ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলা যুবদলের আওতাধীন টবগী ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম মজনু কে জড়িয়ে একটি শালিশ কে কেন্দ্র করে অবৈধভাবে টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করার প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে টবগী ইউনিয়ন যুবদল।
সংবাদ সম্মেলনে দাবী করা হয় গত ৮ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটি মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। উদ্দেশ্যে প্রনোদিতভাবে বিএনপি ও যুবদলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি মহল ওই ভিডিওটি প্রকাশ করে। ওই ভিডিওটি টবগী ইউনিয়ন যুবদলের নজরে আসলে অভিযোগকারী মনিরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। মনিরকে না পেয়ে টবগী যুবদলের পক্ষ থেকে ভিডিওর সত্যতা জানতে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি ওই ভিডিওর অভিযোগের বিষয়ে কোনো সত্যতা খুঁজে পায়নি।
আজ মঙ্গলবার ( ১৫ জুলাই ) দুপুর ১টায় টবগী ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সিনিয়র সহ সভাপতি খোকন হাওলাদার।
এসময় তিনি লিখিত বক্তব্যে জানান , বিএনপি ও টবগী ইউনিয়ন যুবদলের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে একটি মহল উঠে পড়ে লেগেছে। তারা টবগী ইউনিয়ন বিএনপির কর্মকান্ডে ঈর্শান্বিত হয়ে যুবদলের সভাপতিকে টার্গেট করেছে।
তিনি জানান, অভিযোগকারী মনির ও তার পরিবারের সদস্যরা টবগী ইউনিয়নের ভোটার নয়। তারা ৫ই আগষ্টের পূর্বে চট্টগ্রামে ছিলো ওখানে বিভিন্ন ধরনের অপকর্ম করে গা ঢাকা দিতে এখন এইখানে এসে আত্নগোপন করেছে। মনির নেশাগ্রস্ত ও বখাটে প্রকৃতির। মনির ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে একাধিক খারাপ কাজে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। গত কয়েকদিন আগে একটি চোরাই মোবাইল উদ্ধার করতে মনিরের বাড়িতে পুলিশ এসে তাকে আটক করতে গেলে তার পরিবারের সদস্যরা ওই সময়ের ভিডিও ধারন করে রাখে। ওই ভিডিওটি চালিয়ে এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে যুবদল সভাপতি মঞ্জু বয়াতী তার উপর হামলা করেছে যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ওই ভিডিওতে পুলিশ সদস্যদের স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে যা ভিডিওটি দেখলেই আপনারা বুঝতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, রুহুল আমিন নামে জনৈক ব্যক্তি বিদেশে বসে উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবে মিথ্যা ভিডিও ছড়াচ্ছে। ওই ভিডিওটি সহকারী এ্যার্টনী জেনারেল এবি এম ইব্রাহিম খলিল রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অসিন থেকে তথ্যের যাচাই বাছাই না করে পুলিশের গ্রেফতারের সময়ের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করে যুবদল সভাপতিকে অভিযুক্ত করে। যা অতি দুঃখজনক। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির এমন আচরনে আমরা মর্মামহ এই ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
আমাদের দলের কেউ কোনো অপকর্মের সাথে জড়িত থাকলে আমরা দলীয়ভাবে তাকে সর্বোচ্চ শাস্তির আওতায় আনছি। ইনশাআল্লাহ্ ভবিষ্যতে আমাদের এই পদক্ষেপ অব্যাহত থাকবে।
গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না বরং বাংলাদেশপন্থীদের হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। আবারও গোপালগঞ্জে গিয়ে প্রতিটি এলাকায় কর্মসূচি পালন করারও ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এসব বলেন নাহিদ।
তিনি বলেন, ‘আমরা আবারও গোপালগঞ্জে যাব। আমরা জীবিত থাকলে গোপালগঞ্জের প্রত্যেকটা উপজেলার প্রত্যেকটা গ্রামে কর্মসূচি করব। গোপালগঞ্জের প্রতিটা ঘরে ঘরে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পতাকা উড়বে। গোপালগঞ্জ মুজিববাদীদের হবে না, বাংলাদেশপন্থীদের হবে।’
নাহিদ বলেন, ‘আমরা কথা দিয়েছিলাম (কমিট করেছিলাম) আমরা গোপালগঞ্জে যাব। আমরা গিয়েছি এবং শহীদের রক্তের শপথ নিয়ে ঘোষণা করেছি, মুজিববাদকে গোপালগঞ্জ ও বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়াতে দেব না।’
তবে গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি এনসিপির কোনো রাজনৈতিক বৈষম্য নেই বলেও জানান তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘গোপালগঞ্জের অধিবাসীদের প্রতি রাজনৈতিক বৈষম্যের আমরা বিরোধিতা করি। গোপালগঞ্জ ও পুরো বাংলাদেশকে আমরা মুজিববাদী সন্ত্রাস ও ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্ত করব। আওয়ামী লীগ যুগের পর যুগ ধরে গোপালগঞ্জের মানুষের জীবনকে বিপন্ন করেছে, মুক্তিযুদ্ধকে কলুষিত করেছে এবং সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বেইনসাফি করেছে। আমরা বলেছি, আমরা এ পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটাব।’
এ সময় ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের এত হত্যাযজ্ঞের পরেও ৫ আগস্টের পরে অনেকে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ আনতে চেয়েছিল। তাদের মনে রাখা উচিত, আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এটা একটা সন্ত্রাসবাদী সংগঠন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রশাসন ও নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নির্দেশনা (ইনস্ট্রাকশন) দিয়েছে, সকালের নাশকতার পরেও নিরাপত্তা ছাড়পত্র (সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স) পেয়েই আমরা গোপালগঞ্জে প্রবেশ করেছি। পদযাত্রা করিনি, পথসভা করেছি শুধু। গোপালগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আমাদের লোকজনকে আসতে দেওয়া হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় বাস আটকে দেওয়া হয়েছে। এরপরও আমরা শান্তিপূর্ণভাবে পথসভা শেষ করেছি। যাওয়ার পথে সশস্ত্র আক্রমণ চালিয়েছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। নিরাপত্তা বাহিনী যেভাবে নির্দেশনা দিয়েছে আমরা সেভাবেই সেখান থেকে বের হয়েছি।
এ সময় গোপালগঞ্জে এনসিপির পদযাত্রাকে ঘিরে গতকালের হামলা ও হতাহতের বিষয়ে সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবি জানান নাহিদ। ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেন, ‘আমরা চারজনের মৃত্যুর কথা শুনেছি। কোনো বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে আমরা সমর্থন করি না, প্রত্যাশাও করি না। সন্ত্রাসীদের বিচারিক প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নিতে হবে।’
নাহিদ অভিযোগ করে বলেন, ‘প্রশাসন ও গোয়েন্দা সংস্থা যদি সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিত তাহলে এ পরিস্থিতি তৈরি হতো না। এ দায়ভার সরকার ও প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা পুরো ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও সন্ত্রাসীদের বিচার দাবি করছি।’
গোপালগঞ্জে যারা অন্যায় করেছে, তারা গ্রেপ্তার হবেন— এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না বলে মন্তব্য করেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এক প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
গোপালগঞ্জে এমন ঘটনা ঘটবে— এ বিষয়ে কি গোয়েন্দাদের কাছে কোনো তথ্য ছিল কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গোয়েন্দাদের কাছে তথ্য ছিল, তবে এত পরিমাণ যে হবে— ওই তথ্যটি ছিল না।’
এনসিপি নেতারাও অভিযোগ করেছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেনি— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনিও তো অনেক কিছু বলতে পারেন। যার যার বক্তব্য, সে সে দিবে।’
ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা রোধে কী পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, ‘কালকেও তো নির্দেশনা দিয়েছি ওখানে। ভবিষ্যতে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে, সেজন্য সব ধরনের সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন ওই জায়গার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।
তিনি বলেন, গোপালগঞ্জে যারা অন্যায় করেছে, তারা গ্রেপ্তার হবেন। এ বিষয়ে কোনো ছাড় দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।
এনসিপির ‘জুলাই পদযাত্রা’ ঘিরে গতকাল বুধবার (১৬ জুলাই) দিনভর দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলা চালিয়েছেন। হামলাকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে ৪ জন নিহত এবং অন্তত ৯ জন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
সবাইকে বিভ্রান্তিকর বা প্রকৃত তথ্যভিত্তিক নয় এমন কোনো বক্তব্য, যেগুলো বিভ্রান্তি ছড়ায় ও জনগণের মধ্যে সম্প্রীতি বিনষ্ট করে— তা প্রচার না করার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের সম্পত্তি ময়মনসিংহে ভেঙে ফেলা হচ্ছে— এমন কিছু সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এমন আহ্বান জানানো হয়েছে। এই সম্পত্তিটি মূলত তার দাদা, বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর মালিকানাধীন ছিল— এমন দাবি করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
সব রেকর্ড নতুনভাবে যথাযথভাবে খতিয়ে দেখার পর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়— তথ্যনির্ভর অনুসন্ধানে নিশ্চিত হওয়া গেছে, আলোচ্য বাড়ির সঙ্গে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষদের কোনো সম্পর্ক কখনোই ছিল না। এই ভবনটি স্থানীয় জমিদার শশীকান্ত আচার্য চৌধুরী নির্মাণ করেছিলেন তার নিজস্ব বাসভবন ‘শশী লজ’-এর পাশেই, তার কর্মচারীদের জন্য।
পরে জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির পর এটি সরকারের অধীনে চলে আসে। এরপর সরকার এটি বাংলাদেশ শিশু একাডেমির জন্য বরাদ্দ দেয়। এরপর থেকেই এই বাড়িটি জেলা শিশু একাডেমির অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়।
জমিটিও ছিল অ-কৃষি সরকারিভাবে মালিকানাধীন (খাস) এবং দীর্ঘমেয়াদি ইজারার ভিত্তিতে শিশু একাডেমিকে দেওয়া হয়েছিল। জেলা প্রশাসন জমি-সংক্রান্ত নথিপত্র পর্যালোচনা করে নিশ্চিত করেছে যে অতীতের রেকর্ড অনুযায়ী, জমিটি সরকারের মালিকানাধীন এবং রায় পরিবারের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, স্থানীয় প্রবীণ নাগরিক ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের সম্মানিত ব্যক্তিরাও বলেছেন, শিশু একাডেমির ইজারাভুক্ত এই জমি ও ভবনের সঙ্গে রায় পরিবারের কোনো ঐতিহাসিক সংযোগ নেই। সরকার আরও জানায়, এই বাড়িটি কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবেও তালিকাভুক্ত নয়।
তবে বাড়ির সামনের সড়কটি ‘হরকিশোর রায় রোড’ সত্যজিৎ রায়ের প্রপিতামহ হরকিশোর রায়ের নামে নামকরণ করা হয়েছে। হরকিশোর রায় ছিলেন উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর দত্তক পিতা। রায় পরিবার একসময় হরকিশোর রায় রোডে একটি বাড়ির মালিক ছিলেন, যা তারা অনেক আগেই বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেই বাড়িটি আর অস্তিত্বে নেই।
বর্তমানে যে ভবনটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে, সেটি জরাজীর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যবহার অযোগ্য। ২০১৪ সাল থেকেই শিশু একাডেমি শহরের অন্য একটি ভাড়াকৃত ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং পরিত্যক্ত ভবনটি স্থানীয় অসামাজিক ব্যক্তিদের অপরাধকর্মের আখড়া হয়ে উঠেছিল।
‘তাই ২০২৪ সালের প্রথমার্ধে ওই জায়গায় আধা-পাকা একটি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। পরবর্তীতে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি জেলা প্রশাসনকে পুরোনো ও জরাজীর্ণ ভবনটি নিলামের মাধ্যমে অপসারণের অনুমতি দেয়,’ বলছে অন্তর্বর্তী সরকার।
নিলাম কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৭ মার্চ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় জনসাধারণকে এ বিষয়ে ‘ব্যাপকভাবে অবহিত’ করা হয়। গত (বুধবার) বিকেলে ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক এক আলোচনা সভার আয়োজন করেন। সেখানে প্রবীণ নাগরিক, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব, সাংবাদিকসহ স্থানীয় সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশ নেন।
সরকার জানায়, বৈঠকে প্রখ্যাত লেখক কঙ্গাল শাহীন ব্যাখ্যা করে বলেন, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির নিয়ন্ত্রণাধীন এবং বর্তমানে যেটি ভাঙা হচ্ছে— সেই জরাজীর্ণ ভবনের সঙ্গে হরকিশোর রায় বা সত্যজিৎ রায়ের কোনো সম্পর্ক নেই।
ময়মনসিংহের নাগরিক সমাজের একজন সম্মানিত সদস্য অধ্যাপক বিমলকান্তি দে বাড়িটির মালিকানা নিয়ে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। স্থানীয় কবি ও লেখক ফরিদ আহমেদ দুলালও নিশ্চিত করেন যে, বাড়িটির সঙ্গে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনো সংযোগ নেই।
সকলেই একমত হন যে ময়মনসিংহের শিশুদের কল্যাণে শিশু একাডেমির নতুন ভবন নির্মাণ জরুরি, এবং কাজটি বিলম্ব না করে এগিয়ে নেওয়া উচিত। সরকার জানায়, উপস্থিত সকলে একবাক্যে স্বীকার করেন যে, বাংলাদেশ শিশু একাডেমির পরিত্যক্ত এই ভবনের সঙ্গে সত্যজিৎ রায় বা তার পরিবারের কোনো ঐতিহাসিক বা পারিবারিক সম্পর্ক নেই।
এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, ময়মনসিংহের প্রত্নতত্ত্ব গবেষক স্বপন ধরও বলেছেন, আলোচ্য বাড়িটি সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি নয়।
অন্যদিকে, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে জানিয়েছে— বাংলাদেশে ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ির সংস্কার ও পুনর্গঠনের জন্য বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করতে ভারত প্রস্তুত।
বিবৃতিতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, ‘আমরা গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, বাংলাদেশে ময়মনসিংহে প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও সাহিত্যিক সত্যজিৎ রায়ের পৈতৃক বাড়ি— যা তার দাদা ও বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর সম্পত্তি ছিল— সেটি ভেঙে ফেলা হচ্ছে।’
বর্তমানে এই সম্পত্তি বাংলাদেশ সরকারের মালিকানাধীন এবং এটি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে, বলে ভারত সরকার উল্লেখ করে।
ভারত সরকার আরও জানায়, এই ভবনটি বাংলা সাংস্কৃতিক নবজাগরণের একটি প্রতীকস্বরূপ নিদর্শন হওয়ায় এর ভাঙার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা এবং এটি মেরামত ও পুনর্গঠন করে একটি সাহিত্য জাদুঘর এবং ভারত-বাংলাদেশের যৌথ সংস্কৃতির প্রতীক হিসেবে গড়ে তোলা শ্রেয় হবে।
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘এই উদ্দেশ্যে ভারত সরকার সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)-এর মামলায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেছেন ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। এর মাধ্যমে মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, অভিযোগ গঠন শুনানির সময় সম্রাটের আইনজীবী সময়ের আবেদন করেন। তবে আদালত তা নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠন করেন এবং আগামী ১৭ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন।
আজ বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৬ এর বিচারক মো. জাকারিয়া হোসেন এ আদেশ দেন। শুনানির দিন সম্রাট আদালতে হাজির না হওয়ায় তার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন বিচারক।
ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৬-এর পেশকার জাহিদুর রহমান বাসস’কে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর কুমিল্লা থেকে সম্রাট ও তার সহযোগী তৎকালীন যুবলীগ নেতা এনামুল হক ওরফে আরমানকে গ্রেফতার করা হয়। ওই সময় সারাদেশে চলছিল ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান।
জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০১৯ সালের ১২ নভেম্বর সম্রাটের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করে দুদক। তখন অভিযোগ করা হয়, তিনি ২ কোটি ৯৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন।
পরের বছর, ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর এই মামলার অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেয় দুদক। সেখানে সম্রাটের বিরুদ্ধে মোট ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়।
সম্রাট ২০২২ সালের ২২ আগস্ট জামিনে মুক্তি পান।
২০২৪ সালের ১৭ জুলাই (বুধবার) চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে সারাদেশে নিহতদের মাগফেরাত কামনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পুলিশের বাধা অতিক্রম করে গায়েবানা জানাজা আদায় করেন আন্দোলনকারীরা।
এদিন ভোরে আন্দোলনকারীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাস থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের তাড়িয়ে দেয় এবং ক্যাম্পাসকে ‘রাজনীতিমুক্ত’ ঘোষণা করে। এ ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণা করে শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল খালি করার নির্দেশ দেয়। সরকার কোম্পানিগুলোকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়।
১৭ জুলাই পবিত্র আশুরা উপলক্ষে সরকারি ছুটির দিনেও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ, গায়েবানা জানাজা, কফিন মিছিল এবং দফায় দফায় সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে আহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে।
এদিন আন্দোলকারীরা রাজধানীতে মেয়র হানিফ উড়াল সড়কের কাজলা অংশের টোল প্লজায় আগুন ধরিয়ে দেন। ওই সড়কের শনির আখড়া ও কাজলার মধ্যবর্তী স্থানে অন্তত ২০টি জায়গায় মধ্যরাত পর্যন্ত আগুন জ্বলে।
১৬ জুলাই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের হামলায় রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদসহ সারাদেশে অন্তত ছয়জন নিহত হন। তাদের মধ্যে দুজন ঢাকায় সায়েন্সল্যাব এলাকায় এবং চট্টগ্রামে ছাত্রদলের নেতা ওয়াসিম আকরামসহ আরও তিন জন নিহত হন।
নিহতদের মাগফেরাত কামনায় ১৭ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। গায়েবানা জানাজার শুরু হওয়ার আগেই পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে বিকেল চারটার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বাসভবনের সামনে জানাজা পড়েন আন্দোলনকারীরা।
জানাজা শেষে শিক্ষার্থীরা প্রতীকী কফিন ধরে শপথ করেন এবং সমস্বরে বলেন, ‘এই আন্দোলন আমরা বৃথা যেতে দেব না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন থেকে সরে যাব না।’
গায়েবানা জানাজা শেষে পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে আন্দোনকারীরা টিএসসি অভিমুখে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশ তাদের বাধা দেয় এবং কয়েক রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। এ সময় আন্দোলনকারীরা সেখানেই অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
এ সময়ে সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেন, পুলিশ ক্যাম্পাসের প্রত্যেকটি প্রবেশ পথে শিক্ষার্থীদের আটকে দিয়েছে। ক্যাম্পাসের ভেতরের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড ও গুলি নিক্ষেপ করে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে।’
এছাড়া এদিন দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গায়েবানা জানাজায় পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বাধা দেয় এবং কোথাও কোথাও হামলা চালায়।
১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (ইউজিসি) সকল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা এবং নিরাপত্তার স্বার্থে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেয়। জরুরি সিন্ডিকেট সভা ডেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস ও আবাসিক হল বন্ধ ঘোষণা করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের হল বন্ধের ঘোষণা ও পুলিশের তৎপরতার মুখে অনেক শিক্ষার্থী সন্ধ্যা নাগাদ ক্যাম্পাস ছেড়ে যান। তবে হল বন্ধের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করে রাতেও অনেক ছাত্রছাত্রী হল ও ক্যাম্পাসে অবস্থান করেন।
এদিন বিকেলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ টিএসসি এলাকায় গিয়ে বলেন, ‘পুলিশ হল খালি করার অনুমতি পেয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হল না ছাড়লে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।’
এর আগে, শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাতভর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি আবাসিক হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের ওপর চড়াও হন আন্দোলনকারীরা। এ সময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কক্ষ ভাঙচুর করা হয়। পাশাপাশি বিশ্বিবদ্যালয়ের ১৪টি হলে ‘ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ’ মর্মে অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষদের স্বাক্ষর আদায় করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ ১৮ জুলাই বৃহস্পতিবার সারাদেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচিতে হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ রাখার আহ্বান জানানো হয়।
এদিন রাত ৮টার দিকে ফেসবুকে এ কর্মসূচির ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি সারাদেশে প্রতিটি স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচি সফল করার আহ্বান জানান।
এদিন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আন্দোলনকারীদের সর্বোচ্চ আদালতের রায় আসা পর্যন্ত ধৈর্য ধরার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, আমাদের ছাত্র সমাজ সর্বোচ্চ আদালত থেকে ন্যায় বিচার পাবে। তাদের হতাশ হতে হবে না।’
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলন এখন স্বাধীনতা বিরোধীদের হাতে চলে গেছে। কাজেই আর বসে থাকার সময় নেই।’
দলীয় নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের অস্তিত্বের প্রতি হামলা এসেছে, হুমকি এসেছে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলা আমাদের করতেই হবে।
কাজেই আপনারা ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে প্রস্তুত হয়ে যান।’
১৭ জুলাই শহীদ আবু সাঈদকে রংপুরের পীরগঞ্জে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। এদিন আবু সাঈদের বাড়ির পাশে জাফরপাড়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে সকাল সোয়া নয়টায় প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে সোয়া ১০টার দিকে তার লাশ দাফন করা হয়।
এদিন কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারাদেশে নিহতদের স্মরণে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেইটে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো গায়েবানা জানাজার আয়োজন করে। তাদের এই কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয়।
গায়েবানা জানাজা শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গায়েবানা জানাজায় অংশ নিতে মুসল্লিদের বাধা দেওয়া হয়েছে। সরকার ইচ্ছা করলে আলোচনার মাধ্যমে কোটা সমস্যার সমাধান করতে পারত। তা না করে বর্বরভাবে হামলা করে মানুষ হত্যা করা হয়েছে।’
এদিন চট্টগ্রামেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের জন্য গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় নগরের লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত এ গায়েবানা জানাজায় হাজার হাজার ছাত্র-জনতা অংশ নেন। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১০ জায়গায় সড়ক-মহাসড়ক এবং দুই জায়গায় রেলপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন আন্দোলনকারীরা।
এক সময় গ্রাম বাংলার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল মৃৎশিল্প। প্রতিটি ঘরের দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহৃত হত মাটির তৈরি থালা-বাসন, হাঁড়ি-পাতিল, কলসি। বিভিন্ন উৎসবে, পার্বণে শোভা পেত নানা ধরনের মৃৎশিল্পের কারুকার্য। কিন্তু কালের বিবর্তনে আধুনিক উপাদানের সহজলভ্যতা আর পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আজ এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটি উত্তরের জেলা পঞ্চগড় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগরে বিলুপ্তির পথে। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত;
মিজানুর রহমান, পঞ্চগড় থেকে জানান: পঞ্চগড়ের মালিপাড়া, কুমারপাড়া একসময় কর্মব্যস্ত থাকত। মাটি খুঁড়ে আনা, তা দিয়ে নানা আকার দেওয়া, রোদে শুকানো এবং আগুনে পোড়ানোর কাজে নিয়োজিত থাকত পুরো গ্রাম। তৈরি হতো নানা ধরনের তৈজসপত্র, যা শুধু স্থানীয় বাজারেই নয়, যেত দূর-দূরান্তের মেলায়ও। কিন্তু বর্তমানে প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়াম এবং স্টেইনলেস স্টিলের পণ্যের দাপটে মাটির তৈরি জিনিসের চাহিদা কমে গেছে।
মৃৎশিল্পী শ্রী পানেস্বর পাল জানান, মাটি সংগ্রহ করা এখন আগের মতো সহজ নয়। প্রয়োজনীয় উপকরণের দাম বেড়েছে, কিন্তু আমাদের তৈরি পণ্যের ন্যায্য দাম পাওয়া যায় না। ফলে, অনেকেই এই পেশা ছেড়ে অন্য জীবিকা বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। নতুন প্রজন্মও এই কঠিন পেশায় আসতে আগ্রহী নয়।
মালিপাড়ার আরেক বিক্রয়কর্মী বলেন, আগে প্রতিদিন ৭,০০০/৮,০০০ টাকার মাটির তৈরি জিনিসপত্র বিক্রি করতাম। যা দিয়ে নিজেরা চলতাম পরিবার চালাতাম সন্তানদের লেখা পড়ার খরচ চলতো, কিন্তু এখন ২,০০০/৩,০০০ টাকার ও কম বিক্রি হয়। যা দিয়ে চলা একেবারেই মুশকিল হয়ে পরেছে।
তিনি আরো বলেন, আগে আমাদের তৈরি মাটির হাঁড়ি-পাতিল, সানকি, কলসির খুব চাহিদা ছিল। এখন আর তেমন বিক্রি হয় না। মানুষ এখন প্লাস্টিকের জিনিস বেশি ব্যবহার করে। আমাদের যা আয় হয়, তা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মৃৎশিল্প শুধু একটি শিল্প নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতির ধারক ও বাহক। এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে হলে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। সরকার এবং বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা মৃৎশিল্পীদের প্রশিক্ষণ, আর্থিক সহায়তা এবং তাদের তৈরি পণ্যের বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে পারে। ডিজাইনের আধুনিকীকরণ এবং নতুন প্রজন্মের আগ্রহ সৃষ্টির মাধ্যমেও এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব। আর যদি সময় মতো উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তবে হয়তো খুব শিগগিরিই গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প কেবলই স্মৃতি হয়ে যাবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
জামাল হোসেন পান্না, নবীনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) থেকে জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলায় এককালে মূৎশিল্পের সুনাম ছিল কিন্ত নানা প্রতিকূলতার বর্তমানে নবীনগরের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প এখন বিপন্ন হতে চলেছে।এ এ উপজেলার ভোলাচং, নারায়ণপুর, ভেলানগর, ইব্রাহিমপুর, শ্রীরামপুর, বিটঘর প্রভৃতি গ্রাম এক সময় মৃৎশিল্পের প্রাণ কেন্দ্র ছিল। এ সব গ্রামে ন্যূনতম তিন হাজার মুৎশিল্পী রাত দিন কাজ করত। তারা সুনিপুণ ভাবে হাড়ি, পাতিল, বাসন, ডাকনা, কলকে ও কলস, হরিণ, হাতি, গরু, জলকাদা, মটকা, মুক্তি, বসার- পিড়ি, ঘোড়া, বাঘ, ফুলদানী, টব, ব্যাংক, প্রভৃতি তৈরি করত। তাদের তৈরি পুতুল শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় নয় কুমিল্লা, নরসিংদী নারায়ণগঞ্জ প্রভৃতি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় সরবরাহ হতো, কিন্তু বর্তমানে নানা প্রতিকূলতার নবীনগরের মুৎশিল্পীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। এখন মাত্র শ'খানেক মৃৎশিল্পী তাদের পেশা কোনো মতে আঁকড়ে ধরে আছে। তাদের পেশার দৈন্য দশায় সংসার জীবনে বিরাট বিপর্যয় নেমে এসেছে।
মৃৎশিল্পী জয় পাল জানান- ‘মৃৎশিল্প তৈরির উপকরণের দাম কয়েক গুণ বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পায়। ফলে ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পে আমাদের ঋণের বোঝা ভারী হয়ে গেছে’। নানা প্রতিকূলতায় অনেকেই এ পেশা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছে। তাই নবীনগর উপজেলার মৃৎশিল্প বর্তমানে প্রায় বিলুপ্তির পথে। তবে ১ বৈশাখ উপলক্ষে কয়েক জন মৃৎশিল্পী ব্যস্ত সময় পার করছেন। কয়েক বছর আগে নবীনগর উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ও স্থানীয় এনজিও হোপ এর সহযোগিতায় অত্র এলাকার ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্পকে টিকিয়ে রাখার জন্য স্থানীয় কারিগরদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়। যদিও এর প্রতিফলন খুব একটা চোখে পড়েনি। ভবিষ্যতে যদি সরকারিভাবে তাদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ করানো ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়া হয় তাহলে হয়তো এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে।
আওয়ামী লীগের দুর্গ হিসেবে পরিচিত গোপালগঞ্জ-৩ (কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া) আসনে হানা দিয়েছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও বাংলাদেশ জামায়াত ইসলাম। এই দুটি রাজনৈতিক দল আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনটি নিজেদের দখলে নিতে নিয়মিত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছেন। যদি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নিতে না আসতে পারে সেক্ষেত্রে এই দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে লড়াই হবে বলে মনে করছেন এ আসনের ভোটাররা। তবে যদি এ আসনটিতে আওয়ামী লীগের কোনো শীর্ষ নেতা সতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয় তাহলে বদলে যেতে পারে ভোটের এই হিসাব-নিকাশ।
দেশ স্বাধীনের পরে এই আসনটি সবসময়ই আওয়ামী লীগ তাদের নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন। ১৯৮৬ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। তখন তিনি দেশের ৫টি আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ৫টি আসনে নির্বাচিত হওয়ার পরে তিনি এই আসনটি ছেড়ে দেন। তখন উপনির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে কাজী ফিরোজ রশিদ নৌকা প্রতীককে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়। এরপর ১৯৯১, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে শেখ হাসিনা টানা আটবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এসব নির্বাচনে শেখ হাসিনার বিপক্ষে যারা প্রার্থী হয়েছিলেন তারা সবাই তাদের জামানাত হারিয়েছেন।
এই সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগের দুর্গ হলেও ৫ আগস্টে বদলে গেছে এখানকার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। পতিত সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পর, কয়েকদিন কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়া উপজেলার আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা এলাকায় থেকে তাদের দলীয় প্রধানকে দেশে ফিরিয়ে আনতে আন্দোলন শুরু করে। এর কিছুদিন পরে যৌথবাহিনী অভিযান শুরু করলে মামলা-হামলার ভয়ে এ সব নেতা-কর্মীরা আত্মগোপনে চলে যায়। বর্তমানে এ দুটি উপজেলার অধিকাংশ নেতা-কর্মীরা জেলে এবং আত্মগোপনে রয়েছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ও জামায়াত ইসলাম তাদের নির্বাচনী মাঠ গোছাতে তাদের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে।
ইতোমধ্যে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ের সম্মেলন শেষ করে উপজেলা ও পৌর সম্মেলন করেছেন। এসব সম্মেলনের মাধ্যমে যে কমিটি গঠন করা হয়েছে সে কমিটিগুলোর নেতারা তাদের নির্বাচনী মাঠ তৈরির জন্য পাড়া-মহল্লা, হাট-বাজার চষে বেড়াচ্ছেন। অন্যদিকে বসে নাই বাংলাদেশ জামায়াত ইসলামের নেতারা।
তারা তাদের শক্তি সমর্থন জানান দিতে বিভিন্ন সময়ে শোডাউনসহ সভা সমাবেশ করে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে এই নির্বাচনী আসনে জামায়াত ইসলামের পক্ষ থেকে প্রফেসর রেজাউল করিমের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তার এই ঘোষণার পরে জাতীয় থেকে শুরু করে সামাজিক সব অনুষ্ঠানে তার সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
এদিকে বসে নেই বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী স্বেচ্ছাসেবক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি এস এম জিলানী। তিনি কেন্দ্র এবং নিজ নির্বাচনী এলাকায় সমান তালে সময় দিচ্ছেন। কয়েকদিন পরপর দলের এক একটি সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নিয়ে আলাদা আলাদাভাবে মতবিনিময় সভা করছেন। বিভিন্ন এলাকার সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে নিজেকে জানান দিচ্ছেন। এই আসন থেকে তিনি এর আগে ২০০৮ এবং ২০১৮ সালে শেখ হাসিনার বিপক্ষে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তবে এই দুটি নির্বাচনে তিনি জামানাত নিয়ে ঘরে ফিরতে পারেননি। তবে এবারের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। এস এম জিলানীর প্রতিটি সভাসমাবেশে ব্যাপক জনসমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
শুধু বিএনপি ও জামায়াতই নয়। এ আসনে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণঅধিকার পরিষদ, ইসলামী শাসনন্ত্র আন্দোলন, খেলাফত মজলিশ, খেলাফত আন্দোলনসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল স্বল্পপরিসরে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) তেমন কোনো কার্যক্রম নজরে আসেনি এ আসনের ভোটারদের। কোটালীপাড়া-টুঙ্গিপাড়ায় আহ্বায়ক কমিটি গঠনের কাজ চলছে বলে জানাগেছে।
গণঅধিকার পরিষদের কোটালীপাড়া উপজেলার আহ্বায়ক আবুল বাশার দাড়িয়া বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-৩ আসন থেকে গণঅধিকারে কোনো প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে আমারা নির্বাচনকে সামনে রেখে গণসংযোগ শুরু করেছি।
জনগণের কাছে আমাদের দলের নীতি আদর্শ নিয়ে লিফলেট বিতরণ করছি। খুব শীঘ্রই আমরা ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের কমিটি গঠন করব। দল থেকে যাকে মনোনয়ন দেবে আমরা তার পক্ষে কাজ করব।
মন্তব্য