্ঠানে দলের নাম ও ইশতেহার পাঠ করেন শওকত মাহমুদ। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, প্রতিটি গণঅভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পর সংগ্রামী চেতনায় নতুন রাজনৈতিক দলের জন্ম হয়েছে। তিনি মনে করেন, রাষ্ট্রকে একাত্তরের ও ২০২৪ সালের গণজাগরণের চেতনায় পুনর্গঠন করতে হলে নতুন রাজনৈতিক দলের আবির্ভাব সময়ের দাবি। এ প্রেক্ষাপটে সব ধরনের বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে, জনকল্যাণ, ইনসাফ ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দৃঢ় করতে তারা এ নতুন দল গঠনের ঘোষণা দিচ্ছেন।’
অনুষ্ঠানে দলের ২৭ সদস্যের অ্যাডহক কমিটি ঘোষণা করেন ইলিয়াস কাঞ্চন, যিনি ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান। ঘোষিত কমিটির তথ্য অনুযায়ী, ইলিয়াস কাঞ্চন চেয়ারম্যান এবং গোলাম সারোয়ার মিলন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন রফিকুল হক হাফিজ, ওয়ালিউর রহমান খান, রেহানা সালাম, মো. আবদুল্লাহ, এম এ ইউসুফ এবং নির্মল চক্রবর্তী। মহাসচিব শওকত মাহমুদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এম আসাদুজ্জামান। যুগ্ম মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন এ বি এম রফিকুল হক তালুকদার রাজা, আল আমিন রাজু ও নাজমুল আহসান।
সমন্বয়কারীর দায়িত্বে রয়েছেন নুরুল কাদের সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মুরাদ আহমেদ, প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক গুলজার হোসেন এবং প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন হাসিবুর রেজা কল্লোল।
দলটির সম্মানিত সদস্য হিসেবে রয়েছেন মেজর (অব.) ইমরান এবং কর্নেল (অব.) সাব্বির। উপদেষ্টা পরিষদে রয়েছেন শাহ মো. আবু জাফর, মেজর (অব.) মুজিব, ইকবাল হোসেন মাহমুদ, ডা. ফরহাদ হোসেন মাহবুব, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, আউয়াল ঠাকুর, তৌহিদা ফারুকী ও মামুনুর রশীদ।
নতুন দল গঠনের ঘোষণার আগেই ইলিয়াস কাঞ্চনের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’র চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম সবুজ খান। গতকাল বৃহস্পতিবার পাঠানো ওই নোটিশে উল্লেখ করা হয়, ১৩ মার্চ জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’র আত্মপ্রকাশ করা হয়। এরপর ২০ এপ্রিল দলের নিবন্ধনের জন্য জাতীয় নির্বাচন কমিশনে কাগজপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। তবে মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারা যায়, ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’ নামে একটি নতুন দল গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। এতে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’ ও ‘জনতার পার্টি বাংলাদেশ’ নাম দুটি প্রায় একই হওয়ায় সারা দেশে দলটির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। তারা হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। এতে দলটির জন্য ক্ষতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে এবং গণতান্ত্রিক চর্চার সৌন্দর্য বিনষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়, ইতোমধ্যে ‘জনতা’ শব্দ ব্যবহার করে যেসব রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে, তার মধ্যে রয়েছে ‘জনতার বাংলাদেশ পার্টি’, ‘জাতীয় জনতা পার্টি’ ইত্যাদি। নামের এই সাদৃশ্য সাধারণ মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
প্রসঙ্গত, দীর্ঘদিন ধরে সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে জনসচেতনতা তৈরিতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। ১৯৯৩ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় স্ত্রী জাহানারা কাঞ্চন নিহত হওয়ার পর থেকেই তিনি ‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’ আন্দোলনের মাধ্যমে এ ইস্যুতে দেশজুড়ে জনমত গঠনে কাজ করে আসছেন। বিভিন্ন সময় তাকে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হলেও এবারই তিনি প্রথমবারের মতো সরাসরি রাজনীতির মাঠে নামলেন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন দল গঠনের প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সাড়ে ছয় মাসে অন্তত ১৬টি নতুন রাজনৈতিক দল আত্মপ্রকাশ করেছে। সে ধারাবাহিকতায় এবার নতুন দল গঠনের মাধ্যমে যুক্ত হলেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে অপহরণের পরদিন ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে (১৩) উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অপহরণের অভিযোগে ওই ছাত্রীর বাড়ির চাকরিচ্যুত নিরাপত্তাকর্মী আবু হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এছাড়া অপহৃত ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না তা জানতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকার ধলপুর থেকে অপহৃত স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। একই সঙ্গে অপহরণকারী আবু হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে ৩ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। আজ শনিবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খিলগাঁও থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মাহাদী হাসান।
মামলার এজাহারের বরাতে তিনি দৈনিক বাংলাকে বলেন, ওই স্কুলছাত্রী দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় পরিবারের সঙ্গে থাকে। ওই বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী হিসেবে কাজ করতেন আবু হোসেন। মেয়েটি স্কুলে যাওয়া-আসার পথে তিনি নানারকম প্রলোভন দেখাতেন ও উত্ত্যক্ত করতেন। বাড়ির মালিককে বিষয়টি জানানো হলে তিনি নিরাপত্তাকর্মীকে চাকরিচ্যুত করেন। এরপরও আবু হোসেন মেয়েটিকে উত্ত্যক্ত করা বন্ধ করেননি। গত বুধবার বিকেলে মেয়েটি বাসার সামনের দোকানে গেলে সেখান থেকে তাকে প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করা হয়।
তিনি বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ওই স্কুলছাত্রীর বাবা মেয়েকে অপহরণের অভিযোগে খিলগাঁও থানায় মামলা করেন। মামলায় বাসার নিরাপত্তাকর্মীকে তিনি আসামি করেন। পরে তথ্যপ্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্যে গত বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে অভিযান চালিয়ে যাত্রাবাড়ীর ধলপুর এলাকা থেকে অভিযুক্ত আবু হোসেনকে গ্রেপ্তার ও অপহৃত স্কুলছাত্রীকে উদ্ধার করা হয়। ওই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে কি না তা জানতে প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শুক্রবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ধর্ষণের প্রমাণ পেলে গ্রেপ্তার আসামির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগও আনা হবে। এছাড়া গ্রেপ্তার আবু হোসেনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিন দিনের রিমান্ডে আনা হয়েছে বলেও তিনি জানান।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ বলেছেন, প্রধান সড়কে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে ডিএনসিসি ও ডিএমপি যৌথভাবে কাজ করছে। ঢাকা শহরের ভিতরে অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশন বন্ধে শিগগিরই অভিযান শুরু হবে।
তিনি জানান, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) ইতোমধ্যে অটোরিকশা তৈরির ওয়ার্কশপ ও চার্জিং স্টেশনের তালিকা করেছে। শিগগিরই রাতে অভিযান করে এগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে।
আজ শনিবার রাজধানীর মিরপুর পল্লবীতে রাস্তা, ফুটপাত ও নর্দমা নির্মাণকাজের উদ্বোধনকালে তিনি এসব কথা বলেন। ডিএনসিসির ৬, ৭ ও ৮নং ওয়ার্ডের আওতাধীন এলাকায় ৭টি প্যাকেজে মোট ২০ কিলোমিটার রাস্তা, ৩৪ কিলোমিটার নর্দমা ও ১৫ কিলোমিটার ফুটপাত নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন ডিএনসিসি প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ।
মোহাম্মদ এজাজ বলেন, ‘বিভিন্ন এলাকার বাড়ির মালিক সমিতিকে অনুরোধ করব আপনারা আপনাদের এলাকায় অবৈধ অটোরিকশা ঢুকতে দেবেন না। আপনাদের আবাসিক এলাকাগুলো যে পরিকল্পনা করে করা হয়েছে, সেই পরিকল্পনার বাহিরে কিছু করতে দেবেন না। আবাসিক এলাকায় কোনো বাণিজ্যিক কাজ করতে দেবেন না। সিটি করপোরেশনের সঙ্গে আপনারা স্থানীয় কমিউনিটি সোচ্চার হলে অবৈধ অটোরিকশা, অবৈধ হকার বন্ধ করা সহজ হবে।’
নগরবাসীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি সবাইকে অনুরোধ করব আপনারা বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানি থেকে প্লট কেনার আগে মৌজা ম্যাপ চেক করে দেখবেন জলাধার কিনা। জলাধার হলে দয়া করে সেই প্লট কিনবেন না। জলাধার হলে পরবর্তী সময় সেই প্লট পেতে ঝামেলা হবে।’
তিনি বলেন, ‘সবাই একসময় ভাবতেন পল্লবী ইস্টার্ন হাউজিং এলাকায় কোনোদিন পাকা রাস্তা হবে না। এই এলাকায় শুধু গোডাউন ভাড়া দেওয়া হতো একসময়। পরিকল্পিতভাবে মাঠের জায়গা রাখা হয়নি, কোনো গাছ লাগানো হয়নি। ইস্টার্ন হাউজিংয়ের ভিতর দিয়ে খাল ছিল। আমরা নাগরিক সমাজ আন্দোলন করেছি সেই খাল উদ্ধারের জন্য, মামলা পর্যন্ত করা হয়েছিল। ৭টি প্যাকেজের নির্মাণকাজ শেষ হলে এই এলাকার যোগাযোগব্যবস্থার ব্যাপক উন্নয়ন হবে এবং জলাবদ্ধতাও দূর হবে।’
রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়া ইউনিয়নের মনারটেক আমবাগান এলাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও পিকআপের মুখোমুখি সংঘর্ষে আরও একজন নিহত হয়েছে। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা বেড়ে হলো ৬।
আজ শনিবার সকাল ১০টার দিকে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। নিহতরা অটোরিকশার যাত্রী ও চালক।
নিহতরা হলেন, চট্টগ্রামের রাউজানের কাজীপাড়ার সোয়ার আলীর ছেলে আবু তোরাব (৪৫), রাঙামাটির কাউখালীর তালুকদার পাড়ার আব্দুর রহিমের মেয়ে নূর নাহার (৪০), রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার বেতবুনিয়ার ডাবুয়া মংশি মারমার মেয়ে মিনু মারমা (৩৫), চট্টগ্রামের হাটহাজারীর মিরহাটের মাহাবুবুর রহমান বাচ্ছু (৫৫), চট্টগ্রামের রাউজানের মো. জয়নাল আবেদীন (৬৩) ও চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারির মৃত গুলজারের ছেলে ইজাদুল (২৫)। ইজাদুল সিএনজি অটোরিকশার চালক ছিলেন। দুর্ঘটনার পর তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যুবরণ করেন।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেতবুনিয়ার মনারটেক এলাকায় রাঙামাটি থেকে চট্টগ্রামে যাওয়ার পথে সিএনজি অটোরিকশা (চট্ট মেট্রো থ ১১-৯১৭৩) ও বিপরীত দিক আসা পিকআপের (চট্ট মেট্রো ন ১১-৬৪৯২) মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এতে অটোরিকশাটি সম্পূর্ণ দুমড়ে-মুচড়ে যায়। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলে তিনজন ও পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নেওয়ার পথে দুইজন এবং চট্টগ্রামে মেডিক্যালে একজনের মৃত্যু হয়। ঘটনার পরপরই পিকআপের চালক পালিয়ে যায়। পুলিশ তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে বলে জানা গেছে।
রাঙামাটির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম জানান, এটা মর্মান্তিক ঘটনা। ৬ জনের মধ্যে তিনজনকে রাঙামাটির মেডিক্যালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। দুইজনকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল মর্গে এবং একজন রাউজানের জেকে মেমোরিয়াল হাসপাতালে আছে।
তিনি বলেন, ময়নাতদন্ত শেষে পুলিশ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। পলাতক চালককে গ্রেপ্তারে চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ ভ্যাটিকান সিটিতে পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন।
গত সোমবার ৮৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করা পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আজ সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, প্রিন্স উইলিয়ামসহ বেশ কয়েকজন বিশ্বনেতা এবং বিশিষ্টজন সেন্ট পিটার্স স্কয়ারে এ অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় যোগ দিয়েছেন।
অধ্যাপক ইউনূস বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং বিশিষ্টজনদের মাঝে আসন গ্রহণ করেন।
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডার লেইন, ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, স্পেনের রাজা ফিলিপ ষষ্ঠ ও রানি লেতিজিয়া, জার্মানির প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার, বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ, ইতালির প্রেসিডেন্ট সার্জিও মাত্তারেল্লা এবং প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনিসহ অন্যান্য ইউরোপীয় নেতা অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত রয়েছেন।
ইতালির পুলিশ জানিয়েছে, পোপ ফ্রান্সিসের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া উপলক্ষ্যে প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ সেন্ট পিটার্স স্কয়ার ও এর আশপাশের রাস্তায় জমায়েত হয়েছেন।
পুলিশ আরও জানায়, ‘অনুষ্ঠান শুরুর এক ঘণ্টা আগে ৪০ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতা সম্পন্ন সেন্ট পিটার্স স্কয়ার প্রায় পূর্ণ হয়ে যায়। ভ্যাটিকানের দিকে যাওয়া ভিয়া দেলা কনসিলিয়াজিওন সড়ক এবং আশপাশের রাস্তায় প্রায় ১ লাখ মানুষ আগেই উপস্থিত হন।’
প্রয়াত পোপ ফ্রান্সিস অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাজের দারুণ ভক্ত ছিলেন এবং তাঁর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করতেন।
বিশেষ করে বিশ্বজুড়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য অধ্যাপক ইউনূসের কর্মযজ্ঞ এবং তাঁর ‘তিন শূন্য’ তত্ত্ব —যেখানে কোনো বেকারত্ব, দারিদ্র্য এবং কার্বন নিঃসরণ থাকবে না, এর প্রশংসা করতেন।
রোমের ভ্যাটিকানে তিনি ২০০৬ সালের শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর সঙ্গে যৌথভাবে ‘তিন শূন্য উদ্যোগ’ও চালু করেছিলেন।
ফিলিস্তিন, ভারত ও মিয়ানমারসহ বিশ্বজুড়ে নিপীড়িত মুসলমানের সমর্থনে সমাবেশ করেছে আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্যমঞ্চ।
আজ শনিবার বেলা ১২টা থেকে এই সমাবেশ শুরু হলেও ভোর থেকেই প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হতে থাকে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মানুষ।
দেশের বিভিন্ন খানকাভিত্তিক আলেম ওলামা ও পীর মাশায়েখগণ এই সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশের কারণে প্রেসক্লাবের আশেপাশের সড়কে তীব্র যানজট তৈরি হয়। পরে পুলিশের অনুরোধে সমাবেশের জন্য নির্ধারিত সময়ের আগেই প্রোগ্রাম শেষ করা হলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
সমাবেশের সংগঠক হাসান আজহারী বলেন, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের সাথে ফ্যাসিবাদের কোন সম্পর্ক নাই। আমরা মাজলুমের পক্ষে কথা বলি। আমরা জালেমের বিপক্ষে রুখে দাঁড়াই। আমরা শাহজালাল, শাহপরান, ৩৬০ বার আউলিয়ার সূর্যসন্তান। আমরা মাজলুমের পক্ষে দাঁড়াতে গিয়ে যদি জান দিতে হয় তাহলে জান দিতে প্রস্তুত আছি।
আরেকজন সংগঠক মোস্তফা আজহারি বলেন, গাজাতে ইসরাইলি বাহিনী জুলুম ও বর্বরতা চালাচ্ছে। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের প্রতি আমাদের আহবান, আসুন ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই। ইসরাইলকে বয়কট করে আমরা শান্তি স্থাপন করি। শুধু ইসরাইল নয়, ভারতের মুসলমানের উপর যে জুলুম ও অত্যাচার চলছে আমরা সেগুলোরও অবসান চাই।
তিনি বলেন, মায়ানমারে রাখাইন থেকে যে রোহিঙ্গা ভাই-বোনেরা বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে তারা তাদের অধিকার ফিরে পাক।
সমাবেশের শেষ ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্রে ছয়টি দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলো হলো—
#জাতিসংঘের সরাসরি হস্তক্ষেপে ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ঘোষণা করতে হবে।
#ইসরায়েলের হামলায় ফিলিস্তিনের যত কাঠামোগত ক্ষতি হয়েছে সকল কিছুর আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
#ফিলিস্তিনে ইসরায়েলের সরাসরি হস্তক্ষেপে ইতোমধ্যে যত হত্যা হয়েছে সকল হত্যাকান্ড ও হামলার আন্তর্জাতিক আদালতে তদন্তপূর্বক বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
#ইন্ডিয়ার লোকসভায় পাস হওয়া অসাংবিধানিক ও মুসলিমবিরোধী ওয়াকফ বিল লোকসভায় বাতিল ঘোষণা করতে হবে।
#৫ আগস্ট থেকে এই পর্যন্ত মাজার, খানকায় ও দরবারে যত হামলা, অগ্নিসংযোগ হয়েছে সবগুলো ঘটনায় বিভাগীয় তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত করে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
#সকল রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে পতিত স্বৈরাচার কর্তৃক সংঘটিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
এসময় আয়োজকরা হাত তুলে ইসরায়েল ও ভারতসহ সকল প্রকার বৈশ্বিক ও দেশীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নিজেদের লড়াই জারি রাখার অঙ্গিকার করেন।
এছাড়া, বাংলাদেশের মুসলমানদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সমাজ, সংস্কৃতি ও গোষ্ঠী স্বার্থে যে কোনো সময় যে কোনো মূল্যে ময়দানে নামতে প্রস্তুত থাকার কথাও জানানো হয়।
পরে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে সংহতি সমাবেশ শেষ হয়।
আধিপত্যবাদ বিরোধী মুসলিম ঐক্য মঞ্চের সভাপতি ও মুসুরি খোলা দরবার শরীফের পীর শাহ্ হাসানুজ্জামান সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন।
এতে বক্তব্য দেন ইসলামি বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী, এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান আরিফ, আয়োজক কমিটির উপাধ্যক্ষ মুফতি আবুল কাশেম মোহাম্মদ ফজলুল হক প্রমুখ।
দেশের রাজনৈতিক দলগুলো সময়ের বিবেচনায় আগে সংস্কার নাকি আগে নির্বাচন এই প্রতিযোগিতায় নেমেছে বলে অভিযোগ করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম।
তিনি বলেন, আপনারা একটি কথা মাথায় ঢুকিয়ে রাখুন। সংস্কার নাকি নির্বাচন এই খেলা বাদ দিয়ে সবার আগে হতে হবে হত্যাকাণ্ডের বিচার। পিলখানা, শাপলা ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচারের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের অন্য কোন কিছুর নাম নেওয়া প্রাসঙ্গিক হতে পারে না।
গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে অনুষ্ঠিত শহীদি সমাবেশে বক্তব্যে এই কথা বলেন তিনি।
ইনকিলাব মঞ্চ এই সমাবেশের আয়োজন করেন।
সারজিস আলম বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোকে বলবো, এই জেনারেশনকে ভয় করুন। যদি এই জেনারেশনের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে যদি তাদের ইমোশন নিয়ে খেলেন তাহলে তারা কাউকে টেনে নামাতে পারে। কুয়েটের ভিসিই তার প্রমাণ।
সারজিস বলেন, আগে বাংলাদেশের মানুষ তাকিয়ে থাকতো কখন যুক্তরাষ্ট্র স্যাংশন দিবে, কখন হাসিনা মারা যাবে বা কখন নতুন নির্বাচন হবে। এরপর তারা মাঠে নামার প্রস্তুতি নিতো। আর যখন ছাত্র জনতা হাসিনাকে বিদায় করেছে সেই হাসিনার খুনের বিচার হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশ অন্য কোন কিছুর নাম নেওয়া এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মুখে মানায় না।
আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করার জন্য বিভিন্ন মহল নানা কারণ দেখাচ্ছে ও পায়তারা করছে বলেও অভিযোগ করেন সারজিস।
বলেন, এই মহল আমাদেরকে শোনায় বহির্বিশ্বে তাদের ইমেজ ক্ষুন্ন হতে পারে। এই স্টেক হোল্ডার ও বিভিন্ন মহলকে আমরা বলতে চাই, বিগত ১৬ বছরে যখন পিলখানা, শাপলা হত্যাকাণ্ড আর সর্বশেষ জুলাই হত্যাকাণ্ড হয়েছে তখন এই বহির্বিশ্বে কোথায় ছিল? তারা আমাদেরকে পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি দেখায়। সেই পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কোথায় ছিল, যখন হেলিকপ্টার থেকে ছোট ভাইদের হত্যা করা হয়েছে।
সারজিস বলেন, এই ভারত বাংলাদেশে অনেকগুলো খুনের হুকুমদাতা। এই ভারত আশ্রয় দিয়েছে খুনি শেখ হাসিনাকে। শেখ হাসিনাকে ফেরত না দেওয়া পর্যন্ত ভারতের সাথে আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হতে পারে না। খাতা-কলমের সম্পর্ক জনগণের সম্পর্ক এক নয়।
ভারতকে উদ্দেশ্য করে সারজিস বলেন, ভারত যদি বাংলাদেশের সাথে প্রতিবেশীর সম্পর্ক দেখতে চায় তাহলে যেসব খুনিকে তারা আশ্রয় দিয়েছে তাদেরকে বাংলাদেশে পাঠাতে হবে।
মন্তব্য