ঝিনাইদহে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের ধাক্কায় এক গরু ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। নিহত ফজলু শেখ (৫৫) মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার গোয়ালপাড়া গ্রামের মৃত কিয়াম উদ্দিনের পুত্র।
আজ রোববার (৩০ মার্চ) ভোর ৬টায় ঝিনাইদহ সদর উপজেলার কালা বাজার সংলগ্ন ঝিনাইদহ-মাগুরা সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
আরাপপুর হাইওয়ে পুলিশের এসআই একেএম হাসানুজ্জামান জানান, নিহত ফজলু শেখ আজ ভোরে বায়না অনুযায়ী গরুর গোশত কেটে দেয়ার জন্য গরুসহ স্যালোমেশিন চালিত নসিমন যোগে ঝিনাইদহ শহরে যাচ্ছিলেন। পথে মাগুরা-ঝিনাইদহ সড়কের কালা বাজারের কাছাকাছি পৌঁছলে একটি সিমেন্টবাহী ট্রাক নসিমনকে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই ফজলু শেখ চাপা পড়ে নিহত হন।
আরাপপুর হাইওয়ে থানার ওসি মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস বাসসকে বলেন, মরদেহ উদ্ধার করে সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ভোরের দিকে ঘটনাটি ঘটার কারণে ঘাতক ট্রাকটি শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। তবে ট্রাকটি শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে লক্ষ্মীপুরের ১১টি গ্রামে রোববার ঈদুল ফিতর পালিত হচ্ছে।
জেলার রামগঞ্জ উপজেলার নোয়াগাঁও, জয়পুরা, বিঘা, হোটাটিয়া, শরশোই, কাঞ্চনপুর ও রায়পুর উপজেলার কলাকোপা ও সদর উপজেলার বশিকপুরসহ ১১টি গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লী ঈদ উদযাপন করছে।
সকাল ৮টায় রামগঞ্জ উপজেলার খানকায়ে মাদানিয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায় ও নোয়াগাঁও বাজারের দক্ষিণ-পূর্ব নোয়াগাঁও ঈদগাহ ময়দানসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় ঈদের অনেকগুলো জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
এতে খানকায়ে মাদানিয়া কাসেমিয়া মাদ্রাসায় ইমামতি করেন মাওলানা রুহুল আমিন । এসব গ্রামের প্রায় সহস্রাধিক মুসল্লী পৃথক পৃথকভাবে স্ব স্ব ঈদ গাঁ মাঠে ঈদের নামাজ আদায় করেন।
মাওলানা ইসহাক (রাঃ) অনুসারী হিসেবে এসব এলাকার মানুষ পবিত্র ভূমি মক্কা ও মদিনার সাথে সঙ্গতি রেখে ঈদসহ সব ধর্মীয় উৎসব পালন করে আসছে। এসব গ্রামের মুসল্লীরা গত ৪১ বছর যাবত সৌদি আরবের সাথে মিল রেখে ঈদ উ দযাপন করে আসছেন।
সীমান্তবর্তী উপজেলা সোনাইমুড়ী। উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার ৪ লাখ মানুষের বসবাস এখানে। বিরাট এই জনসংখ্যার চিকিৎসার দায়িত্বে রয়েছে সোনাইমুড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তবে জনবল সংকট, প্রয়োজনীয় মেডিকেল মেশিনারিজ ও বিকল্প বিদ্যুতের ব্যবস্থা না থাকায় সেখান থেকে স্বাস্থ্য সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ। মাত্র ৪ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আর ৪ জন মেডিকেল অফিসার দিয়ে চলছে হাসপাতালটি। প্রতিদিন কয়েক শ রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হয় এই ডাক্তারদের। ভবন-সর্বস্ব সরকারি হাসপাতালে পর্যাপ্ত সেবা পাচ্ছে না রোগীরা।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তথ্য বলছে, হাসপাতালে ১১ জন কনসালটেন্টের বিপরীতে রয়েছেন মাত্র চারজন বিশেষজ্ঞ। ১৭টি মেডিকেল অফিসার পদের বিপরীতে দায়িত্ব পালন করছেন চারজন। ২১ নার্সের দায়িত্ব রয়েছে আটজনের কাঁধে। মিডওয়াইফ চারজনের জায়গায় কাজ করছেন মাত্র একজন। নৈশপ্রহরী তিনটি পদের বিপরীতে রয়েছেন একজন, আর ক্লিনার আটজনের স্থলে রয়েছেন চারজন। এভাবেই জনবল সংকটে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গাইনি বিশেষজ্ঞ সোহানা শিকদার গত ছয় মাস পূর্বে অন্যত্র বলদি হওয়ার পর পদটি শূন্য রয়েছে। এই পদে বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রসূতি সেবা ব্যাহত হচ্ছে।
হাসপাতালে সীমানা প্রাচীর নেই। তিনজন নৈশপ্রহরীর স্থলে রয়েছেন একজন। বিভিন্ন সময় চুরি হয় যাচ্ছে রোগীদের মূল্যবান জিনিসপত্র। মূল ভবন ও আবাসিক কোয়ার্টারের দরজা, জানালা, গ্রিল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে দুর্বৃত্তরা। এ ছাড়া সন্ধ্যার পরে মাদকসেবীদের আনাগোনায় অনিরাপদ হয়ে ওঠে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান বিষয়টি একাধিকবার উপজেলা আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপন করলেও তার সুরাহা মেলেনি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রোগীদের উপচে পড়া ভিড় রয়েছে বহির্বিভাগে। রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তাররা। এছাড়া ডিউটি ডাক্তার ও নার্স সংকট থাকায় যথাযথ সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন ভর্তি রোগীরা। ক্লিনার সংকট থাকায় হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতেও বেগ পেতে হচ্ছে কর্মীদের।
মেডিকেল ইকুইপমেন্ট সংকটে গত ৮ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এক্স-রে সেবা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বার বার মেরামত করে চালানো হলেও পুরাতন মডেলের এক্স-রে মেশিনটি মেরামত অযোগ্য হয়ে পড়ে রয়েছে। বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থা না থাকায় আল্ট্রাসনোগ্রাফি ও ডায়াগনস্টিক ল্যাবের কার্যক্রম বিভিন্ন সময় বন্ধ থাকছে। ফলে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা। বিদ্যুৎ বিভ্রটের কারণে বিভিন্ন রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাজ সুষ্ঠুভাবে করতে পারছেন না ল্যাব টেকনিশিয়ানরা। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই হাসপাতালে নেই জেনারেটর ব্যবস্থা। রাতের বেলায় বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স জুড়ে।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারী না থাকায় জরুরি ও বহির্বিভাগে সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালটি নোয়াখালী-ঢাকা মহাসড়ক সংলগ্ন হওয়ায় বিভিন্ন সময় দুর্ঘটনাজনিত রোগীর চাপ থাকে। সে সময় প্রাথমিক চিকিৎসা দিতেও বেগ পেতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে কয়েকবার চিঠি দিয়েও কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে না।’
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান জানান, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, মেডিকেল অফিসার ও কর্মচারী নেই। গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় সিজার বিভাগ বন্ধ হয়ে গেছে। একজন মিডওয়াইফ দিয়ে ডেলিভারি সম্ভব হচ্ছে না। ফলে রোগীদের বাইরের হাসপাতালে পাঠাতে হচ্ছে। নিরাপত্তার অভাবে আবাসিক কোয়ার্টারে বসবাসকারীরা বাসার বরাদ্দ বাতিল করেছেন। প্রায় সময় রোগীদের মোবাইলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি হয়ে যাচ্ছে। জেনারেটর না থাকায় লোডশেডিং হলে বাধ্য হয়ে চিকিৎসা সেবা বন্ধ রাখতে হয়।
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে বিএনপির কিছু নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালীরা দলের নাম ব্যবহার করে গরিবের ভিজিএফের ১০ কেজির চালে ভাগ বসাচ্ছেন। এতে বঞ্চিত হচ্ছেন অসংখ্য অসহায়, দুস্থ ও হতদরিদ্ররা। কতিপয় নেতা-কর্মী ও তাদের স্বজনরা চাল উত্তোলন করে প্রকাশ্যে অসাধু ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছে।
উপজেলার বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা যায়, সরকারিভাবে ভিজিএফের আওতায় উপজেলায় ৬টি ইউনিয়নে ১০ হাজার ২৯৫ জন অহসহায় ও হতদরিদ্রদের মধ্যে বিতরণের জন্য ঈদ উপহার হিসেবে প্রায় ৩২ টন চাল বরাদ্দ এসেছে। তারমধ্যে অলোয়া, গাবসারা ও গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদে চাল বিতবরণ করা হয়েছে।
সরেজমিনে উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ চত্বর ঘুরে অসংখ্য দুস্থ ও হতদরিদ্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা পরিষদের বারান্দায় ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে ঈদ উপহারের ১০ কেজির একটি স্লিপের জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করছেন, কিন্তু পরিষদ থেকে তাদের কোনো স্লিপ দেওয়া হচ্ছে না।
শুধু গোবিন্দাসীতে এমন অনিয়ম নয়- উপজেলার ফলদা, অর্জুনা ও নিকরাইলেও একই চিত্র। চেয়ারম্যানদের চাপ সৃষ্টি করে বিএনপির নাম ভাঙিয়ে শত শত ভিজিএফের স্লিপ হাতিয়ে নিচ্ছেন কতিপয় নেতা-কর্মী।
বঞ্চিতরা অভিযোগ করে বলেন, মেম্বারদের কাছে গেলে তারা জানান, মাত্র কয়েকটি ভিজিএফের স্লিপ পেয়েছিলেন। কাকে রেখে কাকে দেবেন, বুঝে উঠতে পারছেন না। তারা আরও বলেন, ‘আমরা হতদরিদ্র ও গরিবরা চাল পাচ্ছি না। বিএনপির নাম করে তাদের দলীয় নেতা-কর্মী ও প্রভাবশালীরা সরকারের ঈদ উপহারের চালে ভাগ বসিয়েছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গোবিন্দাসী ইউনিয়ন পরিষদের একাধিক ইউপি সদস্য জানান, ঈদ উপহারের ভিজিএফের মাত্র ৩০-৩৫টি করে স্লিপ দিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। বাকিগুলো তিনি কি করেছেন, তিনিই জানেন।
গোবিন্দাসী ইউপি দায়িত্বপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহির উদ্দিন বলেন, ‘মেম্বারদের দেওয়া হয়েছে ৩০টি করে, আমি দুস্থদের দেওয়ার জন্য ১৫০টি নিয়েছি, প্রতিটি ওয়ার্ড বিএনপি নিয়েছে ৫০টি করে। এর বাইরে অন্যান্য বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বাকিগুলো বণ্টন করে নিয়েছেন।’
ফলদা ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান আবু সাঈদ ওরফে স্বপন বলেন, তিনি নিজে বিতরণের জন্য নিয়েছেন ২০০, উপজেলা পরিষদ থেকে বিতরণের জন্য দেওয়া হয়েছে ২০০, দলীয় নেতা-কর্মী নিয়েছে ৬০০ এবং বাকিগুলো মেম্বাদের দেওয়া হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পপি খাতুন বলেন, ‘চেয়ারম্যান মেম্বারদের কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যেন প্রকৃত দুস্থ ও হতদরিদ্ররা সরকারের ঈদ উপহার পায় এবং এর কোনো ব্যত্যয় না ঘটে।’
রাজধানী ঢাকায় ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মহাকাশ অভিযাত্রার গল্প শোনালেন যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা)-এর প্রধান নভোচারী জোশেফ এম আকাবা। কথা ও গল্পে শিক্ষার্থীদের সামনে মহাশূন্যের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন এই যশস্বী মহাকাশচারী।
রোববার ‘ফ্রম আর্থ টু অরবিট: অ্যান অ্যাস্ট্রোনাটস টেল’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে অসীম শূন্যতায় কাটানো সময়ের গল্প ও চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরেন নাসার এই নভোচারী।
জোশেফ এম আকাবা একজন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী, যুক্তরাষ্ট্র নৌবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা এবং একজন শিক্ষক। তিনি অনেক বার মহাকাশ মিশনে অংশ নিয়েছেন। তিনি এখন পর্যন্ত মোট ৩০৬ দিন মহাকাশে কাটিয়েছেন। এছাড়াও তিনি দুবার মহাকাশে হাঁটার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন।
‘ফ্রম আর্থ টু অরবিট: অ্যান অ্যাস্ট্রোনাটস টেল’ অনুষ্ঠানটি ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নাসার একজন দক্ষ মহাকাশচারীর বাস্তব অভিজ্ঞতা জানার সুযোগ করে দিয়েছে। এই অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা নাসার বিভিন্ন মিশন সম্পর্কে ধারণা লাভের সুযোগ পেয়েছেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাপকালে জোশেফ এম আকাবা তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, মহাকাশে থাকাকালীন বিভিন্ন বিষয়, মহাকাশ অনুসন্ধানের বৈজ্ঞানিক বিস্ময়সহ এসটিইএম (সায়েন্স, টেকনোলজি, ইঞ্জিনিয়ারিং, ম্যাথমেটিক্স) শিক্ষার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির স্কুল অফ ডাটা অ্যান্ড সায়েন্সেস-এর ডিন প্রফেসর মাহবুবুল আলম মজুমদার। আরও বক্তব্য দেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোমেসি সেকশনের পাবলিক এনগেজমেন্ট-এর ডিরেক্টর স্কট ই. হার্টম্যান।
নাসার প্রধান মহাকাশচারী তার বক্তব্যে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, ‘অনেকেই আমাকে বলেছেন যে আমি তাদের অনুপ্রেরণা। কিন্তু আপনাদের মাঝে আসতে পেরে আমি নিজেই অনুপ্রাণিত বোধ করছি। আপনাদের জ্ঞান অর্জনের তৃষ্ণা আমাকে অভিভূত করেছে।’
নভোচারী আকাবা তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদেরকে লেখাপড়ায় সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে বলেন। তিনি বলেন, ‘একমাত্র লেখাপড়ার মাধ্যমেই নিজের স্বপ্নকে বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব।’
মহাকাশ গবেষণায় আগ্রহীদের তিনি নাসার ওয়েবসাইট ভিজিটের আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘যারা মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তাদের উচিত নাসার ওয়েবসাইটটা ফলো করা। কারণ সেখানে অসংখ্য সুযোগ এবং পরামর্শ রয়েছে।’
জোশেফ আকাবা শিক্ষার্থীদের ভুলকে ভয় না পাওয়ার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘ভুলকে ভয় পেলে চলবে না। ভুল মানুষকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়।’
তিনি শিক্ষার্থীদেরকে নিজ জীবন ও চ্যালেঞ্জের গল্প বলেন এবং কীভাবে সেই অভিজ্ঞতাগুলো তাকে মহাকাশচারী হওয়ার স্বপ্ন পূরণে সাহায্য করেছে সেসব তুলে ধরেন।
সুন্দর এই পৃথিবীকে আরও বাসযোগ্য করে গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে নাসার প্রধান নভোচারী বলেন, ‘আমাদের এই পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। মহাশূন্যে একটিমাত্র ভুল পদক্ষেপ মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। আমাদের পৃথিবীতে তেমনটা হয় না। আমার মনে হয় না এখন পর্যন্ত আর কোনো গ্রহ মানুষের বসবাস উপযোগী। তাই এই পৃথিবীটাকে বাঁচিয়ে রাখার ক্ষেত্রে আমাদের আরও বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত।’
নাসার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আকাবা বলেন, ‘নাসার লক্ষ্য হলো অজানা সীমানার বাইরে অনুসন্ধান চালানো। একসঙ্গে কাজ করলে আমরা অনেকদূর যেতে পারব। এজন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
মহাকাশ নিয়ে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের কৌতূহল আর উচ্ছ্বাস দেখে আকাবা বলেন, ‘আমার বিশ্বাস, অচিরেই এই শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকে কেউ নাসার আর্টেমিস স্কোয়াডে অংশ নেবেন।’
পুরো অনুষ্ঠানে আকাবা শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে তাদের গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ প্রদান করেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন অফিস অফ কমিউনিকেশন্স-এর ডিরেক্টর খায়রুল বাশার।
অনুষ্ঠানে সমাপনী বক্তব্য দেন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির ভাইস-চ্যান্সেলর প্রফেসর সৈয়দ ফারহাত আনোয়ার। তিনি তার বক্তব্যে শিক্ষার্থীদের মহাকাশ গবেষণায় উদ্বুদ্ধ করে বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি মহাকাশচারীদের তালিকায় একদিন ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের নাম থাকবে।’
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের পাবলিক ডিপ্লোমেসি সেকশনের পাবলিক এনগেজমেন্ট-এর ডিরেক্টর স্কট ই. হার্টম্যান, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির বিএসআরএম স্কুল অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ডিন প্রফেসর আরশাদ এম চৌধুরী, ডিপার্টমেন্ট অফ কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং-এর চেয়ারপারসন প্রফেসর সাদিয়া হামিদ কাজীসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।
আরও পড়ুন:প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসছেন নাসার প্রধান মহাকাশচারী জোসেফ এম আকাবা। চলতি সপ্তাহেই তিনি ঢাকায় আসছেন।
মহাকাশে ৩০৬ দিনেরও বেশি সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে নাসার এই মহাকাশচারীর। অংশ নিয়েছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে একাধিক মিশনেও।
ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে শনিবার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নাসার নভোচারী জোসেফ এম আকাবা’র বাংলাদেশ সফরটি ঐতিহাসিক। এই প্রথম তিনি ঢাকায় অবতরণ করবেন। সফরকালে তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ইন্টারেক্টিভ সেশনে মিলিত হবেন। সেশনে তিনি তরুণদের মহাকাশ বিজ্ঞান, রোবোটিক্স এবং স্টেম শিক্ষায় ক্যারিয়ার গড়তে অনুপ্রাণিত করবেন।
এতে আরও বলা হয়, আকাবা প্রযুক্তির অগ্রগতিতে মহাকাশ অনুসন্ধানের ভূমিকা এবং জলবায়ু সংকটের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আলোচনায় অংশ নেবেন।
একাডেমিক কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি আকাবা একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে অংশ নেবেন। বৈশ্বিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নাসার অবদান এবং আর্টেমিস অ্যাকর্ডের মাধ্যমে মহাকাশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশ কীভাবে উপকৃত হতে পারে, সে বিষয়ে মতামত তুলে ধরবেন তিনি।
আর্টেমিস অ্যাকর্ড নাসা এবং বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান মহাকাশ ও প্রযুক্তি খাতের মধ্যে আরও সহযোগিতা জোরদার করার জন্য মহাকাশে একটি নিরাপদ, শান্তিপূর্ণ এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের নীতিগুলোও তুলে ধরে।
আকাবা একজন আমেরিকান শিক্ষাবিদ, হাইড্রোজিওলজিস্ট এবং রিটার্ন পিস কর্পস স্বেচ্ছাসেবক। তিনি পুয়ের্তোরিকান বংশোদ্ভূত প্রথম ব্যক্তি হিসেবে ২০০৪ সালের মে মাসে নাসার নভোচারী প্রার্থী মনোনীত হন। ২০২৩ সালে আকাবাকে অ্যাস্ট্রোনট অফিসের প্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়।
একজন নভোচারী হিসেবে আকাবা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে স্পেসওয়াক এবং যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক গবেষণাসহ তিনটি মিশনে ৩০৬ দিনেরও বেশি সময় ধরে মহাকাশে অবস্থান করেন।
মানব বসতির পৃথিবী, সূর্য ও বৃহস্পতি গ্রহ একই সরলরেখায় অবস্থান করবে আগামীকাল শনিবার। এদিন সারারাত বৃহস্পতি আকাশে দৃশ্যমান থাকবে। এই অবস্থানকে বলা হয় ‘জুপিটার্স অপজিশন’। এমন বিরল মহাজাগতিক ঘটনা সৌরজগতের রহস্য ও সৌন্দর্যের প্রতি মানুষের কৌতূহলকে বাড়িয়ে দেয়।
ফোর্বস ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য তুলে ধরে বলা হয়েছে, শনিবার বৃহস্পতিকে দেখার জন্য এই সময়ের আগে-পরে এক মাস ধরে এই বিস্ময়কর ঘটনা পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকবে। এমনকি একটি ছোট টেলিস্কোপ বা সাধারণ দূরবীন দিয়েও এই গ্রহের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
বিজ্ঞানীরা বলেছেন, শুক্রবার পৃথিবী থেকে প্রায় ৬১১ মিলিয়ন কিলোমিটার বা ৩৮০ মিলিয়ন মাইল দূরে থাকবে বৃহস্পতি। এই দূরত্বে বৃহস্পতিকে বেশ উজ্জ্বল দেখাবে।
মন্তব্য